ফেরি কম, শিমুলিয়া ঘাটে ৪-৫ ঘণ্টা অপেক্ষা
মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া-মাদারীপুরের বাংলাবাজার ও শরীয়তপুরের মাঝিকান্দি নৌপথে ঈদ উপলক্ষে চলাচল করছে ১০টি ফেরি। সাধারণত ঈদ মৌসুমে এ নৌপথে ১৮-২০টি ফেরি চলাচল করে থাকে। কিন্তু এবার ফেরির সংখ্যা কম থাকায় ঈদযাত্রায় ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে ঘরমুখো যাত্রীদের।
বিআইডব্লিউটিসি শিমুলিয়া ঘাট সূত্রে জানা যায়, শিমুলিয়া, বাংলাবাজার ও মাঝিকান্দি নৌপথে ৮ মাস পর পদ্মা সেতুর নিচ দিয়ে রাতে ফেরি চলাচল শুরু হয়েছে। বর্তমানে ১০টি ফেরির মধ্যে ৭টি ফেরি রাতে চলাচল করছে।
আজ বৃহস্পতিবার মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাটে পারের অপেক্ষায় থাকা প্রাইভেট কারের যাত্রী শিহাব হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ঢাকার মিরপুর থেকে পরিবার পরিজন নিয়ে বরিশাল সদরে ঈদ আনন্দ উদযাপন করতে যাব। মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া ঘাট এসেছি ভোর ৫টায়। কিন্তু আসার পর ৭ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়েছে। রোজা রেখে তীব্র গরমে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে অসুস্থ হয়ে গেছে স্ত্রীসহ ২ শিশু সন্তান।'
পিকআপ চালক জাহিদ হাসান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ভোর ৫টায় ঘাটে এসেছি। এরপর বেলা ১২টা পর্যন্ত একই জায়গায় গাড়ি নিয়ে আছি। ৭ হাজার টাকা ভাড়ায় ঢাকার কামরাঙ্গীর চর এলাকা থেকে রওনা হয়েছিলাম। শরীয়তপুরের আটপাড়া এলাকায় গিয়ে মালামাল পৌঁছে দিতে হবে। কিন্তু শিমুলিয়াঘাট এসে আটকা পড়েছি।'
তিনি জানান, ব্যক্তিগত গাড়ি সিরিয়াল মেনে পার করা হলেও, পিকআপগুলো ঘাট এলাকায় জমিয়ে রাখা হয়েছে।
দুপুরের দিকে ঘাটে অপেক্ষায় থাকা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল এলাকার বাসিন্দা কামাল উদ্দিন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ভোর ৬টায় শিমুলিয়া ঘাট এসেছি। ফরিদপুর জেলার বোয়ালমারী এলাকায় পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঈদ আনন্দ উদযাপন করব। ১৮ হাজার টাকায় একটি পিকআপ ভাড়া করে বাসার মালামাল নিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু পথিমধ্যে শিমুলিয়া ঘাট এসে বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত অপেক্ষা করছি ফেরির কাছে যাওয়ার জন্য। কিন্তু ঘাট তুলনামূলক ব্যক্তিগত গাড়ির চাপ কম থাকলেও পিকআপ গাড়ি যেতে দিচ্ছে না।'
পিকআপ চালক মো. আবুল হোসেন বলেন, 'ফরিদপুরের ভাঙ্গা এলাকা থেকে ২টি গরু বহন করে ঢাকার পোস্তগোলা পৌঁছে দেই। তারপর সেখান থেকে ভোর সাড়ে ৪টা থেকে সকাল ১১টা পর্যন্ত শিমুলিয়া ঘাটে ফেরির জন্য অপেক্ষায় আছি। সাড়ে ৬ হাজার টাকা ভাড়া পেয়েছি। কিন্তু ঈদের আগে পিকআপ ভাড়ার অনেক চাহিদা থাকলেও ঘাটে পারের অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে।'
পটুয়াখালীর উদ্দেশে যাত্রা করা কেশব কবিরাজ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'জুরাইন রেলগেটের বাসা ছেড়ে মালামাল নিয়ে গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালী জেলার বদরপুর এলাকার উদ্দেশে রওয়ানা করি। শিমুলিয়া ঘাটে ভোর ৪টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত অবস্থান করেও ফেরিতে উঠতে পারিনি।'
বিআইডব্লিউটিসি সূত্র জানায়, ২০২১ সালে ঈদে মৌসুমে এ নৌপথে ১৩টি ফেরি, ২০২০ সালে ১২টি, ২০১৯ সালে ১৮টি, ২০১৮ সালে ২০টি ও ২০১৭ সালে ১৯টি ফেরি চলাচল করে।
জানতে চাইলে বিআইডব্লিউটিসি চেয়ারম্যান আহমদ শামীম আল রাজি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ঈদ উপলক্ষে শিমুলিয়া-বাংলাবাজার ও শরীয়তপুরের মাঝিকান্দি নৌপথে ১০টি ফেরি চলাচল করছে। এগুলো এ নৌপথের জন্য যথেষ্ট। বাড়তি ফেরি নেই এ নৌপথে চলাচলের জন্য। দেশের অন্যান্য নৌপথের কথা বিবেচনা করে ফেরি বিভিন্ন ঘাটে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।'
'যদি অন্য নৌপথে ফেরির প্রয়োজন কম থাকে, তবে সেখান থেকে ফেরি আনা হবে,' বলেন তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিআইডব্লিউটিসির একজন কর্মকর্তা জানান, শিমুলিয়া ঘাটে শুধু প্রাইভেটকার, অ্যাম্বুলেন্স ও মিনি পিকআপ পারাপার হয়। অন্যান্য ঈদ মৌসুমে বাস, ট্রাকসহ ভারী গাড়ি পারাপার হয়। কিন্তু পদ্মা সেতুর পিলারের ধাক্কার ঘটনার পর ৮ মাসের বেশি সময় ধরে হালকা গাড়ি পার হচ্ছে।
বিআইডব্লিউটিসির শিমুলিয়া ঘাটের সহকারী মহাব্যবস্থাপক (এজিএম) শফিকুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে জানান, শিমুলিয়া ঘাট দিয়ে বাস ও ট্রাক পারাপার নিষিদ্ধ। যাত্রীরা লঞ্চে পারাপার হলে, ব্যক্তিগত গাড়ি পারের জন্য ১০টি ফেরিই চাপ সামাল দিতে পারবে।
এ দিকে বৃহস্পতিবার দুপুরে রো রো ফেরি এনায়েতপুরী শিমুলিয়া ঘাটে এসে যুক্ত হয়েছে। সকালের দিকে যানবাহনের চাপ থাকলেও, বিকেলের দিকে যানবাহনের চাপ ছিল না। গাড়ি সরাসরি ফেরিতে উঠতে পেরেছে।
Comments