মির্জা আজমের বক্তব্য ‘অরুচিকর-অসংলগ্ন’

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও জামালপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য মির্জা আজম বলেছেন, 'চোরকে চোর বললে ভেচকি মারে। আজকে কয়েকটি চোর, চোর সমিতি করে। তারা থ্রেট করে আমাকে, বিবৃতি দেয়। তারা আমার এমপি পদ থেকে পদত্যাগ চায়, ভেচকি মারে। আমি কোনো ভেচকিতে ভয় পাই না।'
গতকাল রোববার জামালপুর সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল উন্মোচন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
মির্জা আজমের ভাষ্যমতে, দেশের 'সবচেয়ে মেধাবী' শিক্ষার্থীরা বুয়েট–মেডিকেলে ভর্তি হন। কিন্তু সরকারি চাকরিতে আসার পর তারা দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন।
মির্জা আজমের এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) সভাপতি ও বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সলান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'রাজনীতিবিদদের আচার-আচরণ একটু সভ্যভব্য হওয়া উচিত। এমন অরুচিকর শব্দচয়ন মির্জা আজমের কাছে আশা করিনি।'
তিনি বলেন, 'অনেক দুর্নীতিবাজ রাজনীতিবিদ আছেন। সেক্ষেত্রে আমি তো সব রাজনীতিবিদদের দুর্নীতিবাজ বলতে পারি না। এটা শোভন নয়। সেটুকু বোধবুদ্ধি মির্জা আজমের থাকা উচিত বলে আমি মনে করি।'
এ বিষয়ে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) মহাসচিব ডা. মো. ইহতেশামুল হক চৌধুরীর ভাষ্য, 'মির্জা আজমের বক্তব্য আমাদের আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। প্রকৌশলী, কৃষিবিদ ও চিকিৎসকদের ৩টি পেশাজীবী সংগঠনের সঙ্গে আমরা আজ বৈঠকে বসব। ওনার (মির্জা আজম) বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের বক্তব্য লিখিত আকারে জানাব।'
মির্জা আজমের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ডা. আব্দুন নূর তুষার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এটা একটা অসংলগ্ন বক্তব্য। একজন দায়িত্বশীল রাজনীতিবিদ এ ধরনের বক্তব্য দিতে পারেন না। একটা পেশাজীবী সংগঠনের নাম উল্লেখ করে পুরো সম্প্রদায়কে এভাবে বলা যেতে পারে না।'
তিনি বলেন, 'একজন ব্যক্তি ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার দুর্নীতি করতে পারেন, ঘুষ খেতে পারেন। কিন্তু তিনি "ডাক্তাররা, ইঞ্জিনিয়াররা" এভাবে বলতে পারেন না।'
আব্দুন নূর তুষার আরও বলেন, 'ওনার (মির্জা আজম) দিকে কেউ ভেচকি মারেননি। ভেচকি শব্দটি খুব আপত্তিকর। পেশাজীবী সংগঠনগুলো নিয়মতান্ত্রিকভাবে মির্জা আজমের বক্তব্যের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছে। প্রতিবাদ জানানো একটি গণতান্ত্রিক অধিকার। উনি যদি রাজনীতিবিদ হয়ে থাকেন তাহলে উনার এই মতামতকে শ্রদ্ধা করতে হবে। একজন গণতান্ত্রিক রাজনীতিবিদ মানুষের মতামতকে শ্রদ্ধা করে। এটা যদি উনার ভেচকি মনে হয় তাহলে সত্যি সত্যি উনার পদত্যাগ করা উচিত।'
এর আগে গত জানুয়ারিতে জামালপুরে অনুষ্ঠিত এক সভায় প্রকৌশলী ও চিকিৎসকদের সমালোচনা করেন মির্জা আজম। পরে চিকিৎসক ও প্রকৌশলীরা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মির্জা আজমকে তার বক্তব্য প্রত্যাহার করে নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানান।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য দ্য ডেইলি স্টারের পক্ষ থেকে মির্জা আজমের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। পরে খুদে বার্তা পাঠানো হলেও তার জবাব দেননি।
Comments