চট্টগ্রামের খাল-নর্দমা: উন্মুক্ত, অরক্ষিত ও ঝুঁকিপূর্ণ

বন্দর নগরী চট্টগ্রামের খাল ও নর্দমাগুলো পরিণত হয়েছে মৃত্যুফাঁদে।
ময়লার ভাগাড় বলে মনে হলেও এটা চট্টগ্রামের একটি নালা। ছবি: স্টার

বন্দর নগরী চট্টগ্রামের খাল ও নর্দমাগুলো পরিণত হয়েছে মৃত্যুফাঁদে।

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অবহেলায় শহরের বেশিরভাগ খাল ও ড্রেনের চারপাশে প্রতিরক্ষামূলক কোনো দেওয়াল বা স্ল্যাব নেই। যে কারণে ভয়াবহ দুর্ঘটনার ঝুঁকি অনেক বেড়ে গেছে।

এ ছাড়াও, বেশিরভাগ খাল ও নর্দমা নিয়মিত পরিষ্কার না করায় সেগুলো প্লাস্টিক বর্জ্য দিয়ে ভর্তি হয়ে গেছে। এ কারণে কেউ যদি সেখানে পড়ে যায়, তাহলে তার পক্ষে সাঁতার কেটে ফেরা বা উদ্ধারকারীদের জন্য তাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসা বেশ কঠিন হয়ে যায়।

সব মিলিয়ে মারাত্মক দুর্ঘটনার সংখ্যা আশংকাজনক হারে বেড়ে গেছে।

গত সোমবার ১২ বছর বয়সী কামাল ষোলশহর রেলওয়ে স্টেশন এলাকার একটা রাস্তার পাশের নর্দমায় পড়ে যায়। সে সেখান থেকে আর উঠে আসতে পারেনি। ৬৮ ঘণ্টার উদ্ধার অভিযান শেষে মির্জারপুল এলাকার একটি খালে তার মরদেহ খুঁজে পাওয়া যায়।

এর আগে, গত আগস্টে সবজি ব্যবসায়ী সালেহ আহমেদ (৫৫) মুরাদপুর মোড়ে একই নর্দমায় পড়ে গিয়েছিলেন। তিনি এখনো নিখোঁজ।

গত ২৭ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী শেহরিন মাহবুব সাদিয়া শহরের আগ্রাবাদ এলাকার অপর একটি নর্দমায় পড়ে যান। সাড়ে ৪ ঘণ্টা পর দমকল বাহিনীর ডুবুরীরা তার মরদেহ উদ্ধার করেন।

প্রতিটি ঘটনার ক্ষেত্রেই স্থানীয়রা ও দমকল বাহিনীর কর্মকর্তারা জানান, প্লাস্টিক ও অন্যান্য বর্জ্যের মোটা স্তরের কারণে নর্দমা থেকে উদ্ধার অভিযান কঠিন হয়েছে।

প্রতিরক্ষা দেওয়াল বা স্ল্যাব না থাকায় ভয়াবহ দুর্ঘটনার ঝুঁকি অনেক বেড়ে গেছে। ছবি: স্টার

চট্টগ্রামের ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক ফরিদ আহমেদ কামাল উদ্ধার অভিযানে নেতৃত্ব দেন। তিনি জানান, বর্জ্যের মোটা স্তরের কারণে ডুবুরিরা তাৎক্ষনিকভাবে ছেলেটিকে উদ্ধার করতে বাঁধার মুখে পড়েন।

তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদেরকে প্রথমে নর্দমা পরিষ্কার করতে হয়েছে। তারপর ডুবুরিরা তাদের কাজ শুরু করতে পারেন। বুঝতেই পারছেন, কতখানি সময় নষ্ট হয়েছে।'

স্থানীয়রা জানান, তাদের অনেকেই ঘটনা সম্পর্কে জানার সঙ্গে সঙ্গে কামালকে উদ্ধারে এগিয়ে যান। কিন্তু একই কারণে তারাও নর্দমায় ঝাঁপিয়ে পড়তে পারেননি।

ষোলশহর এলাকার যে বস্তিতে কামালের পরিবার বসবাস করেন, সে বস্তির বাসিন্দা আলি আকবর বলেন, 'গ্রামের বাড়িতে কোনো বাচ্চা পানিতে পড়ে গেলে তাকে উদ্ধারে ঝাঁপিয়ে পড়ার আগে আমাদের দ্বিতীয়বার ভাবতে হয় না।'

সেপ্টেম্বরে সাদিয়ার মৃত্যুর পর চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) প্রধান প্রকৌশলী রফিকুল আলম দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, তারা সব ঝুঁকিপূর্ণ খাল ও নর্দমার চারপাশে দেওয়াল তোলার উদ্যোগ নিচ্ছেন।

কিন্তু গত শুক্রবার সরেজমিনে দেখা যায়, এখনো বেশ কিছু খাল ও নর্দমা আগের মতোই উন্মুক্ত, অরক্ষিত ও ঝুঁকিপূর্ণ।

অরক্ষিত নর্দমাগুলো পরিণত হয়েছে মৃত্যুকুপে। ছবি: স্টার

চকবাজার কাঁচাবাজারের চাক্তাই খাল ও কে.বি. আমান আলী সড়কে এই পরিস্থিতি দেখা গেছে। এ ছাড়াও জামাল খান-চট্টেশ্বরী সড়ক ও রাহাত্তার পুলের বির্জা খালও অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে।

স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, সিটি করপোরেশনের কর্মীরা খালগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করেন না। চকবাজারের ফুলতলার বাসিন্দা তৌহিদ চৌধুরী বলেন, 'গত ৬ মাসেও তাদের কাউকে দেখিনি।'

আরেক বাসিন্দা তৃষ্ণা দাস বলেন, 'খালগুলো নিয়মিত পরিষ্কার না করায় সেগুলো মশার অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে।'

চসিকের উপপ্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মোর্শেদুল আলম চৌধুরী সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তারা নিয়মিত খাল পরিষ্কার করেন। তবে পরিষ্কার করার পর এলাকাবাসীরা আবারও সেখানে নির্বিচারে ময়লা ফেলায় খুব দ্রুতই তা জমাট বেঁধে যায়।

চসিক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, তারা প্রতিরক্ষা দেয়াল নির্মাণ করতে পারছেন না, কারণ চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) শহরের জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধানের জন্য একটি মেগা প্রকল্পের আওতাও বেশ কিছু খাল ও নর্দমা নিয়ে কাজ করছে।

অনবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান

Comments

The Daily Star  | English

Public Servants: Anti-graft laws, rules relaxed over the years

For over two decades, laws and regulations meant for curbing corruption by government employees have been relaxed, creating scope for officials to indulge in irregularities with relative impunity.

8h ago