ভাঙা হচ্ছে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৮ ঘরের মেঝে

মুন্সিগঞ্জের টংগিবাড়ী উপজেলার নয়শংকর গ্রামের আশ্রয়ণ প্রকল্পের আটটি ঘরের মেঝে ভেঙে ফেলা হচ্ছে। এসব ঘর তৈরির যাবতীয় কাজই শেষ হয়েছিল। এমনকি রঙ করার কাজও শেষ। তবে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী, মেঝেতে তিন ইঞ্চি ইট দেওয়ার কথা থাকলেও তা করা হয়নি। তাই মুজিব জন্মশতবর্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরগুলোতে উঠতে পারছেন না উপকারভোগীরা।
সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ইট না দেওয়ায় মুন্সিগঞ্জের টংগিবাড়ী উপজেলার নয়শংকর গ্রামের আশ্রয়ণ প্রকল্পের আটটি ঘরের মেঝে ভেঙে ফেলা হচ্ছে। ছবি: সাজ্জাদ হোসেন/ স্টার

মুন্সিগঞ্জের টংগিবাড়ী উপজেলার নয়শংকর গ্রামের আশ্রয়ণ প্রকল্পের আটটি ঘরের মেঝে ভেঙে ফেলা হচ্ছে। এসব ঘর তৈরির যাবতীয় কাজই শেষ হয়েছিল। এমনকি রঙ করার কাজও শেষ। তবে সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী, মেঝেতে তিন ইঞ্চি ইট দেওয়ার কথা থাকলেও তা করা হয়নি। তাই মুজিব জন্মশতবর্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরগুলোতে উঠতে পারছেন না উপকারভোগীরা।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, এ ত্রুটি ধরা পড়ে জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে। চলতি বছরের মার্চ মাস থেকে আশ্রয়ণ প্রকম্প-২ এর আওতায় ঘর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। প্রথম যারা নির্মাণ কাজ শুরু করেছিলেন সেসব শ্রমিকরা নেই। নতুন শ্রমিক নিয়োগ দিয়ে কাজ সম্পন্ন করছেন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান। তবে, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, আগামী ১৫ জুলাই উপকারভোগীদের এসব ঘর বুঝিয়ে দেওয়া হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলার একজন প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জানান, প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর তৈরিতে মেঝেতে ৩ ইঞ্চি ইটের সলিং থাকার কথা ছিল। আর এক লাখ ৯০ হাজার টাকা বরাদ্দ ছিল। বাড়ি নির্মাণ শেষ করতে কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই। তবে যারা নতুন মাটি ভরাট করে তৈরি করেছে তাদের দেরি করতে বলা হয়েছে। আর এ উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা হিসাবে দায়িত্ব পালন করছিলেন যিনি তাকে সদরের ঘর নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

ঘর বরাদ্দ পাওয়া টংগিবাড়ী উপজেলার কামারখাড়া ইউনিয়নের ধোপড়া পাশা গ্রামের শ্রী সমর দাসের স্ত্রী সুমিত্রা রানী দাস জানান, ঘরের মেঝে ভাঙা হচ্ছে। সেখানে নতুন করে ঢালাইয়ের কাজ হবে। কয়েকদিন আগে ইউএনও এসে দেখেন ঘরের মেঝেতে ঠিকমত ঢালাই দেওয়া হয়নি। তখন স্থানীয় চেয়ারম্যানকে নতুন করে ইট বিছিয়ে এ কাজটি করে দিতে বলেছেন।

একই উপজেলার পুরা গ্রামের বাবুল চন্দ্রের স্ত্রী মিনতি রানী জানান, ৩-৪ মাস আগে ঘর বুঝিয়ে দিলেও ঘরের কাজ সম্পন্ন হয়নি। বর্ষায় পানির উচ্চতা কোন পর্যন্ত হয় তা দেখে ঘরে থাকার জন্য বলা হয়েছিল। এরপর কয়েকদিন পর আবার যখন আসতে বলেছে কিন্তু এখন ঘরের মেঝে ভাঙার কাজ চলছে।

