‘হাইড্রোজেন পার-অক্সাইডের কারণে অ্যাসিড বৃষ্টির সম্ভাবনা, এটা গুজব’

স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের কন্টেইনার ডিপোতে হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড রাসায়নিক থাকার কারণে ক্ষয়ক্ষতি বেশি হয়েছে এবং বিস্ফোরণ হয়েছে বলে ধারণা করছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা।

ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের চট্টগ্রাম বিভাগীয় উপপরিচালক আনিসুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বিস্ফোরিত হওয়া ১৫টি কন্টেইনারে আমরা হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড পেয়েছি। হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড থাকতে পারে এমন আরও ১৫টি কন্টেইনার শনাক্ত করা হয়েছে। তবে সেসব কন্টেইনারে অন্যান্য রাসায়নিক পদার্থও থাকতে পারে। নিরাপত্তার স্বার্থে আমরা সেগুলো আপাতত খুলছি না। নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরালো করার পর সেগুলো খোলা হবে।'

কন্টেইনারে হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড থাকায় আগুনের ঘটনার পর ওই এলাকার পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব নিয়ে বিভিন্ন গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকে বলছেন, হাইড্রোজেন পার-অক্সাইডের কারণে অ্যাসিড বৃষ্টি হতে পারে।

এ বিষয়ে ডা. আব্দুন নূর তুষার ফেসবুক পোস্টে লেখেন, হাইড্রোজেন পার-অক্সাইডের কারণে অ্যাসিড বৃষ্টি হতে পারে, এটি সম্পূর্ণ গুজব।

বিশেষজ্ঞরাও বলেছেন হাইড্রোজেন পার-অক্সাইডের কারণে অ্যাসিড বৃষ্টি হওয়ার বিন্দুমাত্র সম্ভাবনা নেই। এটি সম্পূর্ণ গুজব ও ভিত্তিহীন কথা।

বুয়েটের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান ড. মো. মমিনুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সালফিউরিক অ্যাসিডের কারণে অ্যাসিড বৃষ্টি হয়। হাইড্রোজেন পার-অক্সাইডের গঠনে সালফার ডাই-অক্সাইড বা সালফার ট্রাই-অক্সাইড নেই। সুতরাং এখান থেকে অ্যাসিডিক কোনো বস্তু বাতাসে যাবে বা বাতাসে মিশে আলাদা কোনো কিছু গঠন হয়ে অ্যসিড তৈরি হবে এমন কোনো সুযোগ নেই। তাই হাইড্রোজেন পার-অক্সাইডের কারণে সেখানে অ্যাসিড বৃষ্টি হওয়ার বিন্দুমাত্র সম্ভাবনা নেই।'

তিনি বলেন, 'হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড সরাসরি কোথাও পড়লে সেখানে সমস্যা হবে। কিন্তু সীতাকুণ্ডে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় তা সরাসরি মাটি বা পানিতে পড়ার সম্ভাবনা নেই। তাই এর কারণে পরিবেশের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা কম।'

ডিপোতে হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড রাখা কোনোভাবেই উচিত হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'ডিপোতে হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড রাখার কথা না। এটি ৬ থেকে ৮ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হয়। সেখানকার তাপমাত্রা এরচেয়ে ৫ থেকে ৬ গুন বেশি ছিল। যেখানে ৬ থেকে ৮ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় রাখার কথা সেখানে এতো বেশি তাপমাত্রায় রাখলে তো সমস্যা হবেই। সেখানেও তাই হয়েছে। যারা এই কাজ করছেন তাদের সঠিক জ্ঞান না থাকলে তো এমনটাই হবে।'

বুয়েটের কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. সায়েদা সুলতানা রাজিয়া দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড যদি সরাসরি পানিতে মিশে যায় তবে জলজ প্রাণীর জন্য সমস্যা হবে। তবে সীতাকুণ্ডে যে পরিস্থিতি ছিল সেখানে হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড সরাসরি সাগরে গিয়ে পানির সঙ্গে মিশে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।'

