ছোট গরুর চাহিদা বেশি

বিরল পশুর হাটে ছোট গরুর ক্রেতার সংখ্যা বেশি। ছবি: কংকন কর্মকার/স্টার

'পরিবারের সদস্য মাত্র ৪ জন। সাধ্য অনুযায়ী ৪০-৫০ হাজার টাকার মধ্যে ছোট গরুই খুঁজছি। কিন্তু হাটে এসে দেখছি আমার মতো ক্রেতাই বেশি। বেশিরভাগ ক্রেতা ছোট ও মাঝারি আকারের গরুই খুঁজছেন। চাহিদা বেশি থাকায় তাই হাটেও বড় গরুর তুলনায় ছোট-মাঝারি গরুর দামই বেশি।'

দিনাজপুরের বিরলে কোরবানির পশুর হাটে গরু কিনতে এসে দ্য ডেইলি স্টারকে এ কথাগুলো বলছিলেন ওই এলাকার বাসিন্দা মোখলেসুর রহমান।

সরেজমিনে গতকাল বুধবার বিরল পশুর হাটে গিয়ে দেখা যায়, মোখলেসুর রহমানের মতো ক্রেতার সংখ্যাই ছিল বেশি।

হাটে বড় গরু বিক্রি করতে আনা উপজেলার ঝিনাইকুড়ি গ্রামের কালু মোহাম্মদ ডেইলি স্টারকে জানান, তার গরুটিতে প্রায় ৪ মণ মাংস হতে পারে। ক্রেতারা গরুটির দাম শুনে চলা যাচ্ছে।

তিনি বলেন, 'যারা ছোট ও মাঝারি আকারের গরু নিয়ে এসেছেন, ক্রেতারা তাদের কাছেই যাচ্ছেন।'

বিরল গরুর হাট। ছবি: স্টার

তিনি জানান, ২ মণ ওজনের গরুর দাম ৫৫-৬০ হাজার টাকা। এই হিসাবে তার গরুর দাম হওয়ার কথা ১ লাখ ১০ হাজার থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। 

কিন্তু ক্রেতারা তার গরুর দাম ১ লাখ টাকাও বলছেন না বলে জানান কালু মোহাম্মদ।

বিক্রেতারা জানান, বড় গরুর ক্রেতা কম থাকায় বাজারের এমন অবস্থা।

বুধবার বিরল সরকারি মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে কোরবানির পশুর হাট বসে। 

সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে বেচা-কেনা চললেও ছোট ও মাঝারি আকারের গরুগুলো তাড়াতাড়ি বিক্রি হয়ে গেলেও বড় গরু কম বিক্রি হয়েছে।

শুধু বিরল হাট নয়, গত কয়েকদিন বিরল উপজেলার খোশালডাঙ্গী হাট, পার্বতীপুরের আমবাড়ী হাট, কাহারোল হাটসহ বিভিন্ন হাটের চিত্র এমনই ছিল। 
এসব হাটেও বড় গরুর তুলনায় ছোট ও মাঝারি আকারের গরুর চাহিদাই বেশি। আর চাহিদা বেশি থাকায় ছোট-মাঝারি আকারের গরুর দামই বেশি ছিল। 

এদিকে দিনাজপুরের বিভিন্ন হাট ঘুরে দেখা গেছে, শেষ মুহূর্তে দিনাজপুরের বিভিন্ন পশুর হাটে জমে উঠেছে বেচা-কেনা। 

জেলার ১৩টি উপজেলায় ছোট বড় মিলিয়ে ১৫০টির বেশি কোরবানির পশুর হাটে বেচাকেনা চলছে। এর মধ্যে দিনাজপুরের বিভিন্ন হাটে ভারতীয় গরু দেখা যায়নি। প্রথম অবস্থায় দেশি গরুর দাম কিছুটা কম থাকলেও, ঈদ ঘনিয়ে আসায় শেষ মুহূর্তে বেড়েছে পশুর দাম।

দিনাজপুরের প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা আলতাফ হোসেন ডেইলি স্টারকে জানান, জেলায় এবার ৫৭ হাজার ১৪৬ জন খামার মালিকের ১ লাখ ৫০ হাজার ৮৬৯টি গরু ও মহিষ এবং ১ লাখ ৭ হাজার ২৩১টি ছাগল কোরবানির তালিকায় আছে। 

