‘বারবার সিদ্ধান্ত বদলায়, আমাদের ভোগান্তি বাড়ে’

মানিকগঞ্জে পোশাকশ্রমিকদের বিক্ষোভ। ছবি: স্টার

'আমরা যাইতে না পারলে, কোনো গাড়িই যাইতে দেবো না' এই কথাগুলো বলেই আজ শনিবার বিকেলে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাট এলাকায় সব ধরনের গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেয় পোশাকশ্রমিকরা। গণপরিবহনে ঢাকায় ফেরার দাবিতেই তারা এই বিক্ষোভ করেন।

আজ বেলা সাড়ে তিনটা থেকে পাঁচটা পর্যন্ত সেখানে দফায় দফায় বিক্ষোভ করে তারা। একপর্যায়ে মানিকগঞ্জ পুলিশ লাইনস থেকে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয় ঘাট এলাকায়। পরে তাদের বিভিন্ন গাড়িতে পাটুরিয়া ঘাট থেকে তাদের নিজ নিজ গন্তব্যে পাঠানো শুরু হলে তারা অবস্থান কর্মসূচি থেকে সড়ে যান।

আজ বিকেলে পাটুরিয়া ঘাটে কথা হয় রাজবাড়ির গোয়ালন্দ উপজেলার কাইমুদ্দিন পরামানিক পাড়ার রুমা আক্তারের সঙ্গে। তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি গাজীপুর জেলায় একটি পোশাক কারখানায় কাজ করি। কারখানা খুলবে আগামীকাল। আমি পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বাড়ি এসেছিলাম। আজ যদি ফিরতে না পারি, তাহলে তো কাল কারখানায় যেতে পারব না। পাটুরিয়া ঘাটে গাড়ির জন্যে দাঁড়িয়ে আছি প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে। কীভাবে যাব, তাই ভাবছি।'

'সরকারের পক্ষ থেকে এভাবে বারবার সিদ্ধান্ত বদলানো হয়, আর আমাদের ভোগান্তি বাড়তে থাকে', বলেন রুমা।

একই সময়ে মাগুরার কাটাখালি এলাকার রুবি আক্তার বলেন, 'আমি ঢাকার মিরপুরের একটি পোশাক কারখানায় কাজ করি। অনেক কষ্ট করে বিভিন্ন গাড়িতে, ফেরিতে চড়ে পাটুরিয়ায় এসেছি। এখানে কোনো গাড়ি নেই। খোলা ট্রাকে, পিকআপ ভ্যানে, মোটরসাইকেলে অনেক ভাড়া চায়। এত টাকা তো আমার কাছে নেই '

এর আগে, আজ সকাল থেকেই পাটুরিয়া ঘাটে দেখা যায় ঢাকামুখী মানুষের ঢল। এই পথের অধিকাংশ যাত্রীই পোশাক কারখানার শ্রমিক। যাত্রী ও ঘাট সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগামীকাল পোশাক কারখানা খোলার ঘোষণার পর থেকেই কর্মস্থলে ফিরছে হাজারো নারী-পুরুষ। দেশের দক্ষিণ অঞ্চলের ২১টি জেলার মানুষ রাজবাড়ির দৌলতদিয়া ঘাট থেকে ফেরিতে পদ্মা নদী পাড়ি দিয়ে আসছেন পাটুরিয়া ঘাটে। সেখান থেকে খোলা ট্রাক, পিকআপ ভ্যান, মোটরসাইকেল, রিকশা, ভ্যান, প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, অটোরিকশায় চড়ে পাঁচ থেকে ছয় গুণ বেশি ভাড়া দিয়ে যেতে হচ্ছে তাদের।

মানিকগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. গোলাম আজাদ খান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আজ সকাল থেকেই পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া এবং আরিচা-কাজিরহাট নৌপথ দিয়ে মানিকগঞ্জের ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে ঢাকায় যাচ্ছে দেশের দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলের ২১টি জেলার হাজারো নারী-পুরুষ। কঠোর লকডাউনে বিধিনিষেধ থাকায় আমরা মানিকগঞ্জ অংশে সড়ক-মহাসড়ক ও দুটি ফেরিঘাটেই চেকপোস্ট বসিয়েছি। গাড়ি জব্দ করা হয়েছে। মামলাও হয়েছে। কিন্তু, মানুষ যেভাবে যাচ্ছে, তাদের আটকানো সম্ভব হচ্ছে না।'

'যাত্রীদের অধিকাংশই পোশাকশ্রমিক। আজ তারা ফিরতে না পারলে কাল কারখানায়ও যেতে পারবেন না। তাদের চাকরি হারানোর ভয় রয়েছে। এ ছাড়া, তাদের সঙ্গে রয়েছে শিশুসহ পরিবারের অন্যান্য সদস্য। এটা তো একটি মানবিক বিষয়। এ কারণে বিকেলে পর থেকে আর বেশি কড়াকড়ি করিনি। তারা যেভাবে পারছে, সেভাবেই যাচ্ছে, বলেন তিনি।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন সংস্থার (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপ-মহাব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) মো. জিল্লুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী জরুরি পণ্যবাহী পরিবহন, রোগী ও মরদেহবাহী গাড়ি পার করার জন্যে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌপথে ১৬টির মধ্যে আটটি ফেরি চালু রাখা হয়েছে। এ ছাড়া, আরিচা-কাজিরহাট নৌপথে চালু রয়েছে তিনটি ফেরি। ফেরিতে যখন জরুরি পণ্যবাহী পরিবহন উঠছে, তখন ব্যক্তিগত গাড়ি ও যাত্রীরা জোর করেই উঠে পড়ছেন। তাদের কোনোভাবেই আটকানো যাচ্ছে না।'

Comments

The Daily Star  | English

Bangladesh continues to perform poorly in budget transparency

Bangladesh has continued to showcase a weak performance in the open budget rankings among its South Asian peers, reflecting a lack of transparency and accountability in the formulation and implementation of fiscal measures.

16h ago