৪ খাল রক্ষায় ৯৪৫ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষায়: তাপস

চারটি বড় খাল এবং এর সাতটি শাখা ও উপশাখা অবৈধ দখল থেকে রক্ষা, খনন ও রক্ষণাবেক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ৯৪৫ কোটি টাকার একটি প্রকল্প নিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। প্রকল্পটি এখন সরকারের অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে।
ডিএসসিসির মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস নগর ভবনে তার কার্যালয়ে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বাসসকে বলেন, 'আমরা শ্যামপুর, জিরানী, মান্ডা ও কালুনগর খাল এবং এর সাতটি শাখা অবৈধ দখলমুক্ত করা, খনন, রক্ষণাবেক্ষণ ও সংরক্ষণের জন্য প্রায় ৯৪৫ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছি।'
তিনি বলেন, 'খাল পুনরুদ্ধার, সংস্কার এবং নান্দনিক পরিবেশ সৃষ্টি প্রকল্প' শীর্ষক প্রকল্পের একটি প্রস্তাব মন্ত্রণালয় থেকে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। এটি এখন অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
ব্যারিস্টার তাপস বলেন, ডিএসসিসির আওতাধীন খাল ও এর শাখা-প্রশাখাগুলোতে সারা বছর পানি প্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও পরিবেশের কথা মাথায় রেখে পার্ক ও রাস্তা সংলগ্ন প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও রোড নেটওয়ার্ক নির্মাণের মাধ্যমে খালগুলোকে একটি নান্দনিক রূপ দেয়া হবে।
মেয়র বলেন, অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদে ডিএসসিসি সারা বছর ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করবে।
গত ৩১ ডিসেম্বর ওয়াসার কাছ থেকে ৩৪ বছর পর খাল, বক্স-কালভার্ট ও ড্রেনের দায়িত্ব ডিএসসিসি নিয়েছে উল্লেখ করে ব্যারিস্টার তাপস বলেন, তারা চলতি বছরের ২ জানুয়ারি থেকে বর্জ্য অপসারণের পাশাপাশি অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছেন।
তিনি আরও বলেন, 'ওয়াসা ডিএসসিসির কাছে যে পাম্পগুলো হস্তান্তর করেছে তার অধিকাংশই অকার্যকর অবস্থায় পাওয়া গেছে এবং আমরা অল্প সময়ের মধ্যে সেগুলো সচল করেছি।'
তিনি জানান, চলতি বছরের ১১ জানুয়ারি থেকে ২৩ মার্চ পর্যন্ত বেশ কয়েকটি অভিযানে জিরানী, মান্ডা এবং শ্যামপুরের খাল সংলগ্ন অবৈধ দখল থেকে প্রায় ৭৩০ শতাংশ বা ৭ দশমিক ৩০ একর জমি অবৈধ দখলমুক্ত করা হয়েছে। এ সময় মোট ১৫৫টি মামলা দায়ের করে ৪ লাখ ৯১ হাজার ৯০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয় এবং ১৪৫টি স্থায়ী ও ২২০টি অস্থায়ী স্থাপনার অংশ ভেঙে ফেলা হয়। অবৈধভাবে দখলকৃত জায়গা উদ্ধারের পর এ পর্যন্ত ২ হাজার ৭২৭টি সীমানা পিলার স্থাপন করা হয়েছে।
মেয়র বলেন, চলতি বছরের জানুয়ারিতে ওয়াসার কাছ থেকে দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে তারা ইতোমধ্যে খাল, বক্স-কালভার্ট ও ড্রেন থেকে ৮ লাখ টন বর্জ্য সংগ্রহ করেছেন।
তিনি বলেন, খাল, বক্স-কালভার্ট ও ড্রেন থেকে বর্জ্য অপসারণের পর সেসব জলাশয়ের পানি ধারণের ক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে, যা এবার উল্লেখযোগ্যভাবে জলাবদ্ধতা নিরসনে সহায়তা করেছে।
মেয়র বলেন, তারা নগরবাসীকে জলাবদ্ধতামুক্ত একটি নগরী উপহার দিতে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। তারা এটিকে তাদের শীর্ষ অগ্রাধিকারের একটি হিসাবে নির্ধারণ করেছেন।
তিনি জানান, তারা বর্জ্যরে স্তূপ অপসারণ করে যেখান দিয়ে পানি প্রবাহ হয়, সেই মুখগুলো খুলে দিয়েছেন যা দ্রুত পানি নিষ্কাশনে সহায়তা করে।
মেয়র বলেন, 'আপনারা (নগরবাসী) দেখেছেন যে ডিএসসিসি এলাকায় গত কয়েক বছরের তুলনায় এবার জলাবদ্ধতা কম হয়েছে।'
দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে ব্যারিস্টার তাপস বলেন, তারা আদি বুড়িগঙ্গা চ্যানেল পুনরুজ্জীবিত করার জন্য একটি প্রি-ওয়ার্ক সার্ভে সম্পন্ন করেছেন এবং এই লক্ষ্যে একটি পরামর্শক সংস্থা নিয়োগের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
তিনি বলেন, 'আমরা পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের পরামর্শ অনুযায়ী আদি বুড়িগঙ্গা চ্যানেল পুনরুজ্জীবিত করার কাজ শুরু করব।'
Comments