গরুগুলোকে কীভাবে বাঁচাবেন সনৎ?

নিজের পালিত গরুর সঙ্গে মৎসজীবী সনৎ দাস। ছবি: স্টার

বন্যায় পানির সঙ্গে যুদ্ধ করে পরিবার নিয়ে কোনোভাবে প্রাণে বেঁচেছেন মৎসজীবী সনৎ দাস। বন্যা তাকে নিয়ে যাচ্ছে এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে। এখন পরিবারের সদস্যদের জন্য ২ বেলা খাবার জোটানোর দুশ্চিন্তার পাশাপাশি তিনি বড় সংকটে পড়েছেন নিজের বড় সম্বল ৪টি গরু নিয়েও।

হাকালুকি হাওরের পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় গত শনিবার মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার সুজানগর, তালিমপুর, বর্নি ও দাসেরবাজার ইউনিয়নে বন্যা দেখা দেয়। ওই সময় থেকে এসব গ্রামের বেশ কিছু পরিবার নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে শুরু করে। আর কিছু পরিবার রয়ে যায় তাদের বাড়িতে। মঙ্গলবার রাতের বৃষ্টিতে পানি আরও বাড়তে শুরু করলে যারা বাড়িতে রয়ে গিয়েছিল, তারা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে।

দেশের সবচেয়ে বড় হাওর, মিঠাপানির জলাভূমি এই হাকালুকি হাওর। এর বিস্তৃতি মৌলভীবাজারের বড়লেখা, জুড়ী ও কুলাউড়া এবং সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ, গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজারজুড়ে।

মৎসজীবী সনৎ দাসের বসবাস হাকালুকি হাওরঘেঁষা বড়লেখা উপজেলার তালিমপুর ইউনিয়নের বড়ময়দান গ্রামে। গত শনিবার বাড়িতে পানি উঠলে পরিবারের ৫ সদস্য ও ৪টি গরু নিয়ে তিনি গ্রামের উঁচু সড়কটিতে এসে ওঠেন।

গতকাল বৃহস্পতিবার এই প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে তিনি জানান, সারাদিনেও তিনিসহ পরিবারের সদস্যদের কারু পেটে এক টুকরো দানা পড়েনি। তার চেয়ে বড় দুশ্চিন্তা হয়ে দাঁড়িয়েছে পোষা গরুগুলোর জন্য দানাপানি জোটানো। কারণ, বন্যার পানিতে বাড়ির অন্য সবকিছুর সঙ্গে গরুর জন্য রাখা খাবারও ভেসে গেছে।

অবলা প্রাণীগুলোর জন্য মমতা ঝরে পড়ে সনৎ এর কণ্ঠে। বলেন, আইজ (বৃহস্পতিবার) সকালে হাওরে ঘাস কাটতে গেছি। গিয়াতো (গিয়ে) ঘাস আর কাটতাম পারি না। চউখে (চোখে) ঘাস দেখি না। খালি পানি দেখি।'

সনৎ এর মতো পালিত গরু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন সারদা বিশ্বাসও। ছবি: স্টার

সনৎ জানান, কয়েক মাস আগে সোয়া লাখ টাকায় একটি ষাঁড় কেনেন তিনি। আগে থেকে আরও ৩টি গরু ছিল। কোরবানির ঈদ সামনে রেখে এগুলো পেলেপুষে বড় করছিলেন ভালো দাম পাওয়ার আশায়। গরুর জন্য খৈল, ভুষি, চিটা, ধানের গুঁড়া ও লবণ কিনে রাখা ছিল বাড়িতে। বন্যা এর সবকিছু ভাসিয়ে নিয়ে গেছে।

সনৎ বলেন, 'গরুর খাবার সব পানির তলে, কিচ্ছু আনতে পারছি না। চাইরটা (চারটা) লবণ, (ধানের) গুঁড়া আছিল (ছিল)। এগুলান খাওয়াইছি। অসহায় অবস্থায় পড়ি গেছি। কোনোরকমে (গরুগুলোকে) বাঁচানোর চেষ্টা করছি। টাকা-পয়সাও নাই যে হুট করি (খাবার) লইয়া আইমু।'

এখানকার স্থানীয় বাসিন্দারাও বলছেন, বন্যায় গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি নিয়ে বিপাকে পড়েছেন প্রায় সবাই। অনেকে উঁচু এলাকায় থাকা আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে এগুলো পাঠিয়ে দিয়েছেন। যাদের সেই সুযোগ হয়নি, তারা বাড়িতে রেখে কোনোভাবে এগুলোকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন।

তাদের ভাষ্য, এই মুহূর্তে গরুর জন্য খড় জোগাড় করাটা প্রায় অসম্ভব একটি কাজ। কারণ, সব খড়ের গাদাই ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে।  

কিন্তু গরু বাঁচাতে না পারলে সনৎ ও তার পরিবারের জন্য টিকে থাকাটাও কঠিন হয়ে পড়বে বলে জানান তিনি, যে উদ্বেগ তার ঘুম কেড়ে নিয়েছে।

সনৎ এর মতো একই সড়কে আশ্রয় নেওয়া সারদা বিশ্বাসের অবস্থাও একই রকম। তিনি বলেন, 'খাইবারো (খাওয়ার) নাই দাইবারো নাই, ঘর দরজা সবতা (সবকিছু) পানির মুরো (নিচে) চলি গেছে। কোন উপায় না পাইয়া পুলোর (ব্রিজের) ওপর আইসি (এসেছি) গরু লইয়া।'

Comments

The Daily Star  | English
problems faced by Bangladeshi passport holders

The sorry state of our green passports

Bangladeshi passports are ranked among the weakest in the world.

6h ago