২০৩০ সালের মধ্যে মোবাইল ডেটা ব্যবহারকারীর সংখ্যা দ্বিগুণ হবে

ইউসিবি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের নতুন প্রতিবেদনে পূর্বাভাষ

বর্তমান দশকে মোবাইল ডেটার চাহিদা বাড়ার কারণে বাংলাদেশের টেলিকম খাতের প্রভূত উন্নয়ন হবে বলে আশাবাদ প্রকাশ করা হয়েছে একটি সদ্যপ্রকাশিত প্রতিবেদনে।

ইউসিবি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট আজ এক প্রতিবেদনে বলেছে, ২০৩০ সালের মধ্যে মোবাইল ডেটার গ্রাহকের সংখ্যা দ্বিগুণের চেয়েও বেশি হবে। কারণ হিসেবে করোনাভাইরাস মহামারির সময় জীবনযাত্রায় পরিবর্তন, গ্রামাঞ্চলে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি, ব্যাপক হারে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহার বৃদ্ধি, বিভিন্ন ধরনের নতুন ডিজিটাল কনটেন্ট, মানুষের আয় বৃদ্ধি, ইত্যাদির কথা বলা হয়েছে।

ফলে আগামী দশকে মোবাইল ডেটা গ্রাহকের সংখ্যা ২০২০ সালের ৪ কোটি ৭০ লাখ থেকে বেড়ে ১১ কোটি ৮০ লাখ হতে পারে বলে প্রতিবেদনের 'বাংলাদেশ টেলিকম সেক্টর আউটলুক' অংশে উল্লেখ করা হয়েছে।

তহবিল ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠানটি গবেষণা ও অনুমিত সংখ্যার ভিত্তিতে এই প্রতিবেদন চূড়ান্ত করেছে।

ইউসিবি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের একজন বিনিয়োগ বিশ্লেষক ফারহিন এস রহমান বলেন, 'গত কয়েক বছরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহার বাড়ার কারণে মোবাইল ডেটার ব্যবহারও বেড়েছে। বৈশ্বিক মহামারি মানুষকে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ বাড়ানো ও বিনোদনের বাইরেও ইন্টারনেটের বহুমুখী ব্যবহার শিখিয়েছে।'

'সুতরাং আমরা বলতে পারি, ডেটার বহুমুখী ব্যবহারের নতুন যুগ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে।'

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিটি স্মার্টফোনে মাসিক মোবাইল ডেটার ব্যবহার গড়ে ২০২০ সালের ২ গিগাবাইট (জিবি) থেকে বেড়ে ২০২১ সালের প্রথম ছয় মাসে ৩ দশমিক ৬ জিবি হয়েছে।

তবে এক্ষেত্রে প্রতিবেশী ভারতের থেকে অনেকটাই পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। ভারতের স্মার্টফোন ব্যবহারকারীরা মাসে গড়ে ১৩ দশমিক ৪ জিবি মোবাইল ডেটা ব্যবহার করেছেন গত বছর।

ইন্টারনেটের বহুমুখী ব্যবহার ও মোবাইল ইন্টারনেট সেবার জনপ্রিয়তা বাড়ার কারণে বাংলাদেশে মোবাইল ডেটার গ্রাহকের সংখ্যা বাড়বে বলে মত প্রকাশ করেন ফারহিন।

২০১৬ থেকে প্রতি বছর মোবাইল ইন্টারনেট গ্রাহকের সংখ্যা গড়ে ১০ দশমিক ৪ শতাংশ করে বেড়েছে। আগামী দশকে প্রত্যাশা করা হচ্ছে এই খাতে বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ৯ দশমিক ৬ শতাংশ হবে, যা ২০৩০ সালের মধ্যে গ্রাহকের সংখ্যাকে ১১ কোটি ৮০ লাখে নিয়ে যাবে।

বর্তমানে দেশের মোট জনসংখ্যার ২৮ দশমিক ৮ শতাংশ, অর্থাৎ ৪ কোটি ৭৬ লাখ মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন।

২০২০ এর ডিসেম্বরে মোবাইল ফোন গ্রাহকের সংখ্যা ছিল ৯ কোটি এবং এ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী বছরগুলোতে গ্রাহক বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে।

প্রত্যাশিত প্রবৃদ্ধি আসবে তরুণ প্রজন্ম ও দারিদ্র্য সীমার নিচে থাকা মানুষদের মধ্য থেকে।

বর্তমানে ১০ বছরের কম বয়সী শিশুর সংখ্যা দেশে ২ কোটি ৮০ লাখ এবং আরও ৩ কোটি ৪০ লাখ মানুষ আছেন যারা দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাস করছেন। এই জনগোষ্ঠী বর্তমানে মোবাইল ফোন ব্যবহার না করলেও ভবিষ্যতে মোবাইল গ্রাহক হতে পারেন বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

প্রতিবেদনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেরও বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

বাংলাদেশে ২০২১ এর শুরুতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৪ কোটি ৫০ লাখ ছিল। তাদের মধ্যে ৯৮ দশমিক ৮ শতাংশ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করার জন্য মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন। ওটিটি প্ল্যাটফর্ম এবং ইউটিউবে ডিজিটাল বাংলা কনটেন্টের কারণে ডেটার ব্যবহার অনেক বেড়েছে।

ফারহিন বলেন, 'ই-শিক্ষা, গেমিং ও বিভিন্ন অ্যাপ তরুণ-তরুণীদের মধ্যে জনপ্রিয়তা পেয়েছে।'

