‘সম্প্রীতির রাস্তা’য় এখন আর কেউ চলাচল করেন না

প্রায় ৩০০ মিটার কাঁচা সড়কটি বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে 'সম্প্রীতির সড়ক' হিসেবে পরিচিত। এ সড়কটির অর্ধেক মালিকানায় বাংলাদেশি ও বাকি অর্ধেকের মালিকানায় ভারতীয়। সীমান্ত সম্প্রীতির সড়কটির দক্ষিণে বাংলাদেশের কুড়িগ্রাম জেলার ভুরুঙ্গমারী উপজেলার বাঁশজানি গ্রাম আর উত্তরে ভারতের কোচবিহার জেলার সাহেবগঞ্জ থানার ঝাকুয়াটারী গ্রাম। সীমান্তে ৯৭৮ নম্বর মেইন পিলারের ৯ নম্বর সাব পিলারের কাছে এই রাস্তাটি।
সীমান্তে বসবাসকারীরা দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, কাঁচা রাস্তাটি মেরামতের সময় বাংলাদেশ-ভারতের মানুষ যৌথভাবে অর্থ ব্যয় করে থাকেন। তারা এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করেন। এভাবে চলছে যুগের পর যুগ। এটিকে তারা 'সম্প্রীতির রাস্তা' হিসেবে আখ্যা দিয়ে থাকেন। অতীতে তারা কোনো সমস্যার মুখোমুখি হননি।
কিন্তু, গত ২৬ এপ্রিল বিকেল থেকে বাংলাদেশ-ভারতের কোনো নাগরিকই এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করছেন না। কারণ, ওই দিন দুপুরে ওই সীমান্তে টাকা ধার দেওয়াকে কেন্দ্র করে উভয় দেশের নাগরিকের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ কারণে কেউই এখন আর 'সম্প্রীতির রাস্তা' ব্যবহার করছেন না।
সীমান্তবাসীরা আরও জানান, ওই সীমান্তে বাংলাদেশ ও ভারতের গ্রামে বসবাসকারীরা একে অপরের আত্মীয়। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় তারা বিভক্ত হয়ে যান। ভারতের ঝাকুয়াটারী গ্রামে প্রায় ৫০টি পরিবার বসবাস করছেন। ওই সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া হলেও তারা এর বাইরে রয়েছেন। তাদের চাষাবাদের জমি কাঁটাতারের বাইরে হওয়ায় তারা এর ভেতর যেতে চাননি। ওই সীমান্তে একটি মসজিদ আছে। মসজিদে বাংলাদেশ-ভারতের নাগরিকরা যৌথভাবে নামাজ পড়েন।

উভয় দেশের নাগরিকদের পারিবারিক অনুষ্ঠানেও তারা একে অপরকে দাওয়াত করে থাকেন। কেউ মারা গেলে তারা উভয়ে জানাজায় অংশ নেন। তাদের সমাজ ব্যবস্থাও এক।
ঝাকুয়াটারী গ্রামের ভারতীয় নাগরিক আহমেদ আলীর (৭০) ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ঈদুল ফিতরের কয়েকদিন আগে সীমান্তে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটায় রাস্তাটি ব্যবহার করছি না। নিজেদের মধ্যে এখনো আতঙ্ক ও উত্তেজনা বিরাজ করছে। এর আগে কোনোদিনই এখানে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।'
তিনি আরও বলেন, 'আমরা এক সমাজের লোক। আমরা একে অপরের আত্মীয়। আমাদের জীবনযাপন একই রকম। আমাদের কৃষ্টি-কালচারও এক। আমরা শুধু পৃথক দেশের নাগরিক।'
'সীমান্ত সম্প্রীতির রাস্তাটি এখন লোকশূন্য। অথচ এই রাস্তাটি উভয় দেশের নাগরিকের চলাচলে সবসময় সরব থাকতো,' যোগ করেন তিনি।
বাংলাদেশের বাঁশজানি গ্রামের আজিজুল ইসলাম (৬৫) ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সীমান্তে ছোট একটি অপ্রীতিকর ঘটনার পর থেকে রাস্তাটি ভয়ে ব্যবহার করতে পারছি না। যদি আবার কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে সেই আশঙ্কায় কেউই রাস্তাটি ব্যবহার করার সাহস পাচ্ছেন না।'
'এখন আমরা শুধু দূর থেকে কথা বলছি' উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'অথচ কয়েকদিন আগেও এক সঙ্গে বসে কথা বলতাম। একে অপরের বাড়িতে দাওয়াত খেতাম। এখন খুব কষ্ট লাগছে।'
একই গ্রামের মনসুর আলী (৪৮) ডেইলি স্টারকে বলেন, 'অল্প কয়েকজনের কারণে সীমান্তের সম্প্রীতি বিনষ্ট হতে চলেছে। অপ্রীতিকর ঘটনাটি নিজেদের মধ্যে সমাধানের চেষ্টা হচ্ছে।'
Comments