তিনি বলেন, 'অগ্নিকাণ্ডে হাইড্রোজেন পার-অক্সাইডের পুড়ে যাওয়ার কারণে অ্যাসিড বৃষ্টি হতে পারে—এসব তথ্য কোথা থেকে আসে বুঝতে পারছি না। হাইড্রোজেন পার-অক্সাইডের কারণে অ্যাসিড বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা বিন্দুমাত্র নেই।'

এ বিষয়ে ডা. আব্দুন নূর তুষার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'যেকোনো পার-অক্সাইডের ধর্ম হলো অক্সিজেন ছাড়তে শুরু করে। স্বাভাবিক বাতাসের সংস্পর্শে আসলে অক্সিজেন ছাড়তে থাকে এবং পানি হয়ে যায়। কাপড়ের মিল, গার্মেন্টস, ওষুধের কারখানা, হাসপাতালে এটি ব্যবহৃত হয়। কাপড়ের দাগ ওঠাতে, ক্ষত স্থান পরিষ্কারে হাইড্রোজেন পার-অক্সাইডের ব্যবহৃত হয়।'

তিনি বলে, 'এর দ্বারা অ্যাসিড বৃষ্টি হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। তবে অন্যান্য কারণে যেমন কন্টেইনার, কাপড়, কাঠ, প্লাস্টিক পুড়ে গেছে এসব কারণে পরিবেশের ওপর প্রভাব পড়তে পারে। বায়ু দূষণ হতে পারে। হাইড্রোজেন পার-অক্সাইডের কারণে বিশেষ কোনো প্রভাব পড়বে না। অ্যাসিড বৃষ্টির জন্য বিশাল পরিমাণ অ্যাসিড পুড়তে হয়। তা তো সেখানে হয়নি।'

সীতাকুণ্ডের বড় বিস্ফোরণ হওয়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, 'ওখানে হাইড্রোজেন পার-অক্সাইডের উত্তপ্ত হওয়ায় দ্রুত অক্সিজেন ছেড়ে দিয়েছে। ফলে আয়তন বেড়ে গেছে এবং কন্টেইনারগুলোর বিস্ফোরণ ঘটেছে। অনেক অক্সিজেন একসঙ্গে আসায় আগুন বেড়ে গেছে। হাইড্রোজেন পার-অক্সাইড যে পানি তৈরি করেছে সেটি আগুনে পুড়ে বাষ্প হয়ে গেছে। ওই পানি আগুনের তুলনায় অনেক কম।'

গত শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে সীতাকুণ্ডের বিএম কন্টেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় নিহতের সংখ্যা প্রথমে ৪৯ বলা হলেও পরে গতকাল সোমবার নিহতের সংখ্যা ৪১ বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান।

ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের চট্টগ্রাম বিভাগীয় উপপরিচালক আনিসুর রহমান বলেছেন, ফায়ার সার্ভিসের ইতিহাসে এটি একটি নজিরবিহীন ঘটনা।

তিনি বলেন, 'আজ মঙ্গলবারও ডিপোর ধ্বংসস্তূপ থেকে ২টি দেহাবশেষ উদ্ধার করা হয়েছে। আমাদের হিসেবে এখন পর্যন্ত ৪৪ জনের মরদেহ পাওয়া গেছে। এরমধ্যে ফায়ার সার্ভিস সদস্য আছেন ১২ জন। ফায়ার সার্ভিস সদস্যদের মধ্যে ৯ জনের পরিচয় শনাক্ত হয়েছে, ৩ জনের পরিচয় এখনো শনাক্ত হয়নি।'

Comments

The Daily Star  | English

No sharp rise in crime, data shows stability: govt

The interim government today said that available data does not fully support claims of a sharp rise in crimes across Bangladesh this year

2h ago