‘লাশ না নিয়ে বাড়ি ফিরবো না’

নারায়ণগঞ্জে শীতলক্ষ্যায় ডুবে যাওয়া ‘এমএল আফসার উদ্দিন’ লঞ্চ উদ্ধারের পর লঞ্চের ভেতরে কোনো মরদেহ পাওয়া যায়নি। এতে ক্ষুব্ধ নিখোঁজের স্বজনরা। তাদের দাবি, ‘আমরা লাশ চাই। লাশ না নিয়ে বাড়ি ফিরবো না।’

নারায়ণগঞ্জে শীতলক্ষ্যায় ডুবে যাওয়া 'এমএল আফসার উদ্দিন' লঞ্চ উদ্ধারের পর লঞ্চের ভেতরে কোনো মরদেহ পাওয়া যায়নি। এতে ক্ষুব্ধ নিখোঁজের স্বজনরা। তাদের দাবি, 'আমরা লাশ চাই। লাশ না নিয়ে বাড়ি ফিরবো না।'

আজ সোমবার ভোর ৫টা ৩৫ মিনিটের দিকে সদর উপজেলার কয়লাঘাট এলাকায় লঞ্চটি নদী থেকে উঠিয়ে তীরে আনা হয়।

সরেজমিনে দেখা গেছে, লঞ্চ ওঠানোর পর কোনো মরদেহ নেই ঘোষণার পর বিক্ষোভ শুরু করেন নিখোঁজের স্বজনরা। উদ্ধারকারীদের ওপর হামলার চেষ্টা করেন। তখন পুলিশ সদস্যরা বিক্ষোভকারীদের বুঝিয়ে শান্ত করেন।'

নারায়ণগঞ্জ দমকল বাহিনীর সহকারী পরিচালক তানহারুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'লঞ্চের ভেতরে কোন মরদেহ পাওয়া যায়নি। তবে আমাদের উদ্ধার কাজ অব্যাহত থাকবে।'

নিখোঁজ উম্মে খায়রুন ফাতেমার দেবর দেলোয়ার হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'রাত থেকে অপেক্ষা করছি। ভাবির মরদেহ অন্তত পাবো। কিন্তু, সকালে বলে মরদেহ নেই।'

'এতগুলো মরদেহ কোথায় গেল?' প্রশ্ন রেখে তিনি আরও বলেন, 'আমরা লাশ চাই। লাশ না নিয়ে বাড়ি ফিরবো না।'

তার অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ পরিকল্পিতভাবে মরদেহ সরিয়ে ফেলেছে।

উম্মে খায়রুন ফাতেমা (৪২) সোনারগাঁ হারিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তার স্বামী মোহাম্মদ আবু তাহের সরকার (৫৫) সোনারগাঁ মহিলা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক।

তারা স্বামী-স্ত্রী সোনারগাঁ থেকে মুন্সিগঞ্জ যাচ্ছিলেন পিটিআই সনদপত্র আনার জন্য। লঞ্চ ডুবে যাওয়ার সময় আবু তাহের সরকার বের হয়ে আসতে পারলেও নিখোঁজ থাকেন খায়রুন ফাতেমা।

নিখোঁজ মোসলেহ উদ্দিন হাতেম (৬৫) এর ছেলে মোহাম্মদ সাগর ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মাত্র ২৫ দিন আগে বাবা কুয়েত থেকে দেশে এসেছেন। ডাক্তার দেখানোর জন্য ঢাকা গিয়েছিলেন। ডাক্তার দেখানো শেষে দুপুরে লঞ্চে বাড়ি ফিরছিলেন। আমাদের এক প্রতিবেশী বোনের সঙ্গে তার ঘাটে দেখা হয়েছিল। তিনি জানিয়েছেন বাবা ওই লঞ্চে ছিলেন।'

'রাত থেকে অপেক্ষা করছি বাবার মরদেহের জন্য। ছোট একটা লঞ্চ ওঠাতে ১৫-১৬ ঘণ্টা লাগিয়ে দিল। আর এখন বলছে লাশ নাই। এটা কিভাবে সম্ভব? ভিডিওতে দেখছি লঞ্চে কত মানুষ কিন্তু এখন বলছে লাশ নাই। লাশগুলো গেল কই?'

তিনি বলেন, 'লাশ ছাড়া বাড়ি যাবো না। আমাদের লাশ বুঝিয়ে দিতে হবে। আমরা সরকারি টাকা চাই না লাশ চাই।'

গতকাল রোববার দুপুর সোয়া ২ টায় সদর উপজেলার কয়লাঘাট এলাকায় এমভি রূপসী-৯ কার্গো জাহাজের ধাক্কায় যাত্রীবাহী এমএল আফসার উদ্দিন লঞ্চ ডুবে যায়। এতে অর্ধশতাধিক যাত্রী ছিল জানায় সাঁতরে তীরে উঠা যাত্রীরা।

তবে তাদের মধ্যে ২০ থেকে ২৫ জন সাঁতরে তীরে উঠতে পারলেও ১৫ থেকে ২০ জন যাত্রী এখনো নিখোঁজ আছে বলে জানান দমকল বাহিনীর সদস্যরা। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২ শিশু, ৩ নারী ও এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English

The story of Gaza genocide survivor in Bangladesh

In this exclusive interview with The Daily Star, Kamel provides a painful firsthand account of 170 days of carnage.

1d ago