৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ ‘মানুষ অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছে’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি: সংগৃহীত

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ৭ মার্চে দেওয়া ভাষণে যে নির্দেশনা দিয়েছিলেন, তা বাংলাদেশের মানুষ অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছেন।

আজ সোমবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে 'ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ ২০২২' উদযাপনে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, 'আজ ঐতিহাসিক ৭ মার্চ। বাঙালির স্বাধীনতা অর্জনের জন্য এ দিনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আজকের এই দিনে আমরা অত্যন্ত শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। শ্রদ্ধা জানাই জাতীয় ৪ নেতার প্রতি, ৩০ লাখ শহীদের প্রতি, ২ লাখ মা-বোনের প্রতি। ৭৫ এর ১৫ আগস্ট আমরা মা, আমার ভাইয়েরাসহ যারা ঘাতকের নির্মম বুলেটে শাহাদত বরণ করেছেন তাদেরকেও আমি স্মরণ করি।'

'৭ মার্চের ভাষণ, যে ভাষণ বাঙালি জাতিকে অনুপ্রেরণা দিয়েছিল। একটি ভাষণের মধ্য দিয়েই একটি জাতি উদ্বুদ্ধ হয়েছিল সশস্ত্র গেরিলা যুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য এবং স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনার।'

'ওই মূহুর্তে ঠিক কী কী করণীয় সেই নির্দেশনাও জাতিকে তিনি দিয়েছিলেন। অর্থাৎ অসহযোগের যে আন্দোলনের ডাক দেন, বাংলাদেশের মানুষ অক্ষরে অক্ষরে তা পালন করেছিল। ঠিকই খাজনা-ট্যাক্স বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, একটি টাকাও পূর্ববঙ্গ থেকে পাকিস্তানে যেত না। প্রতিটি বাঙালি এই নির্দেশনা মেনে চলছিলেন। একইসঙ্গে প্রতিটি বাঙালিকে গেরিলা যুদ্ধের প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলা এবং তৃণমূল অঞ্চলে সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তোলার নির্দেশ দিয়েছিলেন। বাংলাদেশের মানুষ কিন্তু সেই কথা অক্ষরে অক্ষরে মেনেছিল।'

বাঙালি জাতির জন্য আত্মমর্যাদার ব্যবস্থা করার লক্ষ্যে ১৯৪৮ সাল থেকে বঙ্গবন্ধু সংগ্রাম শুরু করেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'এই সংগ্রাম শুরু হয়েছিল ভাষা আন্দোলন থেকে। এরপর ধাপে ধাপে তিনি বাঙালিকে এগিয়ে নিয়ে যান।'

তিনি আরও বলেন, 'বাংলাদেশে সম্ভবত তিনি একমাত্র নেতা, যিনি আওয়ামী লীগ সংগঠনকে শক্তিশালী করার জন্য নিজের মন্ত্রিত্ব ছেড়েছিলেন। মন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগ করে তিনি আওয়ামী লীগ সংগঠনকে শক্তিশালী করেন। এটা করার পেছনে আরেকটা কারণ ছিল। আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন মওলানা ভাসানী। তিনি আওয়ামী লীগ ছেড়ে গিয়ে আরেকটি দল করেন। তখন সংগঠনটা গড়ে তোলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব পদত্যাগ করে এই সংগঠনটা গড়ে তোলেন।'

বঙ্গবন্ধুকে বার বার কারাবন্দি করা হলেও বাঙালির স্বাধীনতার লক্ষ্যে তিনি অবিচল ছিলেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'তিনি যখন ৬ দফা দিলেন, এত অল্প সময়ের মধ্যে মানুষ এই ৬ দফাকে তাদের মুক্তি সনদ হিসেবে গ্রহণ করলেন। ৬ দফা দাবি আন্দোলন অতি দ্রুত ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেল। এই ৬ দফা দেওয়ার পরেই তাকে আবার গ্রেপ্তার করা হলো। ৬৮ সালের ১৮ জানুয়ারি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বন্দি অবস্থায় ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে যাওয়া হলো এবং তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহী মামলা দেওয়া হলো, যেটা আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা নামে পরিচিত।'

'বাঙালি কখনোই বসে থাকেনি। এই মিথ্যে মামলা প্রত্যাহার এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মুক্তির জন্য ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগ ও অন্যান্য সব ছাত্র সংগঠন একত্রিত হয়ে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তুলে সংগ্রাম শুরু করে এবং সেই আন্দোলনের মুখেই আইয়ুব খানের পতন ঘটে।'

