দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াকে সংযুক্ত করার বিষয়ে বাংলাদেশ-ভারতের সম্মতি

জল, রেল ও সড়কপথের আঞ্চলিক প্রকল্পের পাশাপাশি জ্বালানি, পর্যটন ও টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্কের মাধ্যমে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াকে সংযুক্ত করার একটি অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশ ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। 
ছবি: সংগৃহীত

জল, রেল ও সড়কপথে আঞ্চলিক প্রকল্পের পাশাপাশি জ্বালানি, পর্যটন ও টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্কের মাধ্যমে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াকে সংযুক্ত করার বিষয়ে অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশ ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। 

আজ শনিবার আসামের গুয়াহাটিতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন এবং ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর 'এনএডিআই কনক্লেভ' শীর্ষক ২ দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক নদী বিষয়ক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এই মন্তব্য করেছেন।

জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি এবং কোভিড-পরবর্তী পরিস্থিতিতে সাপ্লাই চেইন ব্যবস্থার ওপর আঘাত হানায় জীবন ও জীবিকাকে যে ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছিল, সেই পরিপ্রেক্ষিতে আঞ্চলিক একত্রীকরণ এবং সহযোগিতার বিষয়টি আগের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে জানান তারা।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আসাম সরকারের অ্যাক্ট ইস্ট পলিসি অ্যাফেয়ার্স ডিপার্টমেন্ট ও নর্থ ইস্টার্ন কাউন্সিলের সহযোগিতায় শিলং-ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান এশিয়ান কনফ্লুয়েন্স ন্যাচারাল অ্যালাইস ইন ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ইন্টারডিপেনডেন্স (এনএডিআই) সম্মেলনের আয়োজন করে।

আঞ্চলিক নদীগুলো যখন সংযুক্ত ছিল এবং ব্যবসায়ীরা সহজেই নদীপথে চলাচল করতে পারতেন তখন বাংলা তার সমৃদ্ধির শিখরে পৌঁছেছিল উল্লেখ করে মোমেন বলেছেন, 'সময়ের সঙ্গে অনেকগুলো যোগাযোগের উপায় বিচ্ছিন্ন করা হয়। তবে বেশ কয়েকটি আবারও পুনরুজ্জীবিত করার প্রক্রিয়া চলছে।'

তিনি জানান, কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ ও ভারত নদী, সড়ক এবং রেল যোগাযোগ পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছে। যা উত্তর-পূর্ব ভারতকে দেশের বাকি অংশের সঙ্গে সংযুক্ত করছে।

তিনি আরও বলেন, বাণিজ্য সহজ করার জন্য দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে অবস্থিত বাংলাদেশ মিয়ানমার ও থাইল্যান্ড এবং স্থলবেষ্টিত নেপাল ও ভুটানসহ অঞ্চল দুটির মধ্যে সেতু হতে আগ্রহী। এ ছাড়া তিনি বলেন, নদীপথগুলো আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ কারণ সেগুলো সাশ্রয়ী এবং পরিবেশবান্ধব।

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ৫৪টি আন্তঃসীমান্ত নদী রয়েছে এবং নদীগুলোর ব্যবস্থাপনা এবং নৌচলাচল ঠিক রাখার অভিন্ন পদ্ধতি উভয় দেশকে ব্যাপকভাবে সাহায্য করতে পারে বলেও জানান তিনি।

ঢাকা ও দিল্লি ৬টি ছোট নদীর পানি বণ্টনের চুক্তির বিষয়ে কাজ করছে উল্লেখ করে মোমেন বলেন, অভিন্ন নদীগুলোর পানি বণ্টনের সঠিক পদ্ধতি থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যাতে ভবিষ্যত প্রজন্ম গর্ব করতে পারে।

সম্মেলনের বাইরে জয়শঙ্করের সঙ্গে সাক্ষাতে মোমেন তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তিতে স্বাক্ষর করার কথাও বলেছিলেন। ২০১১ সালে সব প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির শেষ মুহূর্তের বিরোধিতার কারণে যা স্বাক্ষর করা যায়নি।

অন্যদিকে জয়শঙ্কর বলেছেন, ভারত তার উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে অনেক বেশি সংযুক্ত এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চল প্রতিবেশীদের সঙ্গে অনেক বেশি সংযুক্ত। এর ফলে আঞ্চলিক অর্থনীতির পূর্ণাঙ্গ রূপান্তর ঘটবে। 

তিনি বাংলাদেশের সঙ্গে ৬টি ঐতিহাসিক রেল সংযোগ পুনরুদ্ধার, ২৮টি বিজ্ঞাপিত স্থল শুল্ক স্টেশন ব্যবহার করে স্থলপথে পণ্য পরিবহন এবং ফেনী নদীর ওপর মৈত্রী সেতু যেটি বাংলাদেশ ও ত্রিপুরাকে সংযুক্ত করে সেগুলোর বিষয়ে বলেন।

জয়শঙ্কর আরও বলেছেন, ভারতীয় বন্দরগুলো থেকে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম এবং মংলা বন্দর এবং সেখান থেকে ত্রিপুরা ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অন্যান্য অংশের স্থলপথের মাধ্যমে পণ্য চলাচলের জন্য জটিল এবং আন্তঃসীমান্ত ভূগোলিক অবস্থান চুক্তির মাধ্যমে সমন্বয় করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, 'উত্তর-পূর্বাঞ্চল, বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান এবং মিয়ানমার যখন আরও গভীরভাবে সংযুক্ত হবে তখন কী ঘটবে? তাদের প্রত্যেকে আরও প্রবেশাধিকার, সুযোগ, সম্পদ এবং বাজারের মাধ্যমে উপকৃত হবে। এই প্রচেষ্টা আক্ষরিক অর্থেই আসিয়ানকে আমাদের কাছাকাছি নিয়ে আসবে।

যদি আমরা সঠকভাবে নীতিমালা তৈরি ও অর্থনৈতিক অধিকার পাই, তাহলে অবশ্যই আমাদের ভৌগোলিক অবস্থানকে অতিক্রম করে ইতিহাস পুনর্নিমাণের সক্ষমতা রয়েছে বলেন, জয়শঙ্কর।

 

Comments

The Daily Star  | English

Floods cause Tk 14,421 crore damage in eastern Bangladesh: CPD study

The study highlighted that the damage represents 1.81 percent of the national budget for fiscal year (FY) 2024-25

1h ago