বেড়িবাঁধের ঢাল কেটে মাছের ঘের, ঝুঁকিতে ২৫০ হেক্টর কৃষিজমি

বাঁধের ঢাল লাগোয়া মাটি কেটে মাছের ঘের তৈরি করায় জোয়ারের সময় আগুনমুখা নদীর পানি বৃদ্ধি পেলেই ঢেউয়ের আঘাতে বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ছবি: স্টার

পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালীতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধের ঢাল ঘেঁষে তৈরি করা হয়েছে মাছের ঘের। এতে উপজেলার ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নের কোড়ালিয়া গ্রামের ২৫০ হেক্টর কৃষিজমি ঝুঁকিতে পড়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

পাউবো কলাপাড়া কার্যালয় সূত্র জানায়, প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে ইউনিয়নকে রক্ষা করতে ১৯৯১-৯২ অর্থবছরে আগুনমুখা নদীর তীরে ২৪ দশমিক ৬৫ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়। ২০০৭ সালে ঘূর্ণিঝড় সিডরসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে ছোটবাইশদিয়াকে রক্ষা করে এই বেড়িবাঁধ।

বেড়িবাঁধ নির্মাণের কারণে ইউনিয়নের সরকারি 'ডাঙ্গার খালের' কোড়ালিয়া এলাকায় প্রবেশমুখ বন্ধ হয়ে যায়।

চলতি বছর স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী বেড়িবাঁধ ঘেঁষে খালের মুখসহ বিশাল এলাকাজুড়ে মাটি কাটার মেশিন দিয়ে মাটি কেটে ঘের বানিয়ে মাছ চাষ শুরু করেন।

পাউবোর রাঙ্গাবালী উপজেলার দায়িত্বে থাকা কলাপাড়া কার্যালয়ের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী শওকত ইকবাল মেহরাজ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নের বেড়িবাঁধটি টেকসই বাঁধ। কিন্তু যেভাবে বাঁধের ঢাল ঘেঁষে মাটি কেটে মাছের ঘের করা হয়েছে, তাতে বাঁধটি এখন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। বেড়িবাঁধের নদীর তীরবর্তী ৭০ মিটারের মধ্যে মাটি কেটে গর্ত করা যাবে না। কিন্তু বেড়িবাঁধ লাগোয়া মাটি কেটে যেভাবে ঘের তৈরি করা হয়েছে তা বেআইনি।'

স্থানীয়রা জানান, মাহাবুব মীর ও তার চাচাতো ভাই ফেরদৌস মীরসহ এলাকার কয়েকজন প্রভাবশালী এই ঘেরটি তৈরি করেছেন। বাঁধটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়লেও সাধারণ মানুষ তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সাহস পায় না। বাঁধের ঢাল লাগোয়া মাটি কেটে মাছের ঘের তৈরি করায় জোয়ারের সময় আগুনমুখা নদীর পানি বৃদ্ধি পেলেই ঢেউয়ের আঘাতে বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বাঁধ ভেঙে গেলে লবণ পানিতে ফসলি খেত ডুবে যাবে।

ছোটবাইশদিয়া ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. মামুন হোসেন ডেইলি স্টারকে জানান, কোড়ালিয়া গ্রামের বেড়িবাঁধ ভেঙে গেলে লবণ পানি ঢুকে গ্রামের অন্তত ২৫০ হেক্টর কৃষি জমি প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা আছে। এতে ফসল উৎপাদন ব্যাহত হবে।

রাঙ্গাবালী ভূমি অফিসের ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে জানান, কোড়ালিয়া গ্রামের বেড়িবাঁধ লাগোয়া ঘের তৈরির সময় সরকারি খাল দখল করা হয়েছে।

তিনি জানান, দখলদারদের এ বিষয়ে নিষেধ করা হয়েছিল এবং তাদের কাগজপত্র নিয়ে ভূমি অফিসে যেতে বলা হয়েছিল। কিন্তু তারা যাননি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাহাবুব মীর বেড়িবাঁধ লাগোয়া জমি তাদের রেকর্ডের সম্পত্তি বলে দাবি করেন।

ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, 'সেখানে কিছু সরকারি জমিও আছে। ওই জমি বন্দোবস্ত পেতে ভূমি অফিসে আবেদন করা আছে।'

বাঁধের ঢালে মাটি কেটে ঘের করা যাবে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'তা আমি জানি না।'

এ বিষয়ে ছোটবাইশদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান এ বি এম আবদুল মন্নান হাওলাদার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বিষয়টি শুনেছি। তবে এভাবে বাঁধ ঘেঁষে ঘের করা ঠিক হয়নি। এ ব্যাপারে পাউবো ও ভূমি অফিস থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া উচিৎ বলে আমি মনে করি।'

যোগাযোগ করা হলে পাউবো কলাপাড়ার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফ হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'দুর্যোগে মানুষের জানমাল, সম্পদ রক্ষা করে বেড়িবাঁধ। বেড়িবাঁধ লাগোয়া মাছের ঘের তৈরি করার কোনো সুযোগ নেই। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।'

Comments

The Daily Star  | English

Private sector sidelined in tariff talks

At a Star roundtable, industry leaders, trade experts slam govt’s handling of negotiations with US

9h ago