বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা আরও অন্তত ২ দিন

মাসের শুরুতেই আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, জুলাইয়ে সামগ্রিকভাবে দেশে স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে। আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে বৃষ্টিপাতের কারণে তাপমাত্রা কম থাকার কথা, তবে পূর্বাভাস বলছে ভিন্ন কথা; এ মাসে দিনের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা বেশি থাকার সম্ভাবনাই বেশি।
hot-weather_14jul22.jpg
তীব্র গরমে অতিষ্ঠ হয়ে রাজধানীর চন্দ্রিমা উদ্যান লাগোয়া লেকে গোসল করছেন দুই যুবক | ছবি: পলাশ খান/স্টার

মাসের শুরুতেই আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, জুলাইয়ে সামগ্রিকভাবে দেশে স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে। আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে বৃষ্টিপাতের কারণে তাপমাত্রা কম থাকার কথা, তবে পূর্বাভাস বলছে ভিন্ন কথা; এ মাসে দিনের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা বেশি থাকার সম্ভাবনাই বেশি। তবে রাতের তাপমাত্রা স্বাভাবিক থাকতে পারে।

কয়েক দিন ধরে দেশে বিচ্ছিন্নভাবে মৃদু (৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস) তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। আজ বৃহস্পতিবার সকালে ২৪ ঘণ্টার পূর্বভাসে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, ঢাকা, টাঙ্গাইল, রংপুর, দিনাজপুর ও নীলফামারী জেলা এবং রাজশাহী ও সিলেট বিভাগের উপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।

আবহওয়াবিদরা মনে করছেন, এই অবস্থা আরও অন্তত ২ দিন অব্যাহত থাকতে পারে। অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আফরোজা সুলতানা দুপুরে দ্য ডেইলি স্টারকে টেলিফোনে বলেন, ঢাকায় আরও দুএক দিন পরে বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। অন্যান্য জায়গায় বিচ্ছিন্নভাবে সামান্য বৃষ্টি হচ্ছে। মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকলে পর্যাপ্ত বৃষ্টি হতো, গরম কম থাকতো।

আবহাওয়া বার্তা দেওয়া সংস্থা 'আকুওয়েদার' জানিয়েছে, আগামীকাল বাংলাদেশে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এর পরে ২২ জুলাই পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের তেমন সম্ভবনা নেই।

সকালের পূর্বাভাস অনুযায়ী, উড়িষ্যা উপকূল ও এর পাশের এলাকায় অবস্থানরত সুস্পষ্ট লঘুচাপটি একই জায়গায় অবস্থান করছে। এর একটি বর্ধিতাংশ পূর্বমধ্য বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমি বায়ুর অক্ষ রাজস্থান, মধ্য প্রদেশ, উত্তর প্রদেশ, বিহার, সুস্পষ্ট লঘুচাপের কেন্দ্রস্থল, গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল হয়ে উত্তর-পূর্ব দিকে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের উপর মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরের অন্যত্র মাঝারি ধরনের সক্রিয় রয়েছে।

আফরোজা সুলতানা বলেন, সুস্পষ্ট লঘুচাপটি ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়ছে। এর আগে ধারণা করা হয়েছিল, সুস্পষ্ট লঘুচাপের প্রভাবে রংপুর, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং ঢাকা, ময়মনসিংহ ও রাজশাহী বিভাগের দুএক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়া বয়ে যেতে পারে। সেই সঙ্গে হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। লঘুচাপটি দুর্বল হয়ে গেলে এর প্রভাবে বাংলাদেশে তেমন পড়বে না।

আবহাওয়া অধিদপ্তর মনে করছে, জুলাই মাসে বঙ্গোপসাগরে একটি বা দুটি বর্ষাকালীন লঘুচাপের সৃষ্টি হতে পারে, যার মধ্যে একটি মৌসুমি নিম্নচাপে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। দেশের উত্তর, উত্তর-পশ্চিম ও মধ্যাঞ্চলে ১ বা ২ দিন মাঝারি ধরনের বজ্রঝড় হতে পারে। এ ছাড়া সারা দেশে ২ থেকে ৩ দিন হালকা বজ্রঝড় হতে পারে।

জুন মাসে সারা দেশে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল স্বাভাবিক।

বৃষ্টিপাতের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সিলেট, ময়মনসিংহ ও রংপুর বিভাগে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। ঢাকা, রাজশাহী, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। তবে চট্টগ্রাম বিভাগে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হয়েছে।

গত ৩১ মে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু (বর্ষা) টেকনাফ উপকূলে পৌঁছে। ১ জুন এটি আরও এগিয়ে কক্সবাজার উপকূল পর্যন্ত পৌঁছে এবং ২ জুন চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে বিস্তার লাভ করে। সারা দেশে বিস্তার লাভ করে ৩ জুন।

সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে ১৬ থেকে ১৯ জুন সিলেট, ময়মনসিংহ, রংপুর ও চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণ হয়। ১৮ জুন সিলেটে দৈনিক সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত ৩০৪ মিলিমিটার রেকর্ড করা হয়। পশ্চিমা লঘুচাপের সঙ্গে পূবালী বায়ু প্রবাহের সংযোগ ঘটায় ২ ও ৯ জুন সারা দেশে বিচ্ছিন্নভাবে প্রবল বজ্রপাত ও অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টিপাত হয়েছে। ৯ জুন ঢাকায় বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৫৬ কিলোমিটার।

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের পশ্চিমাঞ্চলীয় এলাকায় তাপীয় লঘুচাপ অবস্থান করায় ৭-৮ এবং ১২-১৪ খুলনা ও রাজশাহী বিভাগে বিচ্ছিন্নভাবে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যায়। ১৩ জুন চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৭ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়।

জুন মাসে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে শূন্য দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা শূন্য দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল।

Comments