প্রশাসক নিয়োগের বিধান রেখে জেলা পরিষদ বিল সংসদে পাস

ফাইল ছবি।

জেলা পরিষদে প্রশাসক নিয়োগের বিধান যুক্ত করে জেলা পরিষদ (সংশোধন) বিল-২০২২ সংসদে পাস হয়েছে। প্রস্তাবিত আইনে জেলা পরিষদে বিদ্যমান ১৫ জন সাধারণ সদস্যের স্থলে উপজেলার সমান সংখ্যক সদস্য থাকার বিধান করা হয়েছে।

আজ বুধবার স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম সংসদে বিলটি পাসের প্রস্তাব করলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়।

গত ২৩ জানুয়ারি বিলটি সংসদে তোলার পর তা পরীক্ষা করে সংসদে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য সংসদীয় কমিটিতে পাঠানো হয়।

বিদ্যমান আইনে কেবল নতুন জেলা পরিষদ গঠনের ক্ষেত্রে প্রশাসক নিয়োগের বিধান থাকলেও চলমান কোনো পরিষদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর প্রশাসক নিয়োগের বিধান নেই। বিলে জেলা পরিষদের মেয়াদ শেষ হলে প্রশাসক নিয়োগের সুযোগ যুক্ত করা হয়েছে।

বিদ্যমান আইনে ৮২ নম্বর ধারা সংশোধন করে বলা হয়েছে- এতে কোনো জেলা পরিষদের মেয়াদ উত্তীর্ণ হলে এবং পরবর্তী পরিষদ গঠিত না হওয়া পর্যন্ত পরিষদের কার্যক্রম সম্পাদনের জন্য সরকার একজন উপযুক্ত ব্যক্তিকে বা প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত কোনো কর্মকর্তাকে প্রশাসক নিয়োগ করতে পারবে। প্রশাসকের মেয়াদ ও অব্যাহতি সরকার কর্তৃক নির্ধারিত হবে।

মন্ত্রীর প্রস্তাব করা বিলে প্রশাসকের মেয়াদ ছিল না। তবে মন্ত্রী একটি সংশোধনী গ্রহণ করায় এখন প্রশাসকের মেয়াদ ১৮০ দিনের বেশি হবে না। একইসঙ্গে একাধিকবার কেউ প্রশাসক থাকতে পারবেন না।

বিলটির উদ্দেশ্য ও কারণ সম্পর্কে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী বলেন, 'বিদ্যমান আইনে জেলার আয়তন, জনসংখ্যা ও উপজেলার সংখ্যা ইত্যাদি নির্বিশেষে সকল জেলা পরিষদে সমসংখ্যক মোট ২১ জন সদস্য রয়েছে। কিন্তু বৃহৎ আয়তনের তুলনায় ক্ষুদ্র আয়তনের জেলা পরিষদগুলোর রাজস্ব আয়ের সংস্থান খুবই কম। ফলে ক্ষুদ্র জেলা পরিষদের পক্ষে সদস্যদের সম্মানী পরিশোধ ও অন্যান্য প্রশাসনিক ব্যয় নির্বাহের পর উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ সম্ভব হয় না। এ সমস্যা থেকে উত্তরণে প্রত্যেক জেলা পরিষদের সদস্য সংখ্যা যৌক্তিকভাবে নির্ধারণ করা প্রয়োজন।'

মন্ত্রী বলেন, 'জেলা পরিষদগুলোতে আরও কার্যকর ও জনবান্ধব করার জন্য জেলা পরিষদ ও সংশ্লিষ্ট জেলার সকল উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা ও প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সিটি করপোরেশনের মধ্যে আন্তঃসমন্বয় সুসংহত করা প্রয়োজন।'

'বিদ্যমান আইনে জেলা পরিষদগুলোর মেয়াদ ৫ বছর শেষ হওয়া সত্ত্বেও নতুন পরিষদের প্রথম সভায় মিলিত না হওয়া পর্যন্ত পূর্বের পরিষদ দায়িত্ব পালন করতে পারে। এ শর্তটি সংশোধনক্রমে মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা পরিষদের ক্ষেত্রে পরবর্তী নতুন পরিষদ গঠন না হওয়া পর্যন্ত প্রশাসক নিয়োগ করা প্রয়োজন', যোগ করেন তিনি।

বিদ্যমান আইনে প্রতি জেলায় ১৫ জন সাধারণ সদস্য এবং ৫ জন সংরক্ষিত মহিলা সদস্য থাকার বিধান রয়েছে। এটি সংশোধন করে প্রত্যেক উপজেলায় (জেলার মোট উপজেলার সমসংখ্যক) একজন করে সদস্য এবং চেয়ারম্যানসহ সদস্যদের মোট সংখ্যার এক তৃতীয়াংশ (নিকটবর্তী পূর্ণসংখ্যা) ও কমপক্ষে ২ জন নারী সদস্য নিয়ে জেলা পরিষদ গঠনের কথা বলা হয়েছে।

এদিকে, বিদ্যমান আইনে নির্বাচন কমিশনকে ভোটার তালিকা তৈরির কথা বলা হলেও পাস হওয়া বিলে নির্বাচন কমিশনকে বাদ দেওয়া হয়েছে।

