ট্রাক-পিকআপে ঘরে ফিরছেন উত্তরাঞ্চলের মানুষ

ঈদ উদযাপন করতে রংপুর বিভাগের ৮ জেলার হাজারো মানুষ ফিরছেন ঘরে। তাদের চোখে-মুখে প্রশান্তির ছাপ থাকলেও শরীরগুলো ক্লান্ত। যেভাবে তারা ঘরে ফিরছেন, সেই যাত্রায় রয়েছে জীবনের ঝুঁকি।
আগামীকাল রোববার ঈদুল আজহা উদযাপনে ঘর ফেরা মানুষের চাপে যানবাহনের ছোট জায়গাও হয়ে উঠেছে মূল্যবান। ফলে, বাসে তো বটেই ট্রাক ও পিকআপভ্যানে জায়গা পাওয়াও কঠিন হয়ে পরছে তাদের জন্য। ঢাকা থেকে রংপুরমুখি প্রতিটি যানবাহনেই রয়েছে যাত্রীর ভিড়।
তাদের বেশিরভাগই পোশাক শ্রমিক ও নিম্ন আয়ের মানুষ।

রংপুর নগরীর মডার্ন মোড় এলাকায় দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে আলাপকালে যাত্রীরা জানান, প্রচণ্ড গরমের সঙ্গে যাত্রাপথের প্রায় সব জায়গায় যানজটের কারণে তাদের যাত্রা মোটেই সুখকর হয়নি।
অধিকাংশ যাত্রীর অভিযোগ, যানজটের কারণে ঢাকা থেকে রংপুর পৌঁছাতে তাদের ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় লেগেছে এবং খরচও হয়েছে অনেক বেশি।
আজ শনিবার সকাল ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত রংপুর নগরীর মডার্ন মোড়ে সরেজমিনে দেখা যায়, বাস, ট্রাক ও পিকআপভ্যান থেকে ঘরমুখি মানুষ নামছেন। ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা বাসে রংপুরের মডার্ন মোড় নেমে অন্য বাসে দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, নীলফামারী, লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামে যাচ্ছেন সেসব জেলার বাসিন্দারা।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) প্রায় ২০০ বাস ইতোমধ্যেই যাত্রী নিয়ে রংপুরে এসেছে।
রংপুরের বিআরটিসি কর্মকর্তারা জানান, আগামীকাল সকালের মধ্যে আরও দেড় শতাধিক বাস আসবে।
ঢাকা থেকে আসা একটি ট্রাক থেকে নেমে জামাল উদ্দীন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বাসের ভাড়া বেশি হওয়ায় গাবতলি থেকে ট্রাকে উঠেছিলাম। ভাড়া নিয়েছে এক হাজার ২০০ টাকা। ট্রাকে ছিলাম আমরা মোট ৬০ জন। গাদাগাদি আর প্রচণ্ড গরমে সবার অবস্থাই খারাপ হয়ে গেছে।'
তিনি আরও বলেন, 'রাস্তা খারাপ হওয়ায় ঝাঁকিও ছিল অসহনীয়। ১০ থেকে ১২ ঘণ্টার মধ্যে পৌঁছতে পারলে এত কষ্ট হতো না। কিন্তু সময় লেগেছে প্রায় ৩০ ঘণ্টা।'
জামাল যাবেন পঞ্চগড়। তার এখনো প্রায় ১২০ কিলোমিটারের যাত্রা বাকি।
ট্রাকে ঢাকা থেকে ৩০ ঘণ্টা যাত্রা শেষে রংপুরে পৌঁছে রোকন মিয়া বলেন, 'ঝুঁকি তো থাকেই। টাকারও অনেক বেশি নেয় ট্রাকে, আবার কষ্টও বেশি। কিন্তু বাড়ি ঢুকে স্বজনদের মুখগুলো দেখলে সব ভুলে যাই।'
রোকন যাবেন কুড়িগ্রাম। রংপুর থেকে আরও প্রায় ৭০ কিলোমিটার দূরে তার স্বজনরা। তিনি অপেক্ষায় আছেন কোনো বাস বা ট্রাকের।
বাসের যাত্রীদেরও ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে।
দুপুর ১২টার দিকে যাত্রাপথের অভিজ্ঞতা জানিয়ে রোজিনা আক্তার নামে একজন গার্মেন্টস শ্রমিক বলেন, 'শুক্রবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে বাসে উঠি। ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় লেগেছে মডার্ন মোড় পৌঁছাতে।'
গরমে এই দীর্ঘ যাত্রায় তার ছোট ছেলেটি বেশ অসুস্থ হয়ে পড়েছে বলে জানান তিনি।
এখানেই শেষ নয়।
সাধারণত, ঢাকা থেকে রংপুরের বাস ভাড়া ৬০০ টাকা। অথচ, আজ রোজিনাকে আসতে হয়েছে এক হাজার ৬০০ টাকা ভাড়া দিয়ে। একই অবস্থা এই রুটের প্রতিটি বাসে।
রোজিনার যাত্রা রংপুরে শেষ নয়। তিনি যাবেন নীলফামারী। রংপুর থেকে তার বাড়ির দূরত্ব প্রায় ৬৫ কিলোমিটার।

মডার্ন মোড়ে নামা যাত্রীর ভিড়ে যানবাহন নিয়ন্ত্রণে পুলিশকে বেগ পেতে হয়েছে।
খোরশেদ আলম নামে এক যাত্রী জানান, তিনি পরিবারের ৪ সদস্যসহ শুক্রবার সকালে বাসে উঠেছেন। তার বাড়ি ঠাকুরগাঁও। আজ সকাল সাড়ে ১১টার দিকে তারা রংপুরে পৌঁছান।
মডার্ন মোড়ে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, 'আমরা প্রচণ্ড ক্লান্ত। এখান থেকে বাড়ি যাওয়া খুব কষ্ট হয়ে যাবে।'
খোরশেদের গন্তব্য ঠাকুরগাঁও, রংপুর থেকে প্রায় ৯০ কিলোমিটার দূরে। তিনিও রংপুর পর্যন্ত এসেছেন জনপ্রতি ১ হাজার ৬০০ টাকা ভাড়া দিয়ে।
ঠাকুরগাঁওয়ের বাসের অপেক্ষায় থাকা অবস্থায় তিনি বলেন, 'যাত্রাপথে ঠিক মতো খাবারও পাইনি। যানজট আর গরমে দুর্ভোগ বেড়েছে।'
ঢাকা থেকে রংপুরে যাওয়ার জন্য ট্রাক ও পিকআপভ্যানে জনপ্রতি ভাড়া দিতে হয়েছে ১ হাজার টাকার বেশি।
ঢাকা থেকে রংপুর পৌঁছাতে এত বেশি সময় লাগার কারণ জানতে চাইলে বাস চালক একে আজাদ বলেন, 'বঙ্গবন্ধু সেতু পার হতে প্রায় ১০ ঘণ্টা সময় লেগেছে। এ ছাড়া, পথের অন্যান্য স্থানে যানজট থাকায় রংপুর পৌঁছাতে সময় লেগেছে ২৪ ঘণ্টারও বেশি।'
Comments