ফেসবুক থেকে: ‘ঋণ করে ঘি খেতে মজাই লাগে’

স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

'ঋণ করে ঘি খেতে প্রথম প্রথম মজাই লাগে। যখন ঋণ শোধ করার তাগাদা আসে তখনই অপরিকল্পিত ঋণ করে ঘি খাওয়ার ঠ্যালা অনুধাবন করা যায়।'

শ্রীলঙ্কার বর্তমান অবস্থা এবং বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে দ্য ডেইলি স্টারের বাংলা অনলাইনে প্রকাশিত একটি সাক্ষাৎকারের নিচে মঞ্জুরুল আলম নামের একজন পাঠকের মন্তব্য এটি।

গতকাল শুক্রবার দ্য ডেইলি স্টারে 'আমরা অতি দ্রুত বিপজ্জনক অবস্থার দিকে যাচ্ছি' শিরোনামে একুশে পদকপ্রাপ্ত অর্থনীতিবিদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক মইনুল ইসলামের একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়েছে। দ্য ডেইলি স্টারের ভেরিফায়েড ফেসবুকে পেজে সাক্ষাৎকারটি শেয়ারের পর এক হাজারের বেশি পাঠক মন্তব্য লিখেছেন। পাঠকের সেসব মন্তব্য থেকে কয়েকটি এখানে তুলে ধরা হলো:

রাকিব হাসান লিখেছেন, 'দেশ সিঙ্গাপুর হচ্ছে সেটাই বড় কথা! যদি ভুলে শ্রীলঙ্কা হয়ে যায় সেটার দায় বিএনপির।'

মোক্তার হোসেন খান জুয়েল লিখেছেন, 'অপ্রয়োজনীয় ও উচ্চাবিলাসী প্রকল্প থেকে এখনি বেরিয়ে না আসলে সামনে ভয়াবহ বিপদ অপেক্ষা করছে।'

এরশাদের মন্তব্য, '২০২৫ সালে তো কিস্তি দিতে গেলেই দেশ শেষ হবে…কী দরকার ছিল, এই ঋণ নিয়ে, জনমত না শুনে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরি করার। লাগামহীন ঋণ নিয়ে উন্নয়নের চাপাবাজি করার কোনো দরকার ছিল না। এখানে লুটপাট করার একটা রাস্তা করা হয়েছে মাত্র।'

জাকিয়া ইয়াসমিন লিখেছেন, 'এইসব সংবাদ জনগণ কে দিয়ে কোনো লাভ হয়? দেশের তো উন্নতিই হচ্ছে, এইটা শুনতে শুনতেই তো কান‌ শেষ।'

মারুফ আহমেদের ভাষ্য, 'ওই ধরনের মেগা প্রকল্প যা ঋণ নিয়ে করা হয় তাতে নেগেটিভ ক্যাশ ফ্লো হলে অর্থনৈতিক পতন অবশ্যম্ভাবী।'

নুরুল আক্তার লিখেছেন, 'অর্থনীতিবিদের মন্তব্যগুলোর ভালো দিক গ্রহণ করে সরকারকে পরিকল্পনা সাজাতে হবে। তাহলে দেশ বিপদমুক্ত থাকবে।'

শহীদ বাবু লিখেছেন, 'দেশে বৈদেশিক বিনিয়োগ পেতে হলে বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি দরকার। বিদ্যুতের জন্য আমরা অনেক কষ্ট করেছি এবং এখনো করছি (এখনো লোডশেডিং আছে)। আমরা একসময় কুইক রেন্টাল পদ্ধতিতে স্বল্প মেয়াদী বিদ্যুৎ কিনেছি। যেটা অনেক ব্যয়বহুল ছিল। পারমাণবিক বিদ্যুৎ হলে দীর্ঘ মেয়াদী স্থায়ী সমাধান হবে। তাই সাদা হাতি দরকার আছে। আমাদের উৎপাদনশীল খাতগুলোতে অতিমাত্রায় যত্ন সহকারে মনোযোগ দিতে হবে। করোনার সময়টা আমাদের সরকার অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে সামাল দিয়েছে। কলকারখানা, গার্মেন্টস সরকার তরল টাকা দিয়ে সচল রেখেছে। যেই টাকা প্রান্তিক পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। শ্রীলঙ্কা করোনার সময়টাকে ম্যানেজ করতে পারেনি অদক্ষতার জন্য। আমরা ট্যাক্স, ভ্যাট কমাইনি। এটা দক্ষতার লক্ষণ। এই সময় ক্যাপিটাল মেশিনারী ইম্পোর্ট বন্ধ ছিল। এটা দক্ষতার লক্ষণ। রিজার্ভকে একটা নির্দিষ্ট পর্যায়ে রেখে ভবিষ্যৎ ক্যাশ ফ্লো এর সঠিক ম্যানেজমেন্ট করতে পারলে আশা করি সমস্যা হবে না। ক্যাশ ফ্লো ম্যানেজমেন্টের জন্য একটা টাস্কফোর্স করলে ভালো হয়।'

