‘হামরা একবেলা খাই, দুবেলা উপাস থাকি’

২৩ দিন ধরে বন্ধ বৈকুন্ঠপুর চা-বাগান
বৈকুন্ঠপুর চা বাগানে প্রতিবাদ সভায় শ্রমিকরা। ছবি: স্টার

'রইজ হামরা রাস্তায় বইসে ভিখ মাঙার মতো ভাইলতে থাকি কেউ চাইল-ডাইল লিয়ে আইসবেক ন নাই। আইলো তো ভালো। ওই দিন খাইতে পারি। নাইলে উপাস। হামরা একবেলা খাই আর দুবেলা উপাস থাকি।'

কথাগুলো বলছিলেন হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার বৈকুন্ঠপুর চা-বাগানের শ্রমিক রূপন্তি রবিদাশ।

তার মতো ৪০৯ স্থায়ী চা-শ্রমিকসহ তাদের পরিবার করোনার দিনে অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন।

গত ৮ ডিসেম্বর থেকে বৈকুন্ঠপুর চা-বাগান বন্ধ। আজ ২৩ দিন এই বাগানের চা-শ্রমিকের কাজ নেই, মজুরি নেই, খাবার নেই, চিকিৎসা নেই।

বাংলাদেশ চা কন্যা নারী সংগঠনের আহবায়ক খাইরুন আক্তার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'খেটে খাওয়া মানুষ ভিক্ষা করতেও জানে না।'

বৈকুন্ঠপুর চা আন্দোলন কমিটির সভাপতি মনিব কর্মকার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'স্থায়ী চা শ্রমিককে বাগান মালিকপক্ষ থেকে আবাসন সুবিধা দেওয়ার কথা থাকলেও স্থায়ী চা শ্রমিক দিলীপ কেউটকে তা দেওয়া হয়নি। কালক্ষেপণ ও বাসস্থান সংকটের কারণে বাধ্য হয়ে নিজের খাজনা দেওয়া ফসলি জমিতে বাড়ি বানাতে ম্যানেজার ও পঞ্চায়েত কমিটি থেকে মৌখিক অনুমতি নেন তিনি।'

'কিন্তু, বাড়ি তোলার ১৫ দিনের মাথায় মালিকপক্ষ বাড়ি উচ্ছেদের নোটিশ দেয়,' উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'চা শ্রমিকরা দিলীপের পক্ষে কথা বললে ১২ শ্রমিকের বিরুদ্ধে মামলা এবং বেশ কয়েকজনকে বহিষ্কারের হুমকি দেওয়া হয়।'

'এর পাশাপাশি গত ১ মাস ধরে বৈকুন্ঠপুর চা বাগানের কার্যক্রম ও শ্রমিকদের মজুরি ও রেশন বন্ধ করে দেওয়া হয়,' যোগ করেন তিনি।

সমস্যা সমাধানের জন্য পঞ্চায়েত কমিটি ও চা শ্রমিক নেতৃবৃন্দদের নিয়ে আন্দোলন কমিটি গঠন করা হয়। সেই ধারাবাহিকতায় চা শ্রমিক নেতৃবৃন্দরা ২৫ দফা দাবি দেন। যেখানে দিলীপসহ আবাসন-বঞ্চিত সব চা শ্রমিকদের সমস্যা স্থায়ীভাবে সমাধানের কথা বলা হয়।

এ ছাড়াও, অস্থায়ী চা শ্রমিকদের স্থায়ী-করণ, উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা, কর্মক্ষেত্রে সুরক্ষা, মজুরি বৃদ্ধি ইত্যাদি দাবি তোলা হয়।

২০১৯ সালে বিভাগীয় শ্রম অধিদপ্তরের ইশতেহারের কথা উল্লেখ করে বৈকুন্ঠপুর চা বাগানের পঞ্চায়েত কমিটির সাধারণ সম্পাদক খোকন চৌহান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ইশতেহারের ২৩ নং অনুচ্ছেদে স্থানীয় আবাসন সংকট নিরসনের কথা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা ছিল। আজ ৩ বছর পরও সেই ২৫ দফার এক দফাও সমাধান হয়নি।'

চা-শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নিপেন পাল ডেইলি স্টারকে বলেন, 'শ্রমিকের বাড়ি উচ্ছেদের রেশ ধরে বন্ধ হওয়া বাগানের কার্যক্রম আবার চালু করাসহ ২৫ দফা দাবি তুলে ধরা হয়েছে৷'

'আজ শুক্রবারের মধ্যে সব সমস্যার সমাধান না হলে কঠোর আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে,' যোগ করেন তিনি।

মানবাধিকার কর্মী মর্জিয়া প্রভা বলেন, 'আমি চা বাগানে গিয়েছিলাম। প্রবীণ শ্রমিকদের অনেকে ভীষণ অসুস্থ। বাগান কর্তৃপক্ষ এ নিয়ে কোনো ব্যবস্থাই নিচ্ছে না।'

তিনি আরও বলেন, 'চা-শ্রমিকদের এখন খাবার দরকার। বাগানের শ্রমিকদের খাবার কেনার সামর্থ্য নেই। সবাইকে শ্রমিকদের পাশে দাঁড়াতে অনুরোধ করছি।'

বাগানের ব্যবস্থাপক (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ শামসুল হক ভূঁইয়া ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বাগান কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই এক শ্রমিক কৃষি জমিতে বাড়ি তৈরি করেছেন। আমরা এই বিষয়ে জানতে চাইলে বাকবিতণ্ডা হয়। চা শ্রমিকরা অফিসে হামলা করে। অফিস স্টাফকে আহত করে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ জানার পর চা-বাগান বন্ধ করে দেয়।'

শ্রম অধিদপ্তরের উপপরিচালক (ডিডিএল) নাহিদুল ইসলাম ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের কথা জানিয়ে ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আজ শুক্রবার বিকাল ৩টার দিকে বৈঠক হওয়ার কথা আছে। আমরা সব পক্ষকে চিঠি দিয়েছি। আশা রাখছি, বৈঠক থেকে সম্মিলিত সিদ্ধান্ত আসবে।'

Comments

The Daily Star  | English
Unhealthy election controversy must be resolved

Unhealthy election controversy must be resolved

Just as the fundamental reforms are necessary for the country, so is an elected government.

6h ago