অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীদের দায়মুক্তির প্রস্তাব নাকচ
সরকারি চাকরি আইনে ২০১৮ সালে সরকারি কর্মচারীদের নানাবিধ সুবিধা নিশ্চিত করেছে।
তবে এর তিন বছর কাটতে না কাটতেই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় গতকাল সোমবার মন্ত্রিসভায় একটি প্রস্তাব রেখেছে। এতে গুরুতর অপরাধ বা নৈতিক শৃঙ্খলাজনিত অপরাধে দোষী সাব্যস্ত অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীদের দায়মুক্তি চাওয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে এই প্রস্তাব পেশ করেন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কে এম আলী আজম। সূত্র থেকে জানা যায়, এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে মন্ত্রিসভা।
২০১৮ সালের আইনের ৫১ (৪) ধারা অনুসারে, কোনও গুরুতর অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হওয়া অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীর পেনশনসহ অবসর পরবর্তী আংশিক বা সকল সুবিধা বাতিল করা যেতে পারে।
আইন অনুযায়ী এই সুবিধা অস্থায়ী এবং স্থায়ীভাবে বাতিল করা হতে পারে। এতে আরও যোগ করা রয়েছে, এই ব্যবস্থা নেওয়ার আগে অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিতে হবে এবং এর উত্তর দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত সময় দিতে হবে।
মন্ত্রিপরিষদের বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, 'জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এই ধারাটি বাতিল করার প্রস্তাব করেছিল, কিন্তু মন্ত্রিসভা তাতে রাজি হয়নি।'
'এটি (ধারা) অপরিবর্তিত রয়েছে।'
২০১৮ সালের আইন অনুযায়ী, সরকারি কর্মচারীরা কোনো অপরাধ করলে তাদের গ্রেপ্তার করতে দুর্নীতি দমন কমিশনকে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে।
আইনের ৪১ (১) ধারায় বলা হয়েছে, আদালত তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন না করা পর্যন্ত সরকারি কর্মচারীদের গ্রেপ্তার করা যাবে না। আদালত অভিযোগ গঠন করলে তাদের গ্রেপ্তারে কোনও পূর্ব অনুমতির দরকার নেই।
তবে অভিযোগ গঠনের আগে কোনও সরকারি কর্মচারীকে কেবলমাত্র সরকারের বা অন্য কোনও বিদ্যমান আইনে সংজ্ঞায়িত কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে গ্রেপ্তার করা যেতে পারে।
এই ধারাটি দেশের সংবিধানের সঙ্গে সরাসরি সাংঘর্ষিক। কেননা, সংবিধান অনুযায়ী দেশের সকল নাগরিক সমান।
আইনের ৪২ ধারা অনুসারে, কোনো সরকারি কর্মচারী ফৌজদারি মামলায় আদালত কর্তৃক কেবলমাত্র মৃত্যুদণ্ড বা এক বছরের বেশি মেয়াদের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলে তাকে চাকরি থেকে তাৎক্ষণিক বরখাস্ত করা হবে।
এক বছরের কম মেয়াদের কারাদণ্ড হলে তাকে তিরস্কার, নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য পদোন্নতি বা বেতন বৃদ্ধি স্থগিত, নিম্নতর স্কেলে অবনমন বা যথোপযুক্ত ক্ষতিপূরণ আদায় করা হবে। তকে, তার চাকরি বহাল থাকবে।
এই আইনটি সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়ায় যখন আদালত কোনো সরকারি কর্মচারীকে তলব করেন কিন্তু তারা হাজির হতে ব্যর্থ হন কিংবা হাজির হতে অস্বীকৃতি জানান।
বাস্তবে আদালত অবমাননার শাস্তি ছয় মাসের কারাদণ্ড। ২০১৮ সালের আইন দ্বারা সরকারি কর্মচারীরা সুরক্ষিত। যেহেতু তারা জানেন এক বছরের কম শাস্তির ক্ষেত্রে তাদের কিছু হবে না, তাই চাইলেই তারা আদালতের আদেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাতে পারেন।
যদিও ২০১৩ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর আদালত অবমাননার আইন বাতিল করেছেন উচ্চ আদালত।
২০১৮ সালের আইনের খসড়ায় সরকারি কর্মচারীদের প্রতিটি পদোন্নতির আগে একটি পরীক্ষা দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল। কিন্তু এটি চূড়ান্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এই বিধানটি বাতিল করা হয়।
Comments