২৮ দিন পর ক্লাসে ফিরলেন শিক্ষক হৃদয় মণ্ডল

২৮ দিন পর আজ মঙ্গলবার ক্লাসে ফিরেছেন শিক্ষক হৃদয় মণ্ডল। ছবি: সাজ্জাদ হোসেন/স্টার

মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার বিনোদপুর রামকুমার উচ্চ বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণির গণিত বিষয়ে ক্লাস নিয়েছেন শ্রেণিশিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডল।

 ২৮ দিন পর আজ মঙ্গলবার ক্লাসে ফিরেছেন তিনি। এরপর জনপ্রতিনিধি, শিক্ষার্থী, শিক্ষকদের অংশগ্রহণে স্কুল মাঠপ্রাঙ্গণে একটি সম্প্রীতি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

'ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতে'র অভিযোগে করা মামলায় গত ২২ মার্চ থেকে কারাগারে ছিলেন শিক্ষক হৃদয় মণ্ডল। এরপর ১০ এপ্রিল মুন্সিগঞ্জ আদালত থেকে জামিন পেয়ে কারামুক্ত হন তিনি।

আজ মঙ্গলবার ক্লাস শেষে শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, '৬২ জন ছাত্রের মধ্যে ৪ জন ছাত্র উপস্থিত ছিল। ছাত্র কম থাকায় কারণে মন খারাপ লেগেছে। তবে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ক্লাস নিয়েছি। স্কুলের সহকর্মীদের সঙ্গে এখনও স্বাভাবিক সম্পর্ক গড়ে উঠেনি। আমি আমার কাজে সকাল থেকে ব্যস্ত ছিলাম। বাকি শিক্ষকরা তাদের কাজে ছিল। কারাগারে যখন ছিলাম তখন আবার ক্লাসে ফেরা নিয়ে আশঙ্কায় ছিলাম। কিন্তু সবাই যখন আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে তখন আশা দেখেছি। এখন থেকে নিয়মিত ক্লাস নেবো।'

'বাসায় শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়াবো। আমার বিশ্বাস আমার কাছে আরও শিক্ষার্থী আসবে,' বলেন তিনি।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'মামলাটি প্রত্যাহারের ব্যাপারে স্কুল কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেবেন। আমি চাইব আমার ক্লাসে যাতে ছাত্ররা আগের মতো ফিরে আসুক।'

এদিকে, সম্প্রীতি সমাবেশ অনুষ্ঠানে স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আলমগীর খানের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মুন্সিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র ফয়সাল বিপ্লব।

সভায় মেয়র বলেন, 'শিক্ষক হৃদয় মন্ডলের বাড়িতে কয়েকটি সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা যেতে পারে। কেউ যদি ভাবেন শিক্ষক হৃদয় মণ্ডল একা তাহলে তিনি বোকার রাজ্যে আছেন। স্কুল নিয়ে যদি কুচক্রী মহলের তৎপরতা থাকে সেটি এখনই থেমে যাক। বাংলাদেশের মধ্যে মুন্সিগঞ্জ জেলাটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির একটি মডেল। সাম্প্রদায়িক শক্তির দাগ বসতে দেওয়া যাবে না।'

তিনি আরও বলেন, 'বর্তমান সময়টি মিডিয়ার যুগ। দাঁড়ি, কমা, সেমিকোলন বাদ দিয়ে প্রচার হয়। আমরা সবার অবস্থান থেকে যেন সাবধানে কথা বলি।'

বিনোদপুর রামকুমার উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলাউদ্দিন আহমেদ বলেন, 'সকাল সাড়ে ১১ টায় ক্লাস নিয়েছেন শিক্ষক হৃদয় মণ্ডল। দশম খ শাখার ক্লাসে ছাত্রদের উপস্থিতি কম থাকার বিষয়টি রহস্যজনক। কারণ, শিক্ষক হৃদয় মন্ডলের ক্লাস নেওয়ার বিষয়টি সব শিক্ষার্থীদের জানানো হয়েছিল। শিক্ষকদের হাজিরা খাতায় তিনি ২৬ দিন পর স্বাক্ষর করেছেন।'

তিনি আরও জানান, গত ২১ মার্চ শিক্ষার্থীদের লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলকে শোকজ করা হয়েছিল। কিন্তু এরপর তার বিরুদ্ধে মামলা হয়, তিনি কারাগারে থাকেন। এরজন্য স্কুলের নিয়ম অনুযায়ী ১৩ এপ্রিল তাকে আবার শোকজের জবাব দিতে বলা হয়। তিনি আজ মঙ্গলবার শোকজের জবাব দিয়ে ক্লাসে ফিরেছেন। ছাত্ররা তাদের ভুল বুঝতে পেরেছে তাই নতুন করে ক্লাসে আর কোনো বিশৃঙ্খলা করবে না।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'ঈদের আগেই শিক্ষক হৃদয় মন্ডলের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারের বিষয়ে আমরা আলোচনা করবো। এছাড়া আদালতে যেদিন হাজিরা থাকবে ঐদিন ছুটিতে থাকবেন তিনি।'

প্রসঙ্গত, 'ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতে'র অভিযোগে গত ২২ মার্চ রাত সাড়ে ১০ টায় শিক্ষক হৃদয় মন্ডলের বিরুদ্ধে ২৯৫ ও ২৯৫(এ) ধারায় মুন্সিগঞ্জ সদর থানায় মামলা করেন একই স্কুলের অফিস সহকারি(ইলেক্ট্রিশিয়ান) আসাদ মিয়া। এরপর গত ২৩ ও ২৮ মার্চ জামিন নামঞ্জুর করে। এরপর ১০ এপ্রিল জামিন শুনানি হলে আদালত শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলকে জামিন দিয়ে ঐদিন বিকেলে কারাগার থেকে মুক্তি দেন। এরপর ১৩ এপ্রিল শিক্ষা অধিদফতর কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটির কাছে সাক্ষ্য দিয়ে স্কুলে এসেছিলেন।

 

Comments

The Daily Star  | English

Bangladesh tops sea arrivals to Italy

The number of Bangladeshis crossing the perilous Mediterranean Sea to reach Italy has doubled in the first two months this year in comparison with the same period last year.

3h ago