করোনাভাইরাস মহামারির কারণে সামাজিক দূরত্ব রক্ষার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। ফলে ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহার বেড়ে যায়। এই সংকটের কারণে মানুষ স্ক্রিনের সামনে বেশি সময় ব্যয় করছে। মানুষ এখন ইন্টারনেটের মাধ্যমে কাজ ও যোগাযোগ করছে এবং শিক্ষা ও বিনোদন পাচ্ছে।

২০২০ এর ডিসেম্বরের তথ্য অনুযায়ী, দেশের জনসংখ্যার ৯৫ শতাংশ এখন ফোর-জি মোবাইল নেটওয়ার্কের আওতায় চলে এসেছে। তবে তাদের ৬৭ শতাংশ এখনও মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহার করেন না।

ফলে বাংলাদেশে অন্যান্য সমপর্যায়ের দেশের তুলনায় ইন্টারনেট ব্যবহারে সবচেয়ে বেশি বৈষম্য রয়েছে। তবে এই বৈষম্য ডেটা থেকে আরও রাজস্ব আয়ের সম্ভাবনাকে বাড়িয়েছে, জানান ফারহিন।

দাম বেশি হওয়ায় এখনো ফোর-জি সুবিধাযুক্ত হ্যান্ডসেট ও সিম কার্ডের ব্যবহার তুলনামূলকভাবে কম।

ভোক্তাদের আমদানিকৃত হ্যান্ডসেটের ওপর ৫৭ শতাংশ কর দিতে হয়। স্থানীয়ভাবে হ্যান্ডসেট উৎপাদিত হলেও এখনও ২০ শতাংশ হ্যান্ডসেট বাইরে থেকে আমদানি করার প্রয়োজন হয়।

দেশি ও বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো স্থানীয়ভাবে স্মার্টফোনের অ্যাসেম্বলি প্রক্রিয়া শুরু করেছে। আরও উন্নত কভারেজের মাধ্যমে বেশি করে মানুষ টেলিযোগাযোগ সেবার আওতায় আসছে।

২০১৭ সালে বাংলাদেশে ভিডিও গেমসের বাজার ছিল ৬২ মিলিয়ন ডলারের যা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে তৃতীয় বৃহত্তম। স্মার্টফোনের ব্যবহার বাড়া এবং মানুষ গেমস তৈরি করার দক্ষতা ও জ্ঞান অর্জন করায় বাংলাদেশ মোবাইল গেমিং শিল্প থেকে আগামী দশকে বড় আকারের প্রবৃদ্ধি পেতে পারে বলে প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে।

ই-শিক্ষা প্ল্যাটফর্মগুলো আরও প্রবৃদ্ধি পেতে থাকবে কারণ এর মাধ্যমে শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীরা জ্ঞান আহরণ করে বাস্তব জীবনের জন্য নিজেদেরকে আরও ভালো করে প্রস্তুত করতে পারে।

ফারহিন আরও জানান, বিভিন্ন ধরনের মোবাইল অ্যাপের ব্যবহার বাড়ছে, যার অর্থ মোবাইল ডেটার ব্যবহারও বাড়ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, জীবনযাত্রা, শিক্ষামূলক, বিনোদন, গেমিং, ব্যবসা বাণিজ্য সংক্রান্ত যোগাযোগ, মোবাইল আর্থিক সেবা অথবা ই-কমার্স; সব খাতেই গ্রাহকের অভিজ্ঞতার উন্নয়নের জন্য অ্যাপের ব্যবহার বাড়ছে।

বাংলাদেশে টেলিকম খাতে মূলত তিনটি প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আছে। গত পাঁচ বছর গ্রামীণফোন, রবি এবং বাংলালিংকের রাজস্বের বার্ষিক প্রবৃদ্ধি সম্মিলিতভাবে ৫.৫ শতাংশ হয়ে ৩ দশমিক ২ বিলিয়ন হয়েছে।

ফারহিন বলেন, 'টেলিকম খাতে দুইটি মূল চালিকাশক্তি হবে গ্রাহকের সংখ্যা এবং ও ফোর-জি নেটওয়ার্কে অন্তর্ভুক্তির হার।'

২০২৫ সালের মধ্যে মোট গ্রাহকের মধ্যে ৫৪ শতাংশই ফোর-জি নেটওয়ার্কে অন্তর্ভুক্ত হবেন বলে আশা প্রকাশ করা হয়েছে। ৬ শতাংশ মানুষ ফাইভ-জি নেটওয়ার্কের আওতায় থাকবেন এবং খুবই কম সংখ্যক মানুষ টু-জি ও থ্রি-জি নেটওয়ার্কের ওপর নির্ভরশীল হবেন।

এই খাতের মূল সমস্যাগুলো নিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডেটার প্রাইসিং এর ক্ষেত্রে কোন নীতিমালা না থাকায় এখানে ডেটা রাজস্ব হারানোর ঝুঁকি রয়েছে।

'এছাড়াও, করের ক্ষেত্রে কঠোর নীতিমালা টেলিকম খাতকে দুর্দশাগ্রস্ত করেছে', বলেন ফারহিন।

বাংলাদেশে টেলিযোগাযোগ খাতে মোট রাজস্বের ৪৪ শতাংশ হিসেবে পরিশোধিত হয়। এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে এই হার ২৪ শতাংশ।

তিনি বলেন, 'উচ্চ করের হার এই শিল্পকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে এবং বড় আকারের বিনিয়োগের ক্ষেত্রকে সংকুচিত করেছে।'

অনুবাদ করেছেন মোহাম্মদ ইশতিয়াক খান

Comments

The Daily Star  | English

Former CEC ATM Shamsul Huda passes away at 83

As CEC, Huda oversaw the ninth parliamentary elections in 2008

1h ago