সেতু চালুর অপেক্ষায় ২২ বছর!

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলার ধরখার ইউনিয়নের বনগজ গ্রামের সঙ্গে কৃষ্ণনগর গ্রামের সংযোগ সেতুটি গত ২২ বছরেও চালু হয়নি।
স্থানীয়রা দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, ১৯৯৯ সালে বনগজ ও কৃষ্ণনগর গ্রামের মধ্যবর্তী নয়া খালের ওপর এই সেতুটি নির্মাণ করা হয়।
কিন্তু, এটি নির্মাণের দুই দশক পেরিয়ে গেলেও আজো কোনো সংযোগ সড়ক হয়নি। তাই অর্ধ কোটি টাকা খরচে নির্মিত সেতুটি এলাকাবাসীর কোনো কাজেই আসছে না।
বনগজ গ্রামের বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা শানু মিয়া ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সংযোগ সড়ক না থাকায় দুই গ্রামের মানুষ বর্ষায় নৌকায় করে এবং অন্য সময়ে পানি ভেঙে খালটি পার হন। এতে করে তাদের চরম দুর্ভোগে পড়তে হয়।
তিনি আরও বলেন, কৃষ্ণনগর, বনগজ ও পার্শ্ববর্তী গ্রামের কৃষকরা তাদের চরের জমিতে ধানসহ মিষ্টি কুমড়া, করলা ও খিরা উৎপাদন করে। কিন্তু, সড়ক যোগাযোগ না থাকায় তারা তা কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।'
আখাউড়া উপজেলা প্রকৌশল কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা পরিষদের রাজস্ব তহবিলের অর্থে ১২০ ফুট দৈর্ঘ্য ও আট ফুট প্রস্থের সেতুটি নির্মাণ করা হয়েছিল। নির্মাণে ব্যয় হয়েছিল প্রায় অর্ধ কোটি টাকা।
আখাউড়া উপজেলার ধরখার ইউনিয়নের বনগজ ও কৃষ্ণনগর এবং একই উপজেলার মোগড়া ইউনিয়নের ভবানীপুর ও পার্শ্ববর্তী ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার ঘাটিয়ারা ও বরিশল গ্রামের কয়েক হাজার মানুষের চলাচলের সুবিধার কথা চিন্তা করেই সেতুটি নির্মিত হয়েছিল।
জানা গেছে, গ্রামবাসীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৯৯ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ আসনের তৎকালীন সংসদ সদস্য শাহ আলম সেতুটি নির্মাণের উদ্যোগ নেন। নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করেছিল আখাউড়া উপজেলা এলজিইডি।
নৌকায় করে সেতু এলাকা সরেজমিন পরিদর্শনের সময় দেখা যায়, উত্তর-দক্ষিণে লম্বালম্বি সেতুটি সমতল থেকে অন্তত ১৫ ফুট উঁচুতে আছে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য হাবিবুর রহমান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'জনপ্রতিনিধি হিসেবে, আমি সেতুটি চালু করতে যখন যেখানে সুযোগ পাই রাস্তা নির্মাণের তাগিদ দিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু, গত ২২ বছর ধরে স্থানীয়দের দাবির কোনো প্রতিফলন দেখতে পাইনি।'
স্থানীয়দের অভিযোগ, বিলের মাঝখানে সেতুটি তৈরি করা হয়েছে। এর দুই পাশে সংযোগ সড়ক নেই। তাই এটি নির্মাণের পর থেকেই অকেজো।
বনগজ গ্রামের বাসিন্দা ও সরকারি কর্মকর্তা মোশারফ হোসেন মুসা ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কৃষ্ণনগর গ্রামটি সারা বছরই পানিবন্দি থাকে। কোনো রাস্তা না থাকায় বর্ষায় গ্রামবাসীরা নৌকায় তাদের গন্তব্যে যান। অন্যান্য মৌসুমে তারা পায়ে হেঁটে চলাচল করেন।'
যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাবে গ্রামে কোনো স্কুল নেই জানিয়ে তিনি আরও বলেন, 'এই গ্রামের শিশুদের পড়ালেখার জন্য অন্য গ্রামে যেতে হয়। অন্যদিকে, গ্রামের কৃষকরাও তাদের উৎপাদিত কৃষিপণ্যের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।'
সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হলে গ্রামটি শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কৃষিতে এগিয়ে যাবে বলে মনে করেন তিনি।
এলজিইডি'র আখাউড়া উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুল লতিফ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কৃষ্ণনগর গ্রামে সড়ক যোগাযোগ স্থাপনের জন্য বৃহত্তর কুমিল্লা প্রকল্পের (জিসিপি-৪) অধীনে একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এটি অনুমোদিত হলে সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হবে।'
Comments