লাখো মুসল্লির নামাজের জন্য প্রস্তুত দিনাজপুরের গোর-এ শহীদ ময়দান

গোড়-এ শহীদ বড় ময়দানের আয়তন প্রায় ২২ একর। ছবি: স্টার

ঈদের নামাজের জন্য প্রস্তুত দিনাজপুরের গোর-এ শহীদ বড়মাঠ। আয়োজকদের দাবি এটি দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বৃহত্তম ঈদগাহ মাঠ।  

করোনা পরিস্থিতির কারণে গত ২ বছর দিনাজপুরের গোর-এ শহীদ বড় ময়দানে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়নি। করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় এবার বৃহৎ এই ঈদগাহে অনুষ্ঠিত হবে ঈদের জামাত।

প্রায় ১৫ দিন ধরে প্রস্তুত করা হয়েছে এই মাঠ। ঈদের দিন সকাল ৯ টায় অনুষ্ঠিত হবে ঈদের জামাত। ২২ একর আয়তনের এই ঈদগাহ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করতে বেশ কয়েকদিন ধরেই চলছিল ব্যস্ততা।

আজ সোমবার বড়মাঠে গিয়ে দেখা যায়, মিনার ধোয়ামোছা ও সংস্কারকাজ সম্পন্ন হয়েছে। মিনারের পেছনে অজুখানা ও শৌচাগার স্থাপনের কাজ শেষ পর্যায়ে। মাঠটি রোলার দিয়ে উচুনিচু সমান করার পর কাতারের দাগ দেওয়া হয়েছে। মাঠের চারপাশে ১৯টি প্রবেশপথ তৈরি করা হয়েছে। মাঝখানে বসানো হয়েছে উঁচু ওয়াচ টাওয়ার।

দিনাজপুর পৌরসভার প্যানেল মেয়র তৈয়ব আলী দুলাল বলেন, গত ১০ এপ্রিল থেকে চলছে এসব কাজ।

মাঠের ভেতরে ১১০টি মাইক লাগানো হয়েছে। প্রবেশের জন্য কঠোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ৫০টি সি সি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। তাছাড়া একসঙ্গে ২৫০ জন মুসল্লি ওজু করতে পারবে এমন অজুখানার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

সংশ্লিষ্ঠরা জানিয়েছে, ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর থেকেই এই মাঠে ঈদের জামাত হয়। তবে বড় কোনো আয়োজন কখনই ছিল না। ২০১৫ সালে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম মিনার নির্মাণের পরিকল্পনা ও অর্থায়ন করেন। ২০১৭ সালে নির্মাণকাজ সম্পন্ন হলে সে বছরই ঈদের জামাতে প্রায় ৬ লাখ মুসল্লির সমাগম হয় বলে জানায় আয়োজকরা।  

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, গোড়-এ শহীদ বড় ময়দানের আয়তন প্রায় ২২ একর। ২০১৭ সালে নির্মিত ৫২ গম্বুজের ঈদগাহ মিনার তৈরিতে খরচ হয়েছে ৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা। গম্বুজগুলোর দুই ধারে ৬০ ফুট করে দুটি মিনার, মাঝের দুটি মিনার ৫০ ফুট করে। ঈদগাহ মাঠের মিনারের প্রথম গম্বুজ অর্থাৎ মেহেরাবের (যেখানে ইমাম দাঁড়াবেন) উচ্চতা ৪৭ ফিট। এর সঙ্গে রয়েছে আরও ৪৯টি গম্বুজ। এছাড়া ৫১৬ ফিট লম্বায় ৩২টি আর্চ নির্মাণ করা হয়েছে। দক্ষিন এশিয়ায় এত বড় ঈদগাহ মাঠ দ্বিতীয়টি নেই। পুরো মিনার সিরামিক্স দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। প্রতিটি গম্বুজ ও মিনারে রয়েছে বৈদ্যুতিক লাইটিং। রাত হলে ঈদগাহ মিনার আলোকিত হয়ে ওঠে। ২০১৭ সাল থেকেই প্রতিবার এখানে ঈদের নামাজ আদায় করছেন দিনাজপুর জেলাসহ পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা-উপজেলার ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা।

সর্ববৃহৎ এই ঈদগাহ মিনারের উদ্যোক্তা ও পরিকল্পনাকারী এবং ব্যবস্থাপনা কমিটির প্রধান উপদেষ্ঠা জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম বলেন, শোলাকিয়া একটি ঐতিহ্যবাহী মাঠ, তবে আয়তনের দিক দিয়ে দিনাজপুর ঈদগাহ মিনার চার গুণ বড়। গোর-এ শহীদ ময়দানের আয়তন প্রায় ২২ একর।

তিনি দাবি করেন উপমহাদেশে এত বড় ঈদগাহ আর নেই। এখানে ঈদের নামাজ আদায় করছেন দিনাজপুর জেলাসহ পার্শ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা-উপজেলার ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা। করোনা ভাইরাসের কারণে পরপর ২ বছর দিনাজপুরের গোর-এ শহীদ ময়দানে হয়নি ঈদের জামাত। তবে এবার এই ময়দানে ঈদের জামাত হবে এবং এর সব প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। তিনি আশা করছেন, ৬ লক্ষাধিক মানুষের সমাগম হবে। এটিই হবে দক্ষিন এশিয়ার সর্ববৃহৎ ঈদের জামাত।

দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক খালেদ মোহাম্মদ জাকী বলেন, পবিত্র ঈদুল ফিতরে মুসল্লিদের সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্নভাবে নামাজ আদায়ের জন্য সব ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ঈদগাহ মাঠজুড়ে নেওয়া হচ্ছে কঠোর নিরাপত্তা। সিসি ক্যামেরা স্থাপনের পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি রাখার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। মাঠের আশেপাশে র‌্যাব, বিজিবি, পুলিশ ও আনসারসহ সব ধরনের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন রাখার প্রস্তুতি রয়েছে। পাশাপাশি থাকছে ৩ স্তর বিশিষ্ট নিরাপত্তা।

ঈদের জামাতে ইমামতি করবেন মাওলানা শামসুল ইসলাম কাসেমী।

Comments