নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম আকাশছোঁয়া: দরিদ্র, মধ্যবিত্তের বেঁচে থাকা দায়
জ্বালানির তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে পরিবহন ধর্মঘট এবং পণ্য পরিবহনে খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় কাঁচাবাজারে অনেক নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস, বিশেষ করে শাকসবজির দাম আরও বেড়েছে।
খুচরা বিক্রেতারা জানিয়েছেন, প্রতিটি সবজির দাম প্রায় ১০ থেকে ৩০ শতাংশ বেড়েছে।
গতকাল শনিবার বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে এই প্রতিবেদক দেখতে পান, প্রতি কেজি বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। যা পরিবহন ধর্মঘট কার্যকর হওয়ার আগের দামের চেয়ে প্রায় ৩০ শতাংশ বেশি।
প্রতি কেজি শিম ১৪০ টাকা, কাঁচা মরিচ ১৪০ টাকা, টমেটো ১৬০ টাকা, পটল ৫০ টাকা, করলা ৬০ টাকা এবং বরবটি ৮০-১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
রাজধানীর শুক্রাবাদ বাজারের সবজি বিক্রেতা আব্দুল আলীম দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, পরিবহন ধর্মঘটের ঘোষণার পরই গত দুই দিনে সবজির দাম বেড়েছে।
ধানমন্ডি এলাকার বেসরকারি চাকরিজীবী মো. আল আমিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, নতুন এই মূল্যবৃদ্ধি মহামারিতে বিভিন্ন সমস্যায় পড়া স্বল্প ও নির্ধারিত আয়ের মানুষের দুর্দশা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। তারা আগে থেকেই আকাশছোঁয়া দামের সঙ্গে টিকে থাকতে হিমশিম খাচ্ছেন।'
কারওয়ান বাজারের পাইকারি বিক্রেতা হাবিবুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'শুধু পরিবহন ধর্মঘটের কারণেই সবকিছুর দাম বেড়েছে তা নয়। মূলত মজুত কমে যাওয়ায় সবজির দাম বেড়েছে। শীতকালীন সবজি বাজারে এলে দাম স্বাভাবিক হয়ে আসতে পারে।'
যশোরের সবজি চাষি ও পাইকারি বিক্রেতা সুকুমার রায় দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'অফসিজন থাকায় স্থানীয় বাজারে সবজির সরবরাহ কমে গেছে।'
তিনি জানান, তবে যশোর বড় বাজারে গতকাল সবজির সরবরাহ খুবই কম ছিল। কারণ পরিবহন ধর্মঘটের কারণে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত সবজি বাজারে আনেননি।
সুকুমারের কাছ থেকে জানা যায়, গতকাল বড় বাজারে প্রতি কেজি বেগুন বিক্রি হয়েছে ৭০ টাকায়। অন্যান্য সবজির দাম ছিল ২০ থেকে ৪০ টাকার মধ্যে।
মোহাম্মদপুর এলাকার বেসরকারি চাকরিজীবী মোহাম্মদ আলম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এখন দুশ্চিন্তার একটাই কারণ, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম আকাশছোঁয়া। আমি টিকে থাকতে পারছি না। সত্যি, আমি আর পারছি না।'
গত এক মাসে চিনি, ময়দা, মুরগির মাংস, মাছ, রান্নার তেল এবং মশলাসহ প্রায় সব নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বেড়েছে।
চিনি ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে, যা সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে ৫ টাকা বেশি।
ভোক্তারা ভোজ্যতেল ও ময়দার জন্য বেশি খরচ করছেন।
প্রতি কেজি মোটা আটা ও মিহি আটা বিক্রি হচ্ছে যথাক্রমে ৩৮ থেকে ৪০ টাকা এবং ৪৮ থেকে ৫২ টাকার মধ্যে। যা এক মাস আগের তুলনায় ৪ থেকে ৫ শতাংশ বেশি। রাষ্ট্রায়ত্ত্ব ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) জানিয়েছে, প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫২ থেকে ৬৫ টাকায়।
বোতলজাত সয়াবিন তেল প্রতি লিটার বিক্রি হচ্ছে ১৫০-১৬০ টাকায়, যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ৪৮ শতাংশ বেশি। ৫ লিটার সয়াবিন তেলের দাম পড়ছে ৭০০ থেকে ৭৬০ টাকা।
প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৫০ থেকে ১৭০ টাকা এবং সোনালী জাতের মুরগি ৩০০ থেকে ৩৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
রাজাবাজার এলাকায় গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করা শেফালী বেগম বলেন, 'মানুষের বাড়িতে কাজ করে যে টাকা পাই তা দিয়ে এখন আর সংসার চালাতে পারি না। এ অবস্থায় টিকে থাকার জন্য সব ধরনের খাবার খাওয়া কমিয়ে দিয়েছি।'
একাধিক ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, চলমান পরিবহন ধর্মঘট দীর্ঘায়িত হলে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম মধ্যবিত্ত মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাবে।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি গোলাম রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আসলে নভেম্বরে সবজির সরবরাহ বাড়লে দাম কমে যায় এবং প্রতি বছর ডিসেম্বরে দাম সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে চলে আসে।'
কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির ফলে বাজারে ঝুঁকি বেড়েছে। পরিবহন খরচ বাড়লে এবার ভোক্তারা শীতকালীন সবজির সুফল পাবেন কিনা তা নিয়ে সংশয় আছে বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, 'তেলের দাম বৃদ্ধির ফলে পরিবহন ও উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির কারণে পণ্যের দামের উপর বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। ভোগান্তি বাড়বে মানুষের।'
অনুবাদ করেছেন সুমন আলী
Comments