‘৪টি ঘর জ্বালিয়ে দিয়েছে, গরুটিও নিয়ে গেছে’

মাঝিপাড়ায় দুই ছেলের পরিবার নিয়ে রাস্তার পাশের একটি বাড়িতে বাস করতেন ৮০ বছরের রুহিনি চন্দ্র দাস। গত রোববারের হামলার পর পরিবারের ১০ সদস্য নিয়ে তিনি এখন ঠাঁই নিয়েছেন রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির একটি তাঁবুতে।
এবার শারদীয় দুর্গোৎসবে 'কোরআন অবমাননার' কথিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে দেশের বিভিন্ন জায়গার মন্দির-মণ্ডপে হামলা, সহিংসতা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এর ধারাবাহিকতায় একটি ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে রোববার রাত ১০টার দিকে রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার রামনাথপুর ইউনিয়নের মাঝিপাড়া, বটতলায় হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্তত ২৫টি বাড়ি-দোকানে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। লুট করে নেয় সবকিছু। আক্রান্ত হয় ৬৬টি পরিবার।

ওই দিন দুই ছেলের থাকার ঘরসহ রুহিনি চন্দ্রের ৪টি ঘর জ্বালিয়ে দেয় হামলাকারীরা। তাতে ঘরের সব আসবাবপত্রও পুড়ে যায়।
এই পরিবারের মালিকানায় একটা মোটরসাইকেলও ছিল। তাতে চড়ে রাজমিস্ত্রির কাজ করতে যেতেন রুহিনি চন্দ্রের দুই ছেলে। সেটাও পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।

আগুনে সব হারানো পরিবারটি গত তিন দিনে প্রশাসন ও বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার কাছ থেকে সাহায্য হিসেবে পেয়েছেন ২ বাণ্ডিল ঢেউটিন, নগদ ৩২ হাজার টাকা ও ২০ কেজি চাল।
আজ বুধবার দুপুরে রুহিনি চন্দ্র দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'হামলায় যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তাতে এই সাহায্য দিয়ে অল্প সময়ে সবকিছু ঠিক করা সম্ভব না।'
'কবে সব ঠিক করতে পারব জানি না'- কথা বলতে বলতে পোড়া ঘরের দিকে চেয়ে থাকেন রুহিনি।

রুহিনির মেয়ে চিনিবালার কাছ থেকে জানা যায়, তাদের বাড়িতে একটি গাভী ছিল। সঙ্গে একটি বাছুর। হামলাকারীরা বাছুর রেখে গাভীটি নিয়ে গেছে।
রুহিনি বলেন, 'সেদিন রাতে হামলাকারীরা সবাইকে বাড়ি থেকে বের করে আগুন ধরিয়ে দেয়। ঘর থেকে কিছু বের করার সুযোগও দেয়নি তারা।'
হামলার পর থেকে তিন দিন ধরে এই বৃদ্ধের বাড়িতে চুলা জ্বলেনি। প্রশাসন থেকে দেওয়া একটা তাঁবুতে থাকছেন আরও ৩০ জনের সঙ্গে।
দুই ছেলের কথা জানতে চাইলে এই বৃদ্ধ বলেন, 'কোথায় যেন সাহায্য দিচ্ছে। সেটা নিতে গেছে।'
Comments