পূজার আনন্দ বাড়িয়ে দিয়েছে উপহারের ঘর

এতো দিন মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার রাজানগর চা বাগানের জরাজীর্ণ কুঁড়ে ঘরে বসবাস করে আসছিলেন দরিদ্র চা-শ্রমিক আন্নদ্রা উরাং। তার দুই কক্ষের ঘরটির একাংশে থাকত পালিত গরুটি। অন্য ঘরটিতে থাকতেন তিনি ও তার ছোট বোন সুকন্তি উরাং। সেখানেই ছিল রান্নার ব্যবস্থা।
তবে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর পেয়ে তার এই দুরবস্থা অনেকটাই লাঘব হয়েছে।
কেবল আন্নদ্রা উরাং নন। নতুন ঘর পেয়েছেন মুরইছড়া চা বাগানের শ্রমিক সাবিত্রি রাজভর, দিলদারপুর চা বাগানের রমন ভুমিজ, বোরহাননগর চা বাগানের বাসন্তি শুক্লবৈদ ও আশকরাবাদ চা বাগানের আশরু উরাং। শারদীয় দুর্গোৎসবের আগে নতুন ঘরপ্রাপ্তির ঘটনা তাদের পূজার আনন্দকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
চা-শ্রমিক আন্নদ্রা উরাংয়ের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাবা-মা মারা যাওয়ার পর সহায়-সম্বল বিক্রি করে ছোট বোনের বিয়ে দিয়েছিলেন। সেই বিয়ে টেকেনি। বোনকে নিয়ে জীর্ণ কুটিরেই কাটছিল তার দিন। ঘরের সঙ্গেই ছিল কাঁচা পায়খানা।
আন্নদা উরাংয়ের ভাষ্য, তার নতুন ঘরটি 'বাবু-সাহেবদের ঘরের মতো'। যেখানে পাকা টয়লেটের পাশাপাশি আলাদা রান্নাঘরও আছে। ঘর পেয়ে উচ্ছ্বসিত এই চা-শ্রমিক বলেন, 'হামনিকের নতুন ঘরে হামরা দুর্গাপূজা কারবই (এবারের দুর্গাপূজা নিজের নতুন ঘরে থেকেই করবো)।'
আশকরাবাদ চা বাগানের আশরু উরাংয়ের কণ্ঠেও পাওয়া গেল একই উচ্ছ্বাসের সুর। তিনি বলেন, 'এই আনন্দ অন্যবারের চেয়ে আলাদা।'
লংলা চা বাগানের সঞ্জু বাকতির ভাষ্য, 'জীবনেও ভাবছি না নিজের ঘরে থাকতে পারব। এইবার ভগবান মুখ তুলিয়া চাইছইন। নতুন ঘরে থেকে প্রথম দুর্গাপূজা করবো। এর মতো আনন্দের কিছু নাই।'
প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শিমুল আলী দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, চা-শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নে জাতীয় সমাজ কল্যাণ পরিষদের অর্থায়নে প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে এই ঘরগুলো তৈরি করা হয়েছে। প্রতিটি ঘর তৈরিতে খরচ হয়েছে ৪ লাখ টাকা।
এ ব্যাপারে কুড়াউড়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ টি এম ফরহাদ চৌধুরী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে প্রধামন্ত্রীর বিশেষ উপহার হিসেবে অতি দরিদ্র চা-শ্রমিকদের জন্য আরও ১৯টি ঘর প্রস্তুত হয়ে গেছে। আর সপ্তাহখানেকের মধ্যে সেগুলো হস্তান্তর করা হবে।'
উপজেলার প্রশাসনের এই শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, এই ঘরগুলো তাদেরই দেওয়া হচ্ছে, যাদের কিছুই নেই। চা বাগানগুলোতে এসব ঘরের চাহিদাও বেশি।
Comments