গোল্ডিলকস নীতি: কতটা কাজ সফলতা ও সুখ আনে

ছবি: সংগৃহীত

কোনো কাজের আগে 'গোল্ডিলকস নীতি' মেনে চলতে বলেন মনস্তাত্ত্বিকেরা। এই নীতির মূল কথা হলো সব সময় এমন কাজই করা উচিত, যা সামর্থ্যের একেবারে বাইরেও নয়, আবার যোগ্যতার চেয়ে কমও নয়। কোনো একটি কাজ করার কিংবা চ্যালেঞ্জ গ্রহণের জন্য অনুকূল পরিধিকেই বলা হয় গোল্ডিলকস জোন। 

গোল্ডিলকস জোন বা গোল্ডিলকস নীতির ধারণাটি নেওয়া হয়েছে রূপকথার গল্প 'গোল্ডিলকস অ্যান্ড থ্রি বিয়ার' থেকে। যেখানে গোল্ডিলকস নামে এক সোনালি চুলের বালিকা হারিয়ে যায় এবং একটি ভালুকের বাসায় পৌঁছায়। সে বাড়িতে ৩টি ভালুক বাস করতো। তবে, তখন তারা অনুপস্থিত ছিল। কিন্তু তাদের খাবার রাখা ছিল টেবিলে। দেখা যায় গোল্ডিলক সে খাবারটিই পছন্দ করে যা তার জন্য উপযোগী অর্থাৎ খুব বেশি গরম না খুব বেশি ঠান্ডাও না। বরং দুইয়ের মাঝামাঝি।

ছবি: সংগৃহীত

আবার গোল্ডিলকস যখন বিশ্রাম নিতে যায় তখনো সে অনেক শক্ত ও অনেক নরম বিছানা বাদ দিয়ে যে বিছানাটি মাঝামাঝি আরামদায়ক এবং তার আকারের সেটি বেছে নেয় এবং ঘুমিয়ে পড়ে। 

নিজের জন্য সঠিক অনুপাত বা সঠিক পরিমাণটা খুঁজে নেওয়ার এই প্রক্রিয়াই গোল্ডিলকস নীতির মূল কথা। 

ধরা যাক কেউ টেনিস পছন্দ করে এবং তাকে খেলতে দেওয়া হলো পাঁচ-ছয় বছরের একটি বাচ্চার সঙ্গে। খেলতে গিয়ে ওই ব্যক্তি কয়েক মিনিটেই আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন কারণ সেখানে জেতা খুবই সহজ। কিন্তু যদি তাকে টেনিস খেলতে দেওয়া হয় সেরেনা উইলিয়ামস কিংবা রজার ফেদেরারের সঙ্গে, তাহলেও তিনি আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন, কারণ তার আর রজার ফেদেরারের সামর্থ্য এক নয়। এখানে জেতা খুব কঠিন এবং অসম্ভবও বটে। 

এই দুই জায়গার এক জায়গায়ও সেই ব্যক্তি ভালো করতে পারবেন না এবং উভয়ক্ষেত্রেই, কিছুক্ষণ পরই তার আগ্রহ একদম নিচে গিয়ে ঠেকবে। কারণ, একটাতেও তিনি খেলায় মজা বা সাফল্য পাচ্ছেন না। যদি কোনো কাজ বা চ্যালেঞ্জ খুব বড় বা কঠিন হয়, তবে মানুষ সেটা সম্পূর্ণ করতে চায় না। অন্যদিকে, কাজ বা চ্যালেঞ্জটি যদি খুব সহজ হয়, তবুও ব্যক্তি আগ্রহ হারাবে এবং তা সম্পূর্ণ করবে না।

ছবি: সংগৃহীত

আবার যদি এমন হয়, ওই ব্যক্তি তার লেভেলের কারও সঙ্গে খেলেন অর্থাৎ তার থেকে একটু কম কিংবা বেশি পারে। এ ক্ষেত্রে খেলাটা মোটামুটি চ্যালেঞ্জিং, মোটামুটি সহজ। কখনো কিছু পয়েন্টে সে এগিয়ে থাকবে, কখনো আবার পিছিয়ে থাকবে। কিন্তু এখানে যদি লক্ষ্য স্থির থাকে এবং পূর্ণ মনোযোগ থাকে তাহলে জেতার সম্ভাবনাও প্রচুর। অর্থাৎ এটাই সঠিক জায়গা যেখানে সে খেলাটা উপভোগ করবেন, সাফল্যও পাবেন। 

বিজ্ঞানীরা মনে করেন, কোনো একটি কাজ যদি খুব বেশি কঠিন হয়, তাহলে কাজটি করতে গেলে অনুপ্রেরণার লেভেল থাকবে একদম নিচের দিকে বা তলানীতে, মাইনাসের দিকেও বলা যেতে পারে। কাজ যত কঠিন হবে অনুপ্রেরণার মাত্রাও তত বাড়তে থাকবে। বাড়তে বাড়তে এক পর্যায়ে যখন অনুপ্রেরণা সর্বোচ্চ তখনই সেই ব্যক্তির কাঠিন্যের লেভেলও সর্বোচ্চ। সামর্থ্য আর অনুপ্রেরণার সর্বোচ্চ পরিধি যতটুকু, সেটাই গোল্ডিলক জোন, নিজের সর্বোত্তম লেভেল। সফলতা এখানেই সর্বোচ্চ। এরপর আরও বাধাঁ পার করা, আরও কঠিনের দিকে যাওয়া সম্ভব না। কিন্তু তখনো যদি কাজ চালিয়ে যেতে জোর করা হয়, তখন অনুপ্রেরণাও সর্বোচ্চ বিন্দু থেকে আবার নিচের দিকে