মাথাপিছু আয় ২৫০০ ডলার, তবু প্রতিবন্ধীদের ভাতা বছরে ১০ হাজার টাকা: পরিকল্পনামন্ত্রী

পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। ছবি: সংগৃহীত

দেশের মানুষের মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৫০০ মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেলেও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা ভাতা হিসেবে বছরে ১০ হাজার টাকা পান, এটি অত্যন্ত দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।

আজ সোমবার এক ওয়েবিনারে অংশ নিয়ে মন্ত্রী এ মন্তব্য করেন।

এ ছাড়া প্রাক-বাজেট আলোচনায় অর্থমন্ত্রী ও সচিবদের সঙ্গে প্রতিবন্ধীদের দাবি নিয়ে কথা বলবেন বলে প্রতিবন্ধীদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংস্থাগুলোকে আশ্বস্ত করেন পরিকল্পনামন্ত্রী।

অ্যাকসেস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন এবং দ্য ডেইলি স্টারের সঙ্গে যৌথভাবে এবং মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন ও ইউকে এইডের সহায়তায় আয়োজিত 'প্রতিবন্ধী ব্যক্তি অন্তর্ভুক্তিমূলক জাতীয় বাজেট ২০২২-২৩' শীর্ষক ওয়েবিনারে তিনি এ মন্তব্য করেন।

অ্যাকসেস বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক অ্যালবার্ট মোল্লা ওয়েবিনারে পজিশন পেপার উপস্থাপন করেন এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের বর্তমান অধিকার পরিস্থিতি তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, 'যদিও উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ এবং বাজেট বরাদ্দ মূলত নির্ভরযোগ্য পরিসংখ্যানের ওপর নির্ভর করে। বাংলাদেশে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের (পিডব্লিউডি) সংখ্যার বিষয়ে কোনো নির্ভরযোগ্য পরিসংখ্যান নেই।'

'বিভিন্ন উৎস থেকে পাওয়া তথ্যের মধ্যেও অসঙ্গতি রয়েছে, যেমন ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, তাদের সংখ্যা মোট জনসংখ্যার ১ দশমিক ৪১ শতাংশ। যেখানে ২০১০ গৃহস্থালি আয় ও ব্যয় জরিপ (এইচইআইএস) অনুসারে ৯ দশমিক ৭ শতাংশ এবং ২০১৬ সালের হিসাব অনুযায়ী ৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ', বলেন তিনি। 

তিনি আরও বলেন, 'প্রতিবন্ধীদের জন্য বরাদ্দ দেওয়া অর্থও প্রকৃত চাহিদার তুলনায় খুবই অপর্যাপ্ত।'

'উদাহরণস্বরূপ, বর্তমান সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী বাজেটের মাত্র ২ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ প্রতিবন্ধীদের জন্য বরাদ্দ, যা মোট বাজেটের মাত্র শূন্য দশমিক ৩৭ শতাংশ।'

'বাজেটে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মতামত এবং তাদের কার্যকর অংশগ্রহণ প্রতিফলিত হয় না। এ ছাড়া সব ধরনের সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রমে তারা অন্তর্ভুক্ত নয়। প্রতিবন্ধীরা কোভিড-১৯ মোকাবিলার জন্য সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন', বলে মন্তব্য করেন তিনি। 

অ্যালবার্ট তাদের প্রতিবন্ধকতার মাত্র অনুযায়ী ভাতা বৃদ্ধি এবং ২৪ ঘণ্টার সেবাদানকারীদের জন্য একটি পৃথক ভাতা এবং বিমার সুপারিশ করেন।

তিনি প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য বিশেষায়িত এবং মানসম্পন্ন সহায়ক ডিভাইসের পরামর্শ দিয়েছেন এবং সেগুলো আমদানি করার ক্ষেত্রে শুল্কমুক্ত করা উচিত বলেও মন্তব্য করেন।

'একইসঙ্গে, প্রতিটি প্রতিবন্ধী শিশুকে অবশ্যই সরকারি উপবৃত্তির আওতায় আনতে হবে এবং বৃত্তিমূলক শিক্ষা ব্যবস্থায় তাদের অন্তর্ভুক্তি বাড়াতে হবে', যোগ করেন তিনি।

প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ভাতা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে সেন্টার ফর সার্ভিসেস অ্যান্ড ইনফরমেশন অন ডিজঅ্যাবিলিটির (সিএসআইডি) নির্বাহী পরিচালক খন্দকার জহুরুল আলম বলেন, 'প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে মাসিক ৭৫০ টাকা ভাতা পায়, যা দৈনিক ২৫ টাকা।'

তিনি জানতে চান, বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় যেখানে ২ হাজার ৫০০ টাকা, সেখানে একজন মানুষ দৈনিক ২৫ টাকা দিয়ে কীভাবে বাঁচবেন? 

মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের সমন্বয়কারী নাজরানা ইয়াসমিন হীরা স্বাগত বক্তব্যে বলেন, 'প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য বরাদ্দ স্যোসাল সেফটি নেট বাজেটের মধ্যে সীমাবদ্ধ করা উচিত নয় বরং তাদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে আরও বেশি জোর দিতে হবে, যাতে তারা স্বনির্ভর হতে পারে।'

সরকারিভাবে আদালতে সাংকেতিক ভাষার দোভাষীদের ব্যবস্থা করতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন,  'একই সময়ে, আমাদের অবশ্যই তাদের জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিবেশ এবং প্রবেশাধিকারযোগ্য অবকাঠামোর তৈরিতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে।'

অ্যাকসেস টু ইনফরমেশন (এটুআই)-এর জাতীয় পরামর্শক (অ্যাক্সেসিবিলিটি) ভাস্কর ভট্টাচার্য প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের জন্য মাল্টিমিডিয়া টকিং বইয়ের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন এবং তাদের জন্য এটি সহজলভ্য করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সরকারকে অনুরোধ করেন।

ন্যাশনাল ফোরাম অব অর্গানাইজেশনস ওয়ার্কিং উইথ দ্য ডিজঅ্যালড (এনএফওডব্লিউডি)-এর সেক্রেটারি জেনারেল ডা. সেলিনা আক্তার বিশেষ বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ ও উন্নয়নে বরাদ্দের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। 

মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অবহেলার অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, 'প্রতিবন্ধী নারীদের উন্নতির জন্য মন্ত্রণালয়ের আরও বেশি কাজ করা উচিত এবং তাদের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা উচিত। যাতে তারা উদ্যোক্তা হিসেবে আবির্ভূত হতে পারে।'

আলবার্ট মোল্লার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ডেইলি স্টারের সাংবাদিক শামসুদ্দোজা সাজেন, সুইডি বাংলাদেশের সভাপতি জোওয়াহেরুল ইসলাম মামুন, বাংলাদেশ বিজনেস অ্যান্ড ডিসেবিলিটি নেটওয়ার্কের সিইও মুর্তেজা আর খান প্রমুখ।

 

Comments

The Daily Star  | English

SWISS Banks: Funds linked to Bangladesh hit 3-year high

Bangladeshi-linked funds parked in Swiss banks surged to 589.5 million Swiss francs, or about Tk 8,800 crore, in 2024, their highest level in three years, according to data released by the Swiss National Bank (SNB) yesterday.

9h ago