বিশ্রাম নেই কনস্টেবলদের

ছবি: পলাশ খান/স্টার

পুলিশ কনস্টেবল মোহাম্মদ ইকবাল (৫২) ৬ মাস আগে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগে কাজ শুরু করেন।

এই অল্প সময়ের মধ্যেই তার হাঁটুতে ব্যথা, পিঠে ব্যথা ও কানে শুনতে সমস্যা হচ্ছে। তার পেশীতে এতো বেশি ব্যথা যে, তিনি একটি রাতও ভালো করে ঘুমাতে পারেন না।

ফকিরাপুল মোড়ে দাঁড়িয়ে ইকবাল দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, তার ৮ ঘণ্টার শিফট চলাকালীন সময়ে তিনি এক মুহূর্তের জন্যও বসে বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগ পান না।

তিনি অভিযোগ করেন, 'সারাক্ষণ আমার কানে শোঁ শোঁ শব্দ হতে থাকে। আমি টিভি দেখতে পারি না। জোরে না বললে আমি শুনতেই পাই না।'

সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে ইকবাল কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে যান। চিকিৎসকরা তাকে ১ মাসের ওষুধ দিয়েছেন, যার মধ্যে রয়েছে হাঁটু ও পিঠের ব্যথা কমানোর ওষুধও।

চানখারপুল মোড়ে দায়িত্ব পালনরত ট্রাফিক কনস্টেবল খলিলুর রহমান জানান, তিনি দীর্ঘদিন ধরে শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত সমস্যায় ভুগছেন।

তিনি বলেন, 'আমার জন্য দীর্ঘ সময় মাস্ক পড়ে থাকা খুবই কঠিন। কিন্তু এখানে প্রচুর ধুলাবালি থাকায় মাস্ক খুলে রাখার উপায় নেই। সম্প্রতি আমার বুকে ব্যথাও শুরু হয়েছে।'

খলিলুর ২০১৭ সাল থেকে ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগে কাজ করছেন।

শুধু ইকবাল আর খলিলুরই নন, আরও অনেক ট্রাফিক পুলিশই এ ধরণের দুরারোগ্য ব্যাধিতে ভুগছেন।

সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ঢাকার ৮৪ শতাংশ পুলিশ কর্মকর্তা শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত রোগে ভুগছেন এবং ৬৪ শতাংশ কানে কম শুনছেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বায়ু ও শব্দ দূষণের কারণে এসব রোগে আক্রান্তদের অবস্থার আরও অবনতি হয়।

৩৬৪ জন ট্রাফিক পুলিশ কর্মকর্তার ওপর পরিচালিত এই সমীক্ষার ফলাফল ভারতের জার্নাল অব মেডিকেল সায়েন্স অ্যান্ড ক্লিনিকাল রিসার্চে প্রকাশিত হয়েছে।

ইতোমধ্যে বায়ু দূষণের ওপর পরিচালিত আরেকটি সমীক্ষায় জানা গেছে, ৪০ শতাংশেরও বেশি ট্রাফিক পুলিশ ঘুমের সমস্যায় ভোগেন। ৫৬ শতাংশেরও বেশি জানিয়েছেন, তারা সারাক্ষণ কানে একধরণের শোঁ শোঁ শব্দ শুনতে থাকেন, এমনকি ঘুমের মধ্যেও।

গবেষণায় বলা হয়েছে, প্রায় ২৮ শতাংশ পুলিশ মানসিক স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যায় ভুগছেন।

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের (আইইডিসিআর) চিকিৎসক শাকিলা ইয়াসমিন এই গবেষণাটি পরিচালনা করেছেন। তিনি জানান, এই গবেষণার সময়কাল ২০১৮ সালের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে।

কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের পুলিশ সুপার (এসপি) ডা. মোহাম্মদ ইমদাদুল হক দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, ট্রাফিক পুলিশের যে সদস্যরা চিকিৎসার জন্য আসেন, তাদের সাধারণত শ্বাসকষ্ট, ব্রঙ্কাইটিস, অ্যালার্জি, হিমোগ্লোবিন স্বল্পতা, কানে কম শোনা, প্রচণ্ড মাথা ব্যথা, পেটে ব্যথা, চোখে জ্বালাপোড়া, লিভার ড্যামেজ, জয়েন্ট পেইন ও হৃদযন্ত্রের সমস্যা থাকে।

তিনি বলেন, 'আমাদের কাছে যেসব ওষুধ থাকে, সেগুলো আমরা তাদেরকে আউটডোর থেকে বিনামূল্যে দিয়ে থাকি। আমরা হাসপাতাল থেকে সবচেয়ে সেরা চিকিৎসা দেওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করি।'

বিভিন্ন পরীক্ষা থেকে ঢাকার বাতাসে সীসা, সালফার ডাইঅক্সাইড, নাইট্রোজেন অক্সাইড, হাইড্রোকার্বন, ওজোন গ্যাস, কার্বন মনোক্সাইড এবং অন্যান্য ক্ষতিকারক রাসায়নিক উপকরণ ও বিভিন্ন ধরণের কণিকার অস্তিত্ব পাওয়া গেছে।

জাতীয় বক্ষব্যাধি ইন্সটিটিউট ও হাসপাতালের (এনআইডিসিএইচ) সহকারী অধ্যাপক ডা. রেজাউল হক দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, এক গবেষণায় তারা জানতে পেরেছেন, ঢাকার বাতাসের গুণগত মান বিশ্বের অন্য যেকোনো শহরের চেয়ে খারাপ।

তিনি বলেন, 'যদি এই পরিবেশে কেউ দীর্ঘ সময় কাজ করে, তাহলে স্বভাবতই তার মধ্যে শ্বাসকষ্ট, ব্রংকাইটিস ও ভয়াবহ পর্যায়ের ফুসফুসের প্রদাহ দেখা দেবে।'

প্রতিকারের উপায় জানতে চাইলে ডা. রেজাউল ২৪ ঘণ্টাই মাস্ক পড়ে থাকার পরামর্শ দেন।

তিনি আরও জানান, ট্রাফিক পুলিশের সদস্যদের মধ্যে কারো কোনো ধরণের রোগের লক্ষণ দেখা দিলে তাদের উচিৎ শিগগির চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করা। তিনি যোগ করেন, তাদের উচিৎ প্রতি ৬ মাস পর পর শারীরিক পরীক্ষা করানো।

ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলাম জানান, ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা শব্দ ও বায়ু দূষণের মধ্যে ধারাবাহিকভাবে কাজ করার কারণে বিভিন্ন ধরণের রোগে ভোগেন।

তবে তিনি জানান, এটি তাদের নিয়মিত দায়িত্বেরই অংশ।

ডিএমপি কমিশনার আরও বলেন, 'আমরা এখন পুলিশ কর্মকর্তাদের বিভিন্ন ধরণের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ব্রিফিং করছি। যেমন মাস্ক পড়ে থাকা, কানে তুলা দিয়ে রাখা ইত্যাদি।'

তিনি বলেন, 'কিছু মানুষ জোরে হর্ন বাজায় এবং কোনো কারণ ছাড়াই কার্বন ডাইঅক্সাইড ছড়ায়। আমরা এ সমস্যা কমিয়ে আনার চেষ্টা করছি। এ ছাড়াও, আমরা সিটি করপোরেশনের সঙ্গে আলোচনা করছি যাতে রাস্তায় নিয়মিত পানি ছিটিয়ে ধূলার পরিমাণ কমানো হয়।'

অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান

Comments

The Daily Star  | English
charges against Sheikh Hasina at ICT

What are the five charges against Hasina at ICT?

Former home minister Kamal and ex-IGP Mamun have also been accused

1h ago