বিপ্লব হোসেন বিশাল লিখেছেন, 'ঋণ পরিশোধের জন্য তো দেশের জনগণ আছেই। জানি না এই মেগা প্রকল্প কত মানুষের মরার উপর খাড়ার ঘা হয়ে আসবে।'

তৌহিদ মোল্লার মতে, 'সরকার এ সব কথার বা গবেষণার কোনো গুরুত্বই দিচ্ছে না। শুধু ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য ভারত সফর, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিনিধি প্রেরণ, মাথাপিছু আয় বেশি দেখান, স্বৈরশাসকের জন্য শক্তিশালী বিরোধী দল না থাকা ইত্যাদি কাজের মধ্যে তারা নিমজ্জিত আছে। সরকারের দেশ নিয়ে দীর্ঘমেয়াদী ভাবনার কোনো সময় নেই। বুঝতে পারবে তখনই যখন আমাদের পায়ের তলায় আর মাটি থাকবে না। শ্রীলঙ্কার মতো তখন হায় হুতাশ করতে হবে।'

মামুন আবদুল্লাহ লিখেছেন, 'মাথায় একটা নতুন ব্যবসার ধারণা এসেছে, ভাবছি শ্রীলঙ্কান ভাষা শিক্ষার কোচিং সেন্টার খুলবো। পূর্বে সিঙ্গাপুরের ভাষা শিক্ষার কোচিং সেন্টার খুলেছিলাম, বাংলাদেশ সিঙ্গাপুর হয়ে যাবে এই আশায়। কিন্তু বিধিবাম, সেই ব্যবসায় লাল বাত্তি জ্বলে গেছে।'

সমির চৌধুরী লিখেছেন, 'মেগা প্রকল্পের চেয়ে দুর্নীতি দমন করা প্রয়োজন। তাহলে দেশে উন্নয়ন করা সম্ভব।'

মো. রাশেদুল ইসলামের মতে, 'সবই তো উন্নয়নের ফিরিস্তি... বাকিটা দেশ ও জনগণের পর দিয়ে যাবে এটাই সত্য... আর নেতারা হয় বেগম পাড়াতে নয়তো প্রমোদতরীতে ভেসে বেড়াবে দেশ দেশান্তরে...।'

অনুপম চৌধুরী লিখেছেন, 'যে কোনো ধরনের বিপর্যয় থেকে বাংলাদেশের ঘুরে দাঁড়ানোর ইতিহাস খুবই সাফল্যময়। তলাবিহীন ঝুড়ি থেকে মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তর, অর্থনৈতিক সকল গ্রাফে ধারাবাহিক উন্নয়ন বিশ্ববাসীকে বাংলাদেশ সম্বন্ধে নতুন করে ভাবতে শিখিয়েছে। যাই হোক অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসে না ভুগে এখন থেকেই সচেতন হলে এশিয়ান টাইগার হিসেবেই বিবেচনায় থাকবো।'

মমিনুল ইসলাম মমিন লিখেছেন, 'এই মুহূর্তে বাংলাদেশের সরকারের উচিত বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সম্পর্ক বাড়ানো আর নতুন নতুন শ্রম বাজার তৈরি করা এবং সরকারি খরচে মানুষ পাঠানো।'

লাবনি ভুঁইয়ার ভাষ্য, 'এসব প্রকল্প দিয়ে আমাদের পেট ভরবে কি? বড়রা তো না খেয়ে মরবে না, মরবে সাধারণ জনগণ, তাতে কার কী!'