বিলে বলা হয়েছে, জেলা পরিষদের মেয়াদ শেষ হলে পরিষদের কার্যক্রম পরিচালনায় সরকার প্রশাসক নিয়োগ দিতে পারবে।

জেলা পরিষদের বিদ্যমান আইন অনুযায়ী, প্রত্যেক জেলায় একজন চেয়ারম্যান, ১৫ সদস্য ও ৫ নারী সদস্য অর্থাৎ মোট ২১ সদস্যের পরিষদ রয়েছে।

আইন অনুযায়ী জেলার অন্তর্গত সিটি করপোরেশনের (যদি থাকে) মেয়র ও কাউন্সিলররা, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানরা, পৌরসভার মেয়র ও কাউন্সিলর এবং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যরা জেলা পরিষদের ভোটার।

বিলে নতুন উপধারা যুক্ত করে বলা হয়েছে, সংশ্লিষ্ট প্রত্যেক উপজেলা নির্বাহী অফিসার, পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সদস্য হিসেবে পরিষদের সভায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন বলে বলা হয়েছে। তবে তাদের ভোটাধিকার থাকবে না।

বিলে জেলা পরিষদের কার্যক্রম সরকারের নিবিড় পর্যবেক্ষণে আনা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে বিদ্যমান আইনের ৩৭ ধারার পর ৩৭ (ক) যুক্ত করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে- পরিষদ প্রতি অর্থ বছর শেষে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে সরকারের কাছে সম্পাদিত কার্যাবলীর ওপর একটি বার্ষিক প্রতিবেদন দাখিল করবে।

বিলে বিদ্যমান আইনের কর্মকর্তাদের পদবির পরিবর্তন করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে 'একজন সচিব' শব্দগুলোর পরিবর্তে 'সিনিয়র সহকারী সচিব' পদমর্যাদার একজন নির্বাহী কর্মকর্তা ব্যবহারের বিধান রাখা হয়েছে।

প্রশাসক নিয়ে আপত্তি সংসদ সদস্যদের

পাস হওয়া এই বিলে প্রশাসক নিয়োগের বিধানের বিরোধিতা করেছেন বিরোধীদলের সংসদ সদস্যরা। তারা বলছেন, প্রশাসক নিয়োগের বিধান সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

জাতীয় পার্টির (জাপা) পীর ফজলুর রহমান বলেন, 'প্রশাসক নিয়োগের বিধান সংবিধানের মূল চেতনার সঙ্গে বিরোধী।'

জাপার ফখরুল ইমাম বলেন, 'এই বিল পাস হওয়ার আগেই বাতিল হয়ে যেতে পারে। সংবিধানের ১১ অনুচ্ছেদ যদি আমলে নেওয়া হয় তাহলে এটা বাতিল হয়ে যাবে।'

জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু প্রশ্ন তোলেন, জেলা পরিষদের কাজ কী তা আইনে বলা নেই। এই সংগঠনকে শক্তিশালী করারও দাবি জানান তিনি।

জাপার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, 'নির্বাচিত প্রতিনিধি ছাড়া একদিনও রাখা ঠিক হবে না। সংবিধানে বলা আছে, নির্বাচিত প্রতিনিধি ছাড়া কর আরোপ করা যাবে না। তাহলে ভোট না করে কেন প্রশাসক থাকবে?'

বিএনপির হারুনুর রশীদ বলেন, 'আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের নিয়োগ দেওয়ার জন্য প্রশাসকের বিধান রাখা হয়েছে। উপজেলা পরিষদ, ইউনিয়ন পরিষদ আছে। জেলা পরিষদের কাজ কী? এটা দুর্নীতির আখড়া। এর কাজ কী? এই আইনটি ত্রুটিপূর্ণ। যারা সদস্য হবেন তাদের কাজ কী?'

হারুন বিলটি প্রত্যাহারের দাবি করে বলেন, 'সরকার জেলা পরিষদকে কার্যকর প্রতিষ্ঠান করতে চাইলে নতুন করে আইন আনতে হবে।'

গণফোরামের মোকাব্বির খানও বিলটিকে সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে মত দেন।

এসব কথার জবাবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, 'সরকার সবসময় জনপ্রতিনিধিদের গুরুত্ব দেয়।'

স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী করতে সরকার কাজ করছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, 'এই আইনের মাধ্যমে জেলা পরিষদের সঙ্গে পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদের সংযোগ ও কাজের সমন্বয় ঘটবে।'

তাজুল বলেন, 'পৌরসভা বিল পাসের সময় বলেছিলাম, সব পৌরসভায় প্রশাসক নিয়োগ হয় না। অনেকে মেয়াদ শেষ করার পর একটা মামলা করেন। ২০ বছর ধরে বসে থাকেন। সেটা যাতে না হয়, সেজন্য প্রশাসক নিয়োগ। এটা থাকলে কারও মামলা করার ইনটেনশন হবে না।'

Comments

The Daily Star  | English
Aminul Islam Bulbul new BCB president

Bulbul 'agrees' to take over BCB president's post

Aminul Islam Bulbul is coming to the Bangladesh Cricket Board as its president, the former national team captain himself confirmed to The Daily Star.

39m ago