মেশিনে মুড়ি, অস্তিত্ব সংকটে হাতে তৈরিকারকরা

রমজানে বাড়তি চাহিদার কথা মাথায় রেখে ব্যস্ত সময় পার করছেন হাতে ভাজা মুড়ি প্রস্তুতকারীরা। ছবি: পার্থ চক্রবর্তী/স্টার

রমজানে বাড়তি চাহিদার কথা মাথায় রেখে ব্যস্ত সময় পার করছেন হাতে ভাজা মুড়ি প্রস্তুতকারীরা। হাতে ভাজা মুড়ি স্বাস্থ্যসম্মত ও খেতে সুস্বাদু হলেও মেশিনে তৈরি প্যাকেটজাত মুড়ির দাম তুলনামূলক কম ও আকারে বড় হওয়ায় বেচাকেনা দিন দিন কমছে বলে জানান তারা।

'মুড়িগ্রাম' হিসেবে বিখ্যাত বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার বারুইখালী গ্রাম। একসময় প্রত্যন্ত এই গ্রামটির প্রায় শতাধিক পরিবার হাতে তৈরি মুড়ি বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতো। হাতে বানানো মুড়ি কচুয়ার ঐতিহ্য হলেও বর্তমানে কেবল ৩০-৩৫টি পরিবার এই পেশায় রয়েছেন।

পারিবারিক পেশা হিসেবে ছেলেবেলা থেকেই মুড়ি তৈরি করছেন বারুইখালী গ্রামের দ্বিপক সাহা (৬২)। বর্তমানে ছেলে ও ছেলের বৌ তাকে এই কাজে সহায়তা করে থাকে। মুড়ি বিক্রি করে যা আয় হয় সেই টাকায় সংসার চলছে তার।

আজ শনিবার এই প্রসঙ্গে আলাপকালে দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, 'মেশিনে তৈরি মুড়িতে ক্যামিকেল (ইউরিয়া) থাকে বলে সেগুলো দেখতে ভালো হয়। কিন্তু এগুলো স্বাস্থ্যসম্মত না। হাতে তৈরি ভাজা মুড়িতে শুধু লবণ ও পানি ব্যবহার করা হয়। কিন্তু, মেশিনে তৈরি প্যাকেটজাত মুড়ির দাম তুলনামূলক কম হওয়ায় আগের মতো আর অর্ডার পাই না,' বলেন তিনি।

নায্যমূল্য না পাওয়ায় গ্রামটির অনেকেই অন্য পেশায় ঝুঁকছেন বলে জানান দ্বিপক সাহা। তিনি বলেন, 'আমাদের এলাকার বেশিরভাগ মানুষ এক সময় মুড়ি তৈরি করতেন। বর্তমানে ধান, কাঠ, বালি, মাটির হাঁড়ির দাম বেড়েছে। কিন্তু আমাদের মুড়ির দাম সেভাবে বাড়েনি। তাই বাধ্য হয়েই অনেকে অন্য পেশা বেছে নিচ্ছেন।'

এ প্রসঙ্গে দ্বিপক সাহার ছেলে তিমির সাহা (৩২) দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, '৪০ কেজি ধান কিনতে হয় ১২০০ থেকে ১২৫০ টাকায়। চাল সিদ্ধ করতে, শুকাতে, প্রস্তুত করতে খরচ হয় আরও ২০০ টাকা। পানিতে লবণ মিশিয়ে ভোর রাত থেকে উঠে চাল ভেজে গরম বালিতে নাড়াচাড়া করে মুড়ি তৈরি করা হয়। ৪০ কেজি মোটা চাল থেকে প্রায় ২৪ কেজি মুড়ি তৈরি করা হয়। সবমিলিয়ে ১ কেজি হাতে তৈরি মুড়ি তৈরি করতে খরচ হয় ৭২ টাকা থেকে ৭৫ টাকা। এরপর ভ্যানে করে বাজারে নিয়ে গিয়ে প্রতি কেজি ১০০ টাকা দরে খুচরা বিক্রি করি। আর পাইকারি বিক্রেতাকে ৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করি।'

গ্রামের আরেক ব্যবসায়ী মিহির কুমার সাহা (৫৩) বলেন, 'ছোটবেলা থেকেই পারিবারিক পেশা হিসেবে মুড়ি ভেজে বিক্রি করে আসছি। আগে সপ্তাহে ২ হাটে ৮-১০ মণ ধান বিক্রি করতাম। আয় দিয়ে আমাদের সংসার ভালোই চলত। কিছু সঞ্চয়ও করতে পারতাম। কিন্তু গত দুই বছর ধরে সবকিছুর দাম বাড়লেও আমাদের মুড়ির দাম বাড়েনি। অন্যদিকে মেশিনে তৈরি মুড়ি আসায় হাতে ভাজা মুড়ির চাহিদা অনেকটাই কমেছে।'

'এখন সপ্তাহে ৫-৬ মণের বেশি বিক্রি করতে পারি না। তবে মৌসুমের শুরুতে যখন ধানের দাম কম থাকে, তখন সারা বছরের ধান একবারে কিনতে পারলে লাভ একটু বেশি হয়। আমি সারা সপ্তাহে যে উপার্জন করি তা দিয়ে সংসার চালানো শেষ হয়। সরকার স্বল্প সুদে বা সুদমুক্ত ঋণ দিতে পারলে আমরা ব্যবসায় টিকে থাকতে পারতাম,' বলেন তিনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কচুয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নাজমা সারোয়ার বলেন, 'ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সম্প্রসারণে সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। হাতে বানানো মুড়ি কচুয়ার ঐতিহ্য। এই ঐতিহ্য ধরে রাখতে আমরা কাজ করবো। এ ক্ষেত্রে মুড়ি উৎপাদনের সঙ্গে জড়িতরা সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে আবেদন করলে আমরা ঋণ দেওয়াসহ বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করবো। এক্ষেত্রে সমাজসেবা অধিদপ্তর ও আমরা তাদের প্রয়োজনীয় সহায়তা দেবো।'

Comments

The Daily Star  | English

Abdul Hamid returns home after treatment in Thailand

Two police officials were withdrawn and two others suspended for negligence in duty regarding the former president's departure from the country

10h ago