বিধিনিষেধ সত্ত্বেও ২৫ কর্মকর্তার বিদেশ সফর, ভ্রমণের ধরন পরিবর্তন

ছবি: রয়টার্স ফাইল ফটো

সরকারি নিষেধাজ্ঞা পাশ কাটিয়ে ২৫ জন কর্মকর্তাকে অস্ট্রেলিয়া সফরে যাওয়ার অনুমতি দিতে ভ্রমণের ধরন পরিবর্তন করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ কমাতে বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর বন্ধের বিষয়ে গত ১২ মে পরিপত্র জারি করে সরকার।

পরিপত্রে বলা হয়, করোনা–পরবর্তী অর্থনীতি পুনরুদ্ধার ও বর্তমান বৈশ্বিক সংকটের প্রেক্ষাপটে পুনরায় আদেশ না দেওয়া পর্যন্ত এক্সপোজার ভিজিট, শিক্ষাসফর, এপিএ এবং ইনোভেশনের আওতামুক্ত ভ্রমণ ও ওয়ার্কশপ বা সেমিনারে অংশগ্রহণসহ সব ধরনের বৈদেশিক ভ্রমণ বন্ধ থাকবে। এ আদেশ উন্নয়ন বাজেট ও পরিচালন বাজেট উভয় ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের এই সফরটি যেহেতু এক্সপোজার ভিজিট হিসেবে পরিকল্পনা করা হয়েছিল, সেহেতু বিধিনিষেধের আওতায় তাদের পক্ষে এই সফরে যাওয়া সম্ভব হতো না। তাই মন্ত্রণালয় সম্প্রতি এই সফরের ক্যাটাগরি পরিবর্তন করে 'বিদেশে প্রশিক্ষণ' হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে।

মূলত ২০২০ সালের মার্চ মাসের জন্য নির্ধারিত এক্সপোজার সফরটি কোভিড বিধিনিষেধের কারণে স্থগিত করা হয়েছিল। মূল আদেশে এই সফরের জন্য যে ২৬ জন কর্মকর্তার নাম উল্লেখ করা হয়েছিল তাদের মধ্যে ৭ জন অবসরে গেছেন এবং ১ জন মারা গেছেন।

চলতি বছরের ১২ জুলাই জারি করা এ সংক্রান্ত নতুন আদেশে আগের আদেশের ১৮ জন কর্মকর্তার নাম আছে। আর যে ৭ কর্মকর্তা অবসরে গেছেন তাদের বদলি হিসেবে নতুন ৭ জন কর্মকর্তার নাম যুক্ত হয়েছে। ২ আদেশেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, এই সফরটি নীতি পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনা কোর্সের (পিপিএমসি) অংশ।

সরকারি গাইডলাইনে উল্লেখ আছে, পিপিএমসির জন্য একজন কর্মকর্তাকে ৭ দিনের এক্সপোজার ভিজিটে যোগ দিতে হবে, যা দেশে-বিদেশে করা যেতে পারে।

পিপিএমসি গাইডলাইন অনুসারে, এক্সপোজার ভিজিটের উদ্দেশ্য হলো অংশগ্রহণকারীদের এমন একটি দেশের সিভিল সার্ভিস সংস্থার সংস্পর্শে আসতে হবে, যেটি উল্লেখযোগ্যভাবে বিকশিত হয়েছে। এছাড়া কেবল অতিরিক্ত সচিবরা পিপিএমসিতে অংশ নিতে পারবেন।

কিন্তু ২৫ কর্মকর্তার তালিকায় ৩ সচিবসহ ৬ জন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার নাম আছে।

তদুপরি তালিকায় পানি সম্পদ পরিকল্পনা সংস্থার (ওয়ারপো) মহাপরিচালকের নামও আছে। সফর থেকে যখন তিনি ফিরে আসবেন, তখন তার অবসরপূর্ব ছুটিতে যাওয়ার মাত্র কয়েক সপ্তাহ বাকি থাকবে।

নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব বলেন, বিদেশ সফরের বিধিনিষেধ আরোপ করায় আমাদের কিছু সহকর্মী চরম হতাশ। বিদেশ সফরে যাওয়ার পথ খুঁজছেন তারা। তাদের বোঝা উচিত যে, এই আদেশটি সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে এসেছে।

অস্ট্রেলিয়াগামী ২৫ জন কর্মকর্তাদের আগামী ২৮ আগস্ট থেকে ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার ডেকিন বিশ্ববিদ্যালয়ে 'প্রশিক্ষণে' অংশ নেওয়ার কথা।

গত বৃহস্পতিবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব কে এম আলী আজমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে, প্রশিক্ষণের জন্য বিদেশ সফরের বিষয়টি নিরুৎসাহিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এবং সংকটকালীন পরিস্থিতিতে কোনো ধরনের সফর না করার পরামর্শ দেওয়া হয়।

এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ জিয়াউল হকের ভাষ্য, পিপিএমসি সার্টিফিকেটের জন্য কর্মকর্তাদের এই সফরের দরকার ছিল। তিনি বলেন, 'এ কারণেই তারা অস্ট্রেলিয়ায় যাচ্ছে।'

এ সময় মন্ত্রণালয়ের ২০২০ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনের ব্যাপারে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়, যেখানে উল্লেখ আছে যে, ২৬ জন কর্মকর্তা ওই বছর ২০তম পিপিএমসি এক্সপোজার ভিজিটে অংশ নিয়েছিলেন। এ বিষয়ে জিয়াউল হক বলেন, 'এটা হয়তো ভুল করে উল্লেখ করা হয়েছে।'

আর এ ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব কে এম আলী আজমের ভাষ্য, 'কর্মকর্তারা প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন নিয়ে প্রশিক্ষণে অংশ নিচ্ছেন।'

তিনি আরও বলেন, 'প্রশিক্ষণের জন্য ছাড়া বাকি সব বিদেশ সফর পুরোপুরি বাতিল করা হয়েছে।'

মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতির মধ্যে বিদ্যুৎ খরচসহ অন্যান্য ক্ষেত্রে কৃচ্ছ্রসাধন বজায় রাখার জন্য সরকারি-বেসরকারি খাতের সবাইকে আহ্বান জানান।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের এই সফর সম্পর্কে জানার পর ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল, বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, 'সরকার যখন বিদেশ সফরের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করছে তখন তার কর্মকর্তারা সেটি লঙ্ঘন করছেন। এমন ঘটনা আমরা প্রায়ই দেখি। কিন্তু যখন কোনো সংকটকালীন সময়ে এমন আদেশ আসে, তখন কর্মকর্তাদের এটি আরও গুরুত্বসহকারে নেওয়া উচিত।'

Comments

The Daily Star  | English

BNP at 47: Caught between prospects and perils

The BNP has survived Sheikh Hasina’s 15-year rule, during which over a million cases were filed against its leaders and activists for trying to launch street agitations demanding elections under a non-partisan government. Thousands were jailed, including Chairperson Khaleda Zia and other top leaders.

12h ago