কোরবানির মাংস কাটার কাঠের ‘খাইট্টা’র কদর আগের মতোই

কুষ্টিয়ার একটি স' মিলে 'খাইট্টা' তৈরি হচ্ছে। ছবি: স্টার

আগামী বুধবার পালিত হতে যাচ্ছে মুসলমান সম্প্রদায়ের অন্যতম বড় উৎসব ঈদুল আজহা। ঈদুল আজহা মানেই পশু কোরবানি। আর, এই কোরবানির পশু জবাইয়ের পর মাংস প্রক্রিয়াকরণের কয়েকটি খুবই প্রয়োজনীয় উপকরণগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে মাংস কেটে টুকরো করার কাজে ব্যবহৃত কাঠের পাটাতন ‘খাইট্টা’।

সারা বছর কসাইখানায় এর ব্যবহার বেশ সাধারণ হলেও, এর বিপুল চাহিদা এসে ধরা দেয় ঈদুল আজহার সময়। এ সময় সারাদেশের আনাচে-কানাচে এই ‘খাইট্টা’র কদর লক্ষ্য করার মতো বেড়ে যায়।কোরবানির মৌসুমে গ্রাম থেকে শহরের বাড়ি পর্যন্ত এর বিস্তৃতি ঘটে। ঈদের দিন জবাই করা বিপুল পশু প্রক্রিয়া করতে প্রচুর পরিমাণ কাঠের গুড়ি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। একটি গরু প্রক্রিয়া করতে প্রায় দুই থেকে তিনটি গুঁড়ির প্রয়োজন হয়ে থাকে। একটি ছাগলের জন্য অবশ্য একটি ‘খাইট্টা’ যথেষ্ট।

সাধারণত এলাকার স’ মিলগুলোতে গাছের গুঁড়ি করাতে ফেলে ছোট ছোট গোলাকৃতির টুকরো তৈরি করে এটি বানানো হয়। এলাকাভেদে এর বিভিন্ন নাম আছে। কোথাও এটাকে বলে খাইট্টা, কোথাও আবার বলে খটিয়া, কাইটে, গুঁড়ি, শপার, হাইজ্যা ইত্যাদি।

সরেজমিনে কুষ্টিয়া শহরের আশেপাশের কয়েকটি স’ মিলে গিয়ে দেখা যায় এই গুঁড়ি তৈরি হচ্ছে।

স’ মিলের মালিকরা জানান, মাংস কাটার কাজে কাঠের এই গুঁড়ির কোন বিকল্প নেই। এটি তৈরিতে বিশেষ সর্তক থাকতে হয়। কাঠের ব্যবহারও নির্দিষ্ট হতে হয়।

কুষ্টিয়া শহরের চাঁদাগাড়ি এলাকার ভাই ভাই স’ মিলের মালিক আজিবর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, তেঁতুল গাছের কাঠ দিয়েই খাইট্টা বানাতে হয়। কারণ হিসেবে তিনি জানান, তেঁতুল কাঠে সহজে চাপাতির কোপ বসবে না। তাই, কাঠের গুঁড়াও উঠবে না। এতে মাংস নষ্ট হওয়ার কোনো সম্ভাবনা থাকে না।

আজিবর জানান, তার স’ মিলে সারাবছরই এই গুঁড়ি তৈরি করা হয়। পেশাদার কসাইরা তার কাছ থেকে গুঁড়ি নিয়ে থাকেন। ঈদুল আজহা উপলক্ষে তার স’ মিলে তিনি প্রায় পাঁচশ’র বেশি ‘খাইট্টা’ তৈরি করেন। প্রায় পুরো শহরের চাহিদা তিনিই মেটান।

তিনি জানান, প্রতিটি সাধারণ মানের গুঁড়ি বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকায়। এরসঙ্গে আরও আছে ১০০ থেকে ১৫০ টাকার প্রসেসিং চার্জ। তবে, গুঁড়ির ওজনের ওপর এই দাম নির্ভর করে। বড় আকারের গুঁড়ির দাম প্রায় ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।

শহরের মঙ্গলবাড়িয়া এলাকার রিক্তা স’ মিলের মালিক উজের আলী জানান, শহরের বড় বাজার, মিউনিসিপালিটির বাজারে তার স’ মিলের গুঁড়ি পাওয়া যাচ্ছে। তিনি প্রায় ৩০০টি গুঁড়ি তৈরি করেছেন। এর মধ্যে প্রায় ২০০টি বিক্রি করে ফেলেছেন।

কুষ্টিয়া শহরের কালিশংকরপুর এলাকার শাহরিয়ার সিদ্দিকী পেশায় আইনজীবী। তিনি কাঠের গুঁড়ি কিনতে এসেছেন ভাই ভাই স’ মিলে। তিনি জানান, এবার গুঁড়ির দাম দ্বিগুণ হয়েছে। গতবার যে গুঁড়ি ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায় কেনা হয়েছিল, এবার সেটা ৬৫০ টাকা হয়েছে।

তিনি জানান, তিনি একটি গরু কোরবানি দিচ্ছেন, এজন্য তিনি দুটি কাঠের গুঁড়ি কিনেছেন।

কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার বাঁধবাজার এলাকার রমিজ মোল্লা চার জনের একটি দল করেছেন অন্যের কোরবানির জবাই করা পশু কেটে মাংস প্রক্রিয়া করতে। তিনিও এসেছেন কাঠের গুঁড়ি কিনতে ভাই ভাই স’ মিলে।

রমিজ জানান, এ কাজে তারা তাদের নিজস্ব কাঠের গুঁড়ি ব্যবহার করেন। গরুর মালিকরা অনেক সময় গুঁড়ি সরবরাহ করে থাকেন। কিন্তু, তাতে ভাল কাজ হয় না। তিনি ১৫০০ টাকা দিয়ে একটি গুঁড়ি কিনলেন।

তিনি জানান, একটি গরু কেটে মাংস প্রক্রিয়া করে তিনি ৪৫০০ টাকা থেকে ৫৫০০ টাকা পর্যন্ত নেন। ইতোমধ্যে দুটি গরুর কাজ পেয়েছেন তিনি।
 

Comments

The Daily Star  | English
Yunus-Rubio

Yunus, Rubio discuss boosting security, stability in Indo-Pacific

Rubio held a 15-minute long telephone conversation with Yunus around 7:30pm

1h ago