'আইয়ুব খান উদ্যোগ নিয়েছিল রাউন্ডটেবিল কনফারেন্সের। প্যারোলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে মুক্তি দিয়ে নিয়ে যাবে। আমার মা বাধা দিয়েছিলেন। তিনি বলেন, প্যারোলে যাবে না, সমস্ত মামলা প্রত্যাহার করতে হবে, মামলা প্রত্যাহার হলেই তিনি যেতে পারবেন। আইয়ুব খান বাধ্য হয়েছিল সেই সংগ্রামের মুখে মামলা প্রত্যাহার করতে।'

আইয়ুব খানের পতনের পর সামরিক শাসক ইয়াহিয়া খান ক্ষমতায় আসার পরের ইতিহাস তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, 'ডিসেম্বরে ইলেকশন, এরপরে জানুয়ারি যায়, ফেব্রুয়ারি। তখন সে (ইয়াহিয়া) ফেব্রুয়ারিতে একটা পার্লামেন্ট ডেকেছিল। কিন্তু ভুট্টো সেখানে বাধ সাধে। তারপর আবার পার্লামেন্টের ডেট দেওয়া হয় মার্চে। সেটাও পহেলা মার্চ বন্ধ করে দেওয়া হয়। যখনই পহেলা মার্চের এই পার্লামেন্ট বন্ধ করে দেওয়া হলো তখন এই দেশের মানুষ বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। তখন আবার পার্লামেন্ট ডাকে ২৫ মার্চ এবং ১০ তারিখে রাউন্ডটেবিল কনফারেন্সের ডাক দেয় ইয়াহিয়া খান। সেই রাউন্ডটেবিলের জন্য বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানে যেতে রাজি ছিলেন না। তার কথা ছিল মেজরিটি পূর্ববঙ্গ পেয়েছে এখানেই অ্যাসেম্বলি বসতে হবে। আন্দোলন যে পহেলা মার্চ থেকে শুরু হয়ে গেল তারই পরিপ্রেক্ষিতে এই ৭ মার্চের ভাষণ।'

'(বঙ্গবন্ধু) ৩ তারিখে ঘোষণা দিলেন, "৭ তারিখে আমি জনসভায় কথা বলব।" সমগ্র বাংলাদেশ থেকে লাখো মানুষ ছুটে আসেন। কেউ বাঁশের লাঠি হাতে, কেউ নৌকার বৈঠা হাতে, যার যা ছিল সব নিয়ে মানুষ হাজির হয় সেখানে। এই ভাষণ যখন তিনি দিতে যাবেন, সেময় অনেক দেশের রাজনৈতিক দল এমনকি অনেক ছাত্র নেতা নানাভাবেই পরামর্শ দিতে থাকেন যে কী বলা উচিত। কয়েকজন ছাত্র নেতা তো বলেন, সরাসরি আজ স্বাধীনতার ঘোষণা দিতেই হবে, না দিলে মানুষ হতাশ হয়ে যাবে। অনেক চিন্তাবিদ অনেক পয়েন্ট লিখে লিখে দিয়ে গেছেন।'

'ঠিক যেভাবে প্যারোলে মুক্তির বিষয়ে আমার মা বাধা দিয়েছেন, সেই একইভাবে মা আমার আব্বাকে ডেকে বলেছিলেন, "সারাটা জীবন তুমি সংগ্রাম করেছ এ দেশের মানুষের জন্য। কাজেই তুমি জানো এ দেশের মানুষের জন্য কোনটা ভালো। কাজেই তোমার মনে যে কথা আসবে, তুমি ঠিক সেই কথা বলবে, কারও কথা শোনার প্রয়োজন তোমার নেই।"'

'আজকে এই ভাষণটা আপনারা দেখেন, তার কাছে কোনো কাগজ নেই, কিছুই নেই। কিন্তু তিনি একাধারে বঞ্চনার ইতিহাস বলে যাচ্ছেন, ঠিক তারপরে করণীয়। এখন আমরা যেটা শুনলাম সেটা ছোট আকারের ভাষণ। সেখানে তিনি অসহযোগ আন্দোলনে কী কী করতে হবে তার প্রত্যেকটা নির্দেশনা দিয়েছিলেন। বাংলাদেশের মানুষ অক্ষরে অক্ষরে তা পালন করেছে।'

Comments

The Daily Star  | English

US bomber jets leave UK base; Iran launches 'Fattah-1 missiles' towards Israel

Israel and Iran attacked each other for a sixth straight day on Wednesday, and Israeli air power reigns over Iran, but needs US for deeper impact

10h ago