মেয়রের হাতে বেতের লাঠি

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর একটি ছবিকে কেন্দ্র করে সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। ওই ছবিতে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে নগরীর জিন্দাবাজার-চৌহাট্টা সড়কে পাজেরোর সামনের সিটে বসে হাতে বেত উঁচিয়ে ধরে রাখতে দেখা গেছে। আর সড়কের পাশেই সিটি করপোরেশনের আরেক কর্মী বেত হাতে দাঁড়িয়ে আছেন। তাদের পাশেই দাঁড়িয়ে আছেন একজন ভ্যানচালক। অভিযোগ উঠেছে মেয়র আরিফুল হক ওই ভ্যানচালকের হাতে বেত দিয়ে আঘাত করেছেন।
মেয়র আরিফুল হকের এই ছবিটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ছবি: সংগৃহীত

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর একটি ছবিকে কেন্দ্র করে সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। ওই ছবিতে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে নগরীর জিন্দাবাজার-চৌহাট্টা সড়কে পাজেরোর সামনের সিটে বসে হাতে বেত উঁচিয়ে ধরে রাখতে দেখা গেছে। আর সড়কের পাশেই সিটি করপোরেশনের আরেক কর্মী বেত হাতে দাঁড়িয়ে আছেন। তাদের পাশেই দাঁড়িয়ে আছেন একজন ভ্যানচালক। অভিযোগ উঠেছে মেয়র আরিফুল হক ওই ভ্যানচালকের হাতে বেত দিয়ে আঘাত করেছেন।

আজ শনিবার দুপুরে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন সিলেট জেলা শাখার সাবেক সভাপতি সপ্তর্ষি দাশ ওই ছবিটি তোলেন এবং সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করেন।

ভ্যানচালক জানান, রাস্তার পাশে ভ্যান দাঁড় করিয়ে রাখায় মেয়র তার হাতে বেত দিয়ে আঘাত করেন। ঘটনার ছবি তোলা সপ্তর্ষিও একই অভিযোগ করেন।

ভ্যানচালক রুবেল আহমেদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি ভ্যান রেখে পণ্য দিতে গিয়েছি তখন মেয়র আসেন। তিনি ভ্যান সরাতে বলেন এবং বেত দিয়ে আমার হাতে আঘাত করেন।'

তবে, এ অভিযোগ অস্বীকার করে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বেত দিয়ে তাকে আঘাত করার তথ্যটি সঠিক নয়। আমি শুধু রাস্তার পাশে দাঁড় করানো ভ্যান সরাতে ভয় দেখাতে ধমক দিয়েছি।'

ওই ছবিটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করার পর ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। ছবিটিতে রাস্তার পাশে কিছু প্রাইভেট কার দাঁড় করিয়ে রাখতে দেখা গেছে।

কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন- মেয়র কীভাবে শারীরিক নির্যাতনের অধিকার পেয়েছেন? কেউ বা আবার প্রশ্ন তুলেছেন শুধু শ্রমজীবী মানুষ কেন নির্যাতনের শিকার হন? কেন কোনো প্রাইভেট কারের চালকদের তিনি কিছু বলেন না?

সপ্তর্ষি দাশ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আজ দুপুর ১টা ৫০ মিনিটের দিকে এ ঘটনা ঘটে। শ্যামলী মার্কেটের সামনে একটি সিগারেট কোম্পানির ভ্যানচালক রাস্তার পাশে ভ্যান রেখে পাশে কোথাও পণ্য দিতে যান। এসময় মেয়রের গাড়ি জিন্দাবাজার থেকে চৌহাট্টার দিকে আসে। প্রথমে মেয়রের সঙ্গে থাকা ব্যক্তিরা রাস্তার পাশে দাঁড় করিয়ে রাখা কয়েকটি মোটরসাইকেলের হেলমেট তুলে নেন। তখন মেয়রের গাড়ি দেখে ভ্যান সরাতে দৌড়ে আসেন ওই ভ্যানচালক।'

'মেয়র ভ্যানচালককে ডাক দিয়ে বেত দিয়ে মারতে গেলে চালক প্রথমে সরে যান। পরে তাকে ডেকে দুই হাত সামনে দিতে বলা হয় এবং হাতে বেত দিয়ে আঘাত করেন মেয়র। তারপর তিনি গাড়ি নিয়ে চলে যান,' বলেন সপ্তর্ষি দাশ।

