৩ কিলোমিটার পথ হেঁটে টিসিবির তেল, চিনি, ডাল

দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে ৪৬০ টাকায় ২ কেজি সয়াবিন তেল, ২ কেজি চিনি আর ২ কেজি মসুর ডাল পেয়েছেন টাঙ্গাইলের করোটিয়া ইউনিয়নের গোসাইবাড়ি কুমুল্লী গ্রামের ষাটোর্ধ্ব জমেলা বেগম। ইউনিয়ন পরিষদ ভবন থেকে তার বাড়ির দূরত্ব প্রায় ৩ কিলোমিটার।
প্রায় তিন মাইল হেঁটে এসে টিসিবির নিত্যপণ্য কিনে বাড়ি ফেরা। ছবি: মির্জা শাকিল/ স্টার

দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে ৪৬০ টাকায় ২ কেজি সয়াবিন তেল, ২ কেজি চিনি আর ২ কেজি মসুর ডাল পেয়েছেন টাঙ্গাইলের করোটিয়া ইউনিয়নের গোসাইবাড়ি কুমুল্লী গ্রামের ষাটোর্ধ্ব জমেলা বেগম। ইউনিয়ন পরিষদ ভবন থেকে তার বাড়ির দূরত্ব প্রায় ৩ কিলোমিটার।

টাঙ্গাইলে আজ রোববার সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য বিক্রি শুরু করেছে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। সকালে সদর উপজেলার করটিয়া ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের সামনে দীর্ঘ সময় রোদে দাঁড়িয়ে মানুষ টিসিবির তেল, চিনি ও ডাল সংগ্রহ করেন। সেখানেই জমেলা বেগমের সঙ্গে কথা হয়।

পণ্য নিয়ে হেঁটে বাড়ি ফিরবার পথে তিনি ডেইলি স্টারকে জানান, ইউপি চেয়ারম্যান কার্ডটি পাইয়ে দিয়েছেন।

বললেন, 'বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী ৬৬০ টাকার পণ্য ৪৬০ টাকায় পেয়েছি, ২০০ টাকা কমে। আরও কিছু বেশি জিনিস পেলে বা যা পেয়েছি তা বাজারদরের অর্ধেকে পেলে আরও খুশি হতাম।'

তবে টিসিবির ফ্যামিলি কার্ড না পাওয়ায় কিছু কিনতে পারেননি মীরের বেতকার গ্রামের সাবিনা আক্তার। বলেন, 'আমি কার্ড নিতে ইউনিয়ন পরিষদে গিয়েছিলাম। বলা হলো তালিকায় আমার নাম নেই। আমাকে আগামীকাল যেতে বলল। আজ সব কাজ ফেলে এসেছি, যাতায়াতে ৫০ টাকা খরচ হয়েছে। কাল আরও ৫০ টাকা খরচ হবে। কিন্তু তাতেও যে কার্ড পাবো সে নিশ্চয়তা তো নেই।'

সাবিনার মতোই অনেককে দেখা গেল একই অভিযোগ জানাতে। প্রথম দিনে বিতরণ করা কার্ডের সংখ্যা কম জানিয়ে তাদের অনেকেই ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান-মেম্বারদের কাছে কার্ডের জন্য ধরনা দিচ্ছেন।

তাদের মধ্যে ১ নম্বর ওয়ার্ডের কহিনুর বেগম এবং সাইদ আলী কার্ডের জন্য করটিয়া ইউনিয়নের পরিষদ কার্যালয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য শাহীনুল ইসলামের খোঁজ করছিলেন।

শাহীনুল ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, করটিয়া ইউনিয়নের মোট ১২টি ওয়ার্ডের ৪০ হাজার ভোটারের মধ্যে কার্ড দেওয়া হয়েছে ২ হাজার ৩০০ পরিবারকে। হিসাব অনুযায়ী প্রতিটি ওয়ার্ডে প্রায় ২০০ পরিবার কার্ড পাবে।

'আমার ওয়ার্ডে মোট ভোটার সংখ্যা ৪ হাজার ৮০০ জন। আমাকে বিতরণের জন্য দেওয়া হয়েছে ৫০টি কার্ড। আমি তালিকা অনুযায়ী কার্ড বিতরণ করেছি। আমার এলাকার বাকি কার্ডগুলো বিতরণের জন্য দলীয় নেতা-কর্মীদের দেওয়া হয়েছে। এখন অনেক মানুষ আমার কাছে কার্ডের জন্য আসছেন। বাধ্য হয়ে আমি তাদের জাতীয় পরিচয় পত্র জমা নিচ্ছি। এখন আমি কার্ড দেবো কোথা থেকে?'

তবে করটিয়ার ইউপি চেয়ারম্যান খালেকুজ্জামান মজনু চৌধুরী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'দলীয় নেতা-কর্মীদের দিয়ে কার্ড বিতরণের সুযোগ নেই। করোনাকালীন দরিদ্র মানুষের তালিকা ও নতুন তালিকার সমন্বয়ে টিসিবির কার্ডের জন্য তালিকা করা হয়েছে। কার্ডগুলো তালিকাভুক্ত গরিব পরিবারগুলোকে দেওয়া হয়েছে। এখন এতো মানুষ কার্ডের জন্য আসছেন যে আমরা বিপদে পড়ে গেছি।'

সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রানুয়ারা খাতুন বলেন, এই উপজেলায় মোট ২৬ হাজার ১৪টি কার্ড দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে করোনাকালে তালিকা করা ১০ হাজার উপকারভোগী রয়েছেন। বাকি ১৬ হাজার কার্ডের মধ্যে ৬ হাজার পৌর এলাকার জন্য রেখে বাকি ১০ হাজার কার্ড আয়তন এবং সংখ্যানুপাতে ১২টি ইউনিয়নে বিতরণের জন্য ইউপি চেয়ারম্যানদের দেওয়া হয়েছে।

তবে সাশ্রয়ী দামে যারা এসব পণ্য কিনতে আসছেন তারা জানিয়েছেন,  সামগ্রীগুলো মেম্বার বা চৌকিদার দিয়ে তালিকাভুক্তদের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হলে ভালো হতো। এতে নিম্নআয়ের মানুষগুলোর যাতায়াত খরচ এবং বহুদূর থেকে আসার যে ভোগান্তি তা কমতো। বিষয়টি বিবেচনার অনুরোধ তাদের।

Comments

The Daily Star  | English

Pollution claims 2.72 lakh lives in one year

Alarming levels of air pollution, unsafe water, poor sanitation, and exposure to lead caused over 2.72 lakh premature deaths in Bangladesh in 2019.

5h ago