ওমর আল মোক্তার লিখেছেন, 'সরকারের একটা কৌশল মনে হচ্ছে দেশকে বিপদের দিকে ঠেলে দিয়ে নিজেরা ফায়দা লুঠার। আওয়ামী লীগ যদি ক্ষমতা হারায় তখন হয়তো বিএনপি বা অন্য দল ক্ষমতায় আসতে পারে। নতুন সরকার যখন বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ এর দিকে যাবে তখন আওয়ামী লীগ বলবে সরকার দেশ পরিচালনায় পুরোপুরি ব্যর্থ। জনগণকে বোকা বানিয়ে সরকার পতনের আন্দোলন শুরু করবে। হয় সরকার পদত্যাগ করবে বা নতুন নির্বাচন করবে। অন্যদিকে প্রশাসনে আওয়ামী দলীয় ক্যাডার তো আছে।'

মোহাম্মদ শাহাজানের মন্তব্য, 'এখন থেকে টাকার মান পতন শুরু হয়ে গেছে। এভাবে যদি টাকার মান নিচে নামতে থাকে তাহলে অতি শিগগির দেশের অবস্থা করুন হয়ে যাবে।'

নুরুল আক্তার লিখেছেন, 'অপ্রয়োজনীয় সব আমদানি বন্ধ, মানিলন্ডরিং, সরকারি কাজে বিদেশ ভ্রমণ এসব পরিহার করা জরুরি।'

মোহাম্মদ জামাল লিখেছেন, 'শ্রীলঙ্কার চেয়ে বড় অঘটন হবে। সব কিছু মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাহিরে যাবে। অপরাধ জগৎ বড় হবে।'

ফকরুল ইসলাম লিখেছেন, 'মজার বিষয় শ্রীলঙ্কার মাথাপিছু আয় আমাদের চেয়ে অনেক বেশিই ছিল। ইতোমধ্যে সরকার বিলাসবহুল দ্রব্য আমদানিতে কঠোর হয়েছে। কিন্তু অনেক সময় বুদ্ধিজীবীরাই সরকারকে সঠিক চিত্র দেখায় না।'

রনিম চৌধুরীর ভাষ্য, 'অর্থনীতির স্টুডেন্ট হিসেবে বলতে পারি আমাদের বাঙালি জাতির কপালে খুব খারাপ কিছু আছে। যে পরিমাণ টাকা পাচার হয় এবং যেভাবে আমরা আমদানি নির্ভরতা বাড়াচ্ছি তাতে করে দেশে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাবে। মানুষের হাতে টাকা থাকবে না। তখন মৌলিক চাহিদা পূরণের নিমিত্তে একজন আরেকজনের উপর জুলুম করবে। মারামারি, হানাহানি বেড়ে যাবে। আর তখন বর্তমান সরকার পাওয়ারে থাকবে না। নতুন কেউ আসবে কিন্তু পরিস্থিতি সামলাতে হিমশিম খাবে। তাই এখন থেকে সবাই প্রস্তুতি নেন।'

মো. ইদ্রিস আলীর মতে, 'কাজ হাতে নিতে নিষেধ নেই কিন্তু কাজ শুরু করার আগে যে কাণ্ডগুলো ঘটেছে তা কি আজও কোনো সুরাহা হয়েছে? যেমন বালিশ, বিছানার চাদর এবং অন্যান্য জিনিসপত্র কিনতে অনিয়ম হয়েছিল। যতো ভালো কাজ করুন না কেন আগে দুর্নীতি বন্ধ করুন। তবেই দেশ আরও উন্নতির পথে এগিয়ে যাবে। আর যদি কাজের শুরু না করে কানাডা আমেরিকা অন্যান্য দেশে টাকা পাচার করি তাহলে ভালো কাজ কীভাবে হবে। শুধু ঋণের বোঝা বইতে হবে এ দেশের হতভাগ্য জনগণের। আসুন সবাই মিলে দুর্নীতি অনিয়ম বন্ধ করুন সোনার বাংলা গড়ে তুলুন।'

গোলাম মারুফ লিখেছেন, 'মাথাপিছু আয় বেড়েছে। অবশ্যই ভালো। আমাদের শ্রেণী বৈষম্য দূর করে, সবাইকে রাষ্ট্রীয় সুবিধার আওতায় আনতে হবে। নয়তো নিম্নমধ্যবিত্তের সংখ্যা বাড়বে, আর কিছু লোক আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হতেই থাকবে। অপ্রয়োজনীয় ব্যয় কমাতে হবে। যেকোনো মেগাপ্রজেক্ট করার আগে তার আয়-ব্যয় ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা মাথায় রাখতে হবে।'

