বিছানার চাদর ও বালিশের কাভার কেনার প্রক্রিয়ায় আইজিপি যাবেন জার্মানি

স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের জন্য জার্মানি থেকে বালিশের ডাবল কাভারসহ ১ লাখ বিছানার চাদর কেনা হচ্ছে। আর এসব পণ্যের মান পরীক্ষা করতে পুলিশ প্রধান ড. বেনজীর আহমেদ জার্মানি যাচ্ছেন, গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।

এ বিষয়ে গত ৭ ফেব্রুয়ারি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মাহবুবুল আলম মজুমদারের সই করা এক চিঠিতে বলা হয়েছে, চাদর ও বালিশের কাভার শিপমেন্টের আগেই মান পরীক্ষা করতে পুলিশের আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদের জার্মানি যাওয়ার কথা রয়েছে চলতি মাসে। তার সঙ্গে যাবেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের উপসচিব মো. ফিরোজ উদ্দিন খলিফা ও পুলিশ সদর দপ্তরের এসপি ও আইজিপির স্টাফ অফিসার মোহাম্মদ মাসুদ আলম।

জার্মানি থেকে বিছানার চাদর ও বালিশের কাভার কেনার বিষয়ে জানতে চাইলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পাবলিক প্রকিউরমেন্ট সম্পর্কিত বিদেশ সফরগুলো প্রায়শই বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে বৈধতা দেওয়া হয়। কিন্তু বিছানার চাদর ও বালিশের কাভারের ফ্যাক্টরি অ্যাকসেপ্টেন্স টেস্টের (এফএটি) জন্য পুলিশ প্রধানের নেতৃত্বে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের একটি দলের এই সফর হাস্যকর এবং প্রকৃতপক্ষে উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দলের জন্যই বিব্রতকর।'

'ধরেই নিলাম শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগতভাবে পণ্যের মান যাচাই করা দরকার। কিন্তু এর জন্য কেন এক সপ্তাহের বেশি সময়ের জন্য সরকারি সফরে যেতে হবে? এটা অন্যভাবে যেমন কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে যাচাই করা যায়।'

তিনি আরও বলেন, 'এখানে স্বার্থের দ্বন্দ্বের বিষয়টিও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বলা হচ্ছে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান সফরের খরচ বহন করবে, যা সরকারি কোনো জিনিসপত্র কেনার নিয়মের পরিপন্থী। আরেকটি বিভ্রান্তিকর প্রশ্ন হলো, জার্মানির মতো একটি দেশ থেকে এই জাতীয় ভোগ্যপণ্য সংগ্রহ করার সিদ্ধান্তটি কেন নেওয়া হলো? তাছাড়া এসব পণ্য কি আমাদের দেশীয় সরবরাহকারীদের কাছে খোঁজা হয়েছিল, যারা আন্তর্জাতিক মান পূরণে খুব ভালোভাবে সক্ষম।'

পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজি) ড. বেনজীর আহমেদ। ছবি: সংগৃহীত

বিছানার চাদর ও বালিশের কাভারের মান পরীক্ষা করতে আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদের জার্মানি যাওয়ার বিষয়ে গণ অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক রেজা কিবরিয়া দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বাংলাদেশে বিছানার চাদর ও বালিশের কাভার পাওয়া যায় এই খবর সম্ভবত আইজিপি পাননি। আরেকটি বিষয় হলো, এই ধরনের কাজের জন্যেই বর্তমান আইজিপি উপযোগী। ভবিষ্যতে বিছানার চাদর পরীক্ষা করার জন্য উনাকে একটা পদ দেওয়া যেতে পারে।'

রেজা কিবরিয়া আরও বলেন, 'আমাদের দেশে বানানো চাদর পুলিশের গায়ে লাগলে সম্ভবত কষ্ট হয়। তাদের আরও উচ্চমানের চাদর দরকার। পুলিশের কাজ ঠিকমতো করার জন্য দামি চাদর কেনা দরকার। পুলিশের যে টাকা পয়সা, যে আয়, তারা যে দুর্নীতি করে, তাদের তো সাধারণ চাদরে ঘুমাবার কোনো কারণ নেই। তারা তো বিলাসিতা করতেই পারে। অনেক ধনী মানুষরা অন্যভাবে চলাফেরা করে এটা নিশ্চয়ই সবার জানা উচিত। তারা তো অন্য লেভেলে চলে গেছে, সুতরাং জার্মান চাদর ছাড়া  চলে না।'

দেশে হোম টেক্সটাইল নিয়ে কাজ করেন নোমান গ্রুপ। পুলিশের ব্যবহারযোগ্য বিছানার চাদর ও বালিশের কাভার দেশে তৈরি হয় কি না জানতে নোমান গ্রুপের উচ্চ পর্যায়ের এক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি।

এ বিষয়ে কথা বলতে পুলিশের ৩ জন সাবেক আইজিপির সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। একজন ফোন রিসিভ করেননি। একজন এই বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। আরেকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, 'এসব পণ্য বাংলাদেশেই কেনা সম্ভব।' এর বেশি কিছু বলতে তিনি বলতে রাজি হননি।

বালিশের কাভার ও বিছানার চাদর কেনার বিষয়টি জানতে পুলিশ সদর দপ্তরের একজন এআইজির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনিও কথা বলতে রাজি হননি।

পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত আইজিপি মোখলেসুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, 'শুধু তো বিছানার চাদর আর বালিশের কাভারের জন্য দেশের বাইরে যাওয়ার কথা না। এর সঙ্গে আরও কিছু বিষয় থাকতে পারে। বিছানার চাদর আর বালিশের কাভার কেনা হলেও তা বিশেষায়িত কোনো কারণে কেনা হতে পারে। না হলে তো এমনটা হওয়ার কথা না।'

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাবেক এক অতিরিক্ত সচিবের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনিও এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।

বিষয়টি নিয়ে জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আখতার হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, 'দেখি, বিষয়টি নিয়ে আমি পুলিশের আইজিপির সঙ্গে কথা বলব। আমি এখানে নতুন এসেছি। বিষয়টি এখনো বুঝে উঠতে পারিনি।'

এরপর তিনি ফোনের লাইন কেটে দেন।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী আখতার হোসেন এ বছরের ১২ জানুয়ারি জননিরাপত্তা বিভাগে সিনিয়র সচিব পদে যোগদান করেছেন।

Comments

The Daily Star  | English
G7 statement on Israel Iran war

Sirens sounded after missiles launched from Iran, says Israeli army

Trump to decide within two weeks on possible military involvement

13h ago