দিনে ৬-৭ ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন উত্তরাঞ্চল, অতিষ্ঠ জনজীবন, ক্ষতিগ্রস্ত কলকারখানা

লোড শেডিংয়ের কারণে মোমবাতির আলোতে পড়াশোন করছে এক শিক্ষার্থী। ছবি: ফাইলফটো/ স্টার

উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলোতে গত ২ থেকে ৩ দিন ধরে শুরু হয়েছে তীব্র লোড শেডিং। এতে করে ভ্যাবসা গরমে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন। ব্যাহত হচ্ছে সেবামূলক কর্মকাণ্ড এবং ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিল্প-কলকারখানার উৎপাদন।

বগুড়া শহরের নারুলী এলাকার এক স্কুল শিক্ষক শরিফা বেগম দ্য ডেইলি স্টারকে, 'গত ২ থেকে ৩ দিন ধরে লোড শেডিং খুব বেশি হচ্ছে। বিদ্যুৎ এসে এক ঘণ্টা থেকে আবার চলে যাচ্ছে। এতে করে রান্না থেকে ঘর-গৃহস্থালীর কাজ করতে সমস্যা হচ্ছে। দিনে ও রাতে ৭-৯ বার করে বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। ভ্যাবসা গরমে পরিবারের সবাইকে নিয়ে অস্থির হয়ে যাচ্ছি।

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার চা বিক্রেতা বাবু মিয়া বলেন, 'আমার চায়ের দোকানটা ছোট এবং বেশ গরম। ঘন ঘন বিদ্যুৎ থাকছে না বলে লোকজন কম বসছেন আমার দোকানে। ফলে বেচা-বিক্রিও কম হচ্ছে।'

জয়পুরহাট সদরের শিক্ষক নাছরিন সুলতানা শাপলা বলেন, 'দিনে-রাতে সমানতালে লোডশেডিং হচ্ছে। বিদ্যুৎ চলে গেলে রাতে গরমে ঘুমাতে পারছি না। ৩ থেকে ৪ দিন হলো এমন হচ্ছে। রাতে ছোট বাচ্চাদের পাখার বাতাস দিয়ে ঘুম পারাতে হচ্ছে।'

বগুড়া ২৫০ শয্যার মোহাম্মাদ আলী হাসপাতালে কর্মরত এক চিকিৎসক বলেন, 'ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে চিকিৎসা সেবা ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। অপারেশন থিয়েটারে অনেক সময় অর্ধেক অপারেশন করে বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে এবং চিকিৎসকদের জেনারেটরের জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে। আবার কিছু কিছু মেশিন জেনারেটর দিয়ে চালানোও সম্ভব হচ্ছে না। তাছাড়া এক্স-রে এবং প্যাথোলোজি ডিপার্টমেন্ট ও ঠিকভাবে কাজ করতে পারছে না।'

বগুড়ার কিবরিয়া এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ -এর প্রোপাইটর গোলাম কিবরিয়া বাহার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমার অটো রাইস মিলের তিনটি ইউনিট। এখন আমাদের চাল উৎপাদনের পিক টাইম। ঘন ঘন বিদ্যুৎ চলে যাওয়ায় উৎপাদন ব্যাপক হারে কমে গেছে। দিনে ৮-৯ বার বিদ্যুৎ চলে যাচ্ছে। একবার গেলে এক থেকে ২ ঘণ্টা পর বিদ্যুৎ আসছে। উৎপাদন কম হওয়ার কারণে কাস্টমারদের চাল দিতে পারছিনা। তাদের কারো কারো সঙ্গে ঝগড়া করতে হচ্ছে।'

বগুড়া সব ধরণের কল-কারখানার উৎপাদন ঠিক একইভাবে ব্যাহত হচ্ছে বলে জানান গোলাম কিবরিয়া।

গাইবান্ধায় কতটুকু লোডশেডিং হচ্ছে জানতে চাইলে পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির অ্যাসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার ফারুক হোসেন (অপারেশন অ্যান্ড ম্যাইনটেইনেস ডিপার্টমেন্ট) ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের পিক আওয়ারের সাধারণত বিদ্যুতের চাহিদা থাকে ৬০ মেগাওয়ার্ট কিন্তু গ্রিড থেকে পাচ্ছি মাত্র ৩৬ মেগাওয়াট। সে কারণে প্রায় ৬-৭ ঘণ্টা লোডশেডিং হচ্ছে। তবে আমরা রেশনিং করে বিদ্যুৎ সাপ্লাই দিচ্ছি। কিছু ফিডার বন্ধ করে অন্য ফিডারগুলো চালু রাখছি। এই কারণে দেখা যাচ্ছে কোন এলাকায় এক ঘণ্টা বিদ্যুৎ না থাকলে পরের ঘণ্টায় তারা আবার বিদ্যুৎ পাচ্ছে।'

এই বিষয়ে জানতে চাইলে গাইবান্ধা পল্লী বিদ্যুতের জেনারেল ম্যানেজার শেখ মনোয়ার মোরশেদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা জাতীয় গ্রিড থেকে সরবরাহ কম পাচ্ছি। গ্যাসের সংকটের কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে গেছে। এই অবস্থা স্বাভাবিক হতে ২-৩ দিন সময় লাগবে।'

এই সংকট কতদিন থাকবে জানতে চাইলে বগুড়া পল্লীবিদ্যুৎ সমিতি-১ এর জেনারেল ম্যানেজার মনির উদ্দিন মজুমদার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'জাতীয় গ্রিড থেকে কম বিদ্যুৎ সাপ্লাই দেওয়া হচ্ছে। আমরা চাহিদার ৪ ভাগের একভাগ পাচ্ছি সেটা দিয়ে ১৬-১৭ ঘণ্টা চলছে। যতদূর জানি গ্যাস সংকটের কারণে উৎপাদন কম হচ্ছে। এই অবস্থা আরও ৪-৫ দিন থাকতে পারে। এর পরে গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক হতে পারে।'

Comments

The Daily Star  | English

No scope to avoid fundamental reforms: Yunus

Conveys optimism commission will be able to formulate July charter within expected timeframe

5h ago