মুসা আমান লিখেছেন, 'গতকালের একটা টিভি নিউজে দেখেছি, দেশের রিজার্ভের টাকা ফুরিয়ে আসছে। টাকার বিপরীতে ডলারের মান আরও বেড়েছে। পাশাপাশি আমদানির তুলনায় রপ্তানির বিশাল বাণিজ্য ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। এগুলো আমাদের জন্যে বিপদ সংকেতই বটে।'

আলম মোর্শেদ লিখেছেন, 'আলোচনা সমালোচনা করলেই দেশ বিরোধী ও বিরোধীদলের এজেন্ট হয়ে যায়! বরং খাঁটি দেশপ্রেমিকরাই বারংবার প্রশাসনের ভুলগুলো দুর্নীতি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়! দেশ যেন গভীর সঙ্কটে না পড়ে!'

ইকবাল বাহার চৌধুরীরে ভাষ্য, 'দেশের স্বার্থ নিয়ে বাস্তব কথা বললে এখন রাজাকার, বিরোধীদল, রাষ্ট্রদ্রোহী, সরকারের নিন্দাকারী ভাবে। আসলে তারা যা করে তা ভালোই বলতে হবে তোতা পাখির মতো।'

ইসমাইল হোসেন আজীমের মতে, 'অনেক উচ্চাভিলাষী প্রকল্প আছে। এসব প্রকল্প থেকে লাভের পরিমাণ খুবই নগণ্য হওয়ার সম্ভাবনা। তাতে এতো পরিমাণ ব্যয়ের ভারে দেশ দেউলিয়া হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। আর রাজনৈতিক ব্যক্তি এবং আমলাদের দুর্নীতি কঠোর হস্তে দমন করতে হবে। দুদককে প্রকৃত ক্ষমতা দিতে হবে। আর তাদের নিজেদের সরিষার ভূত তাড়াতে হবে।'

মো. জহরুল হক জেফার লিখেছেন, 'এতদিন ধরে চলা উন্নয়ন প্রকল্পগুলো কি সত্যিকার অর্থে উন্নয়ন ছিল নাকি উন্নয়নের নামে লুটপাট ছিল তার ফলাফল খুব শিগগির দেখবে গোটা জাতি।'

নাজিম খানের মন্তব্য, 'দুর্নীতি হ্রাস, টাকা পাচার রোধ, বিলাসিতা পরিহার, প্রধানমন্ত্রীর বিদেশ সফরে বহর ছোট, খিচুড়ি রান্নার অভিজ্ঞতার জন্য বিদেশ সফর বাদ, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, বিদেশী শ্রমিক ও গার্মেন্টসের শ্রমিকদের মূল্যায়ন, কৃষিতে ভর্তুকি প্রদান ও ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করা এবং চলমান লুটপাট বন্ধ করতে পারলে শ্রীলঙ্কার পরিণতি হবার সম্ভাবনা শূন্য।'

আশিক ওয়াশিক লিখেছেন, '২০২১ সালের আগস্ট মাসে বাংলাদেশের বৈদেশিক রিজার্ভ ছিল ৪৮ বিলিয়ন ডলার। ২০২২ সালের মে মাসে তা কমে ৪১ বিলিয়নে নেমে এসেছে। নয় মাসে ৭ বিলিয়ন ডলার কমে গেছে! তাও আপনাদের কোনো হুশ হচ্ছে না কেন তাই বুঝতেছি না। মন্ত্রীরা করোনাভাইরাসের শুরুর অবস্থায় যেমন আহাম্মকি কথা বলেছিল, এখনো ঠিক তাই করছে।'

শাহ মোহাম্মদ শরীফের মন্তব্য, 'বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা যা তাতে শ্রীলঙ্কার মত অবস্থায় হয়তো পড়বো না আমরা। তবে এর কাছাকাছি একটা অবস্থা যে আমাদের হতে যাচ্ছে তা বর্তমান প্রতিটি জিনিসের দামবৃদ্ধি, দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারের অসহায়ত্ব, ব্যাপক দুর্নীতি ও লুটপাট, ঋণে তৈরি বিশাল মেগা প্রজেক্ট ইত্যাদি দেখে আঁচ করা যায়। তার উপর আছে বর্তমান সরকারের উপর এত উন্নয়নের পরেও ব্যাপক জন-অসন্তোষ।'

Comments

The Daily Star  | English

Govt to review media outlets owned by AL ministers, MPs

The adviser made these remarks during a stakeholders' meeting of the Department of Films and Publications

1h ago