সপ্তর্ষি আরও বলেন, 'ঘটনাস্থলের কাছেই মাতৃমঙ্গল হাসপাতালের সামনে কিছু প্রাইভেট কার থাকলেও মেয়রকে তাদের কিছু বলতে দেখিনি। মেয়র চলে যাওয়ার পরও সেগুলো সেখানেই ছিল।'

সোশ্যাল অ্যাক্টিভিস্ট বিনয় ভদ্র ছবিটি ফেসবুকে পোস্ট করে লেখেন, '…এই শহরের অনেক রিকশাচালক ও খেটে খাওয়া মানুষের পিঠ খুঁজলে মেয়র আরিফের লাঠির আঘাতের অনেক দাগ খুঁজে পাওয়া যাবে।'

ওই পোস্টের কমেন্টে মশিয়ার রহমান খোকন কমেন্ট করেন, 'সবার সবাইকে সমানভাবে বিচার করার সাহস বা জ্ঞান থাকে না, যদিও ছবিতে পার্কিং করা গাড়িগুলোর ক্ষেত্রে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কিনা অস্পষ্ট। তবুও বেত্রাঘাত বর্তমানে ফৌজদারি অপরাধ। আর জনপ্রতিনিধিদের ক্ষেত্রে সামাজিক বুলিং বা মিডিয়া ট্রায়াল বা ট্রলিংই এলাহী ভরসা।'

বেত দিয়ে আঘাতের আইনগত ভিত্তি নিয়ে জানতে চাইলে সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট এমাদ উল্লাহ শহীদুল ইসলাম শাহীন বলেন, 'বেত্রাঘাতের জন্য একটি আইন আছে, 'হুইপিং অ্যাক্ট-১৯০৯'। এ আইনে আদালত কাউকে বেত্রাঘাতের নির্দেশ দিতে পারেন, তবে সেক্ষেত্রে অনেক শর্তাবলী আছে। কিন্তু, এমন আইন থাকলেও তা বর্তমানে প্রায়োগিক ক্ষেত্রে দেওয়া হয় না।'

তিনি বলেন, 'পুলিশি আইনে লাঠিচার্জের নির্দেশনা আছে। তবে, সেক্ষেত্রেও শর্তাবলী আছে এবং এর বাইরে কাউকে বেত্রাঘাত করা হলে তা আইনসিদ্ধ নয়, বরং অপরাধ।'

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) সিলেটের সাধারণ সম্পাদক ও সংক্ষুব্ধ নাগরিক আন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুল করিম কিম বলেন, 'মেয়র প্রকাশ্যে রাস্তার হকার, রিকশা-ভ্যানচালকদের মারধর করেন, এমন অভিযোগ অনেক পুরনো। একজন মেয়র বেত হাতে রাস্তায় ঘুরে বেড়ান, ইচ্ছে হলে বেত্রাঘাত করেন- এটি ভয়ঙ্কর ধরণের স্বেচ্ছাচারিতা এবং অপরাধ।'

মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, 'ঈদকে সামনে রেখে নগরীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় সব ধরণের পণ্য সরবরাহকারীদের সকাল ৯টার মধ্যে পণ্য সরবরাহ শেষ করার নির্দেশনা দেওয়া আছে। এ কারণে দুপুরে রাস্তার পাশে ওই ভ্যান দাঁড় করানো থাকায় তাকে সরে যেতে বলেছি। বেত থাকলেও বেতের আঘাত করিনি। ভয় দেখিয়েছি, ধমক দিয়েছি।'

তিনি আরও বলেন, 'যে বা যারা ওই ছবি তুলেছেন, সমালোচনা করছেন- তাদের নিজস্ব স্বার্থ জড়িত আছে। অনেক ব্যবসায়ী রাস্তার পাশের ফুটপাত ও রাস্তা ভাড়া দেন, আমার কাজকে সমালোচিত করতে তাদেরও স্বার্থ থাকতে পারে।'

Comments

The Daily Star  | English

$8b climate fund rolled out for Bangladesh

In a first in Asia, development partners have come together to announce an $8 billion fund to help Bangladesh mitigate and adapt to the effects of climate change.

2h ago