তিনি জানান, নিয়ম অনুযায়ী ঘরের মেঝেতে ইট বিছিয়ে ঢালাই দেওয়ার কথা। কিন্তু তা দেওয়া হয়নি। এরপর কিছুদিন আগে সরকারি কর্মকর্তারা ঢালাই ভেঙে দেখেন ইট বসানো হয়নি। তখন ইট বসিয়ে ঢালাই দেওয়ার কথা বলে গেছেন। এরপর থেকে সব ঘরের মেঝে ভেঙে নতুন করে ঢালাইয়ের কাজ চলছে। এ কাজটি সম্পন্ন হওয়ার পর ঘরে আসার জন্য বলেছেন। ইউএনও এ কাজটি চেয়ারম্যানকে করে দেওয়ার জন্য বলার পর কাজটি শুরু হয়। কিন্তু এ কাজটি কবে শেষ হবে তা কেউই জানেনা।

একই উপজেলার নয়শংকর গ্রামের করিম শেখের স্ত্রী রিনা বেগম জানান, কাজ ঠিকমতো না হলে ভেঙে পড়ার ভয় থাকে। সরকার যেভাবে ঘর নির্মাণ করে দিতে বলেছিল সে অনুযায়ী মেঝে ঢালাইয়ের কাজ হয়নি। বাড়িতে আসার রাস্তা নাই, পানি নাই কিন্তু ঘর বুঝিয়ে দিয়েছে। আবার এখন ভাঙার কাজ চলছে। এসবের মধ্যে ঘরে আসার জন্য বলা হচ্ছে। কিন্তু আমাদের কথা হচ্ছে ঘরটি ঠিকমত সম্পন্ন করা।

নির্মাণকাজে শ্রমিকদের সুপারভাইজার মো. মফিজ দেওয়ান জানান, গেত চার দিন ধরে ঘরের মেঝে ভাঙার কাজ হচ্ছে। ৮টি ঘরের বারান্দাসহ মেঝে ভেঙে তিন ইঞ্চি ইটের সলিং করা হচ্ছে। যা আগে ছিল এক ইঞ্চি। এর জন্য ২০ জন শ্রমিক কাজ করছে।

তিনি জানান, পূর্বে যিনি কাজ করেছিলেন তিনি এ কাজটি ভুল করেছেন। মাটির ওপর পলিথিন বসিয়ে সেখানে ঢালাই করে দেওয়া হয়েছিল। সেখানে সিমেন্টের পরিমাণও ছিল খুবই কম। যা ঝুঁকিপূর্ণ কাজ। এরজন্য সে ঢালাই ভেঙে ইট বসিয়ে তারপর ঢালাই করা হবে। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান এ কাজটি করা জন্য বলেছেন।

কামারখাড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য মো. মহিউদ্দিন হালদার জানান, বৃষ্টিতে মেঝেতে ফাটল দেখা দিয়েছিল। এরপর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দায়িত্ব দিয়েছেন মেঝে ভেঙে ইটের সলিং করার জন্য। পাশাপাশি রাস্তাঘাটসহ আনুষঙ্গিক বিষয়সমূহ।

টংগিবাড়ী উপজেলা প্রকৌশলী ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য মো. শাহ মোয়াজ্জেম জানান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক পরিদর্শনে এসে ছিলেন। কিছু কাজে তারতম্য দেখে এসব সংশোধন করতে বলে গিয়েছিলেন।

টংগিবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি নাহিদা পারভীন জানান, ঘরের মেঝে ভাঙার কারণ ত্রুটি নয়। কোথাও কোথাও তারতম্য হয়েছে। পুরোটাই যেন ডিজাইন অনুযায়ী হয় সেজন্য ভাঙার কাজ চলছে। ঢালাইয়ের ঘনত্ব (সিসি থিকনেস) সব ঘরে একরকম পাওয়া যায়নি। ২-১টি ঘরে ঠিক ছিল আবার ২-১টিতে নেই। তখন ডিজাইন অনুযায়ী সব ঘরের মান একই করার জন্য ভেঙে আবার করা হচ্ছে।

এ কাজের প্রাথমিক পর্যায়ে কেন এ তারতম্য বের করা যায়নি প্রতিবেদকের এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি 'কাজ চলমান' আছে বলে দাবি করেন।

Comments

The Daily Star  | English
RMG export to EU rises

Garment export to US falls 9.16% in Jan-Aug

Data released from the Office of Textiles and Apparel (OTEXA) showed the fall

2h ago