জেলায় এবার কোরবানির প্রাণীর চাহিদা ২ লাখ ২৯ হাজার ২৪৮টি। জেলার চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত ২৮ হাজার ৮৫২টি প্রাণী দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

এদিকে, শেষ সময়ে রংপুর জেলার বিভিন্ন পশুর হাটও জমে উঠেছে। গতকাল বুধবার রংপুরের নগরীর অন্যতম পশুর হাট লালবাগে প্রায় ৩ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে পশুর হাট বসে। 
রংপুর নগরীর কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত লালবাগ হাটটি প্রতি রবি ও বুধবার বসে।

পাইকার ও সাধারণ ক্রেতারা বলছেন, হাটে এবার গরুর দাম অন্যান্য বছরের চেয়ে বেশি।

সরেজমিন লালবাগ হাটে গিয়ে দেখা যায়, হাট এলাকা ছাপিয়ে প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকা জুড়ে পশুর হাট বসেছে। বিভিন্ন এলাকা থেকে গরু-ছাগল নিয়ে এসেছেন খামারিসহ সাধারণ বিক্রেতারা। সর্বনিম্ন গরুর দাম ৮০ হাজার টাকা দেখা গেছে। সর্বোচ্চ ২০ লাখ টাকা দামের গরুও দেখা গেছে এ হাটে।

দাম বেশি থাকায় সাধ্যের সঙ্গে গরুর দাম মিলছে না বলে জানিয়েছেন ক্রেতারা।

নগরীর কেরানিপাড়া থেকে গরু কিনতে আসা খবির উদ্দিন ডেইলি স্টারকে বলেন, ভালো মানের গরু কিনতে হলে লাখ টাকার বেশি লাগবে।

একই কথা জানান, মুন্সীপাড়া থেকে আসা আবুল হোসেন ও শরিফুলসহ অনেকে। 

তবে বিক্রেতারা বলছেন, গো-খাদ্যের দাম তিনগুণ বেড়েছে। তাই গরু পালনের খরচও অনেক বেড়েছে। এ অবস্থায় লাখ টাকার নিচে সাধারণ গরু বিক্রি করা যাচ্ছে না।

অন্যদিকে হাটে ভিড় জমিয়েছেন ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে আসা পাইকাররা। তারা বলছেন, প্রতিদিনই গরুর দাম বাড়ছে। তারপরেও বুধবারই লালবাগর শেষ হাট, তাই দাম একটু বেশি দিয়ে হলেও কিনতে হচ্ছে।

শফিকুল নামে এক বিক্রেতা বলেন, ক্রেতারা মাঝারি ধরনের গরু পছন্দ করছেন এবার। আর লালবাগ হাটে সব ধরনের গরু পাওয়া যায় বলে  অনেক ক্রেতা আসেন।

অনেকে আবার খামারিদের বাড়ি থেকেও গরু কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।

গত রোববার রংপুরের লালবাগ হাট ছাড়াও নগরীর বুড়িরহাট, তারাগঞ্জ, পীরগাছা ও কাউনিয়াসহ বিভিন্ন স্থানে গরুর হাট বসে।

তবে লালবাগ হাটে গরুর আমদানি সবচেয়ে বেশি বলে জানান স্থানীয়রা।

এদিকে রংপুরের প্রাণিসম্পদ বিভাগ জানিয়েছে, জেলায় এ বছর কোরবানির জন্য পর্যাপ্ত পশু আছে। জেলায় ২৫ হাজার ৭১ জন খামারির কাছে প্রায় ৩ লাখ ৫৩ হাজার ৬১০টি গরু, ছাগল, ভেড়া ও মহিষ আছে। তবে চাহিদা আছে ২ লাখ ১৬ হাজার ৩৭০ পশুর। জেলার চাহিদা মিটিয়ে ১ লাখ ৩২ হাজার পশু দেশের অন্য জেলার চাহিদা মেটাতে সক্ষম।

বিভাগীয় প্রানিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, রংপুর বিভাগের ৮ জেলায় কোরবানির জন্য প্রায় ১৩ লাখ পশু প্রস্তুত আছে, যা চাহিদার তুলনায় উদ্বৃত্ত।

Comments

The Daily Star  | English
cyber security act

A law that gagged

Some made a differing comment, some drew a political cartoon and some made a joke online – and they all ended up in jail, in some cases for months. This is how the Digital Security Act (DSA) and later the Cyber Security Act (CSA) were used to gag freedom of expression and freedom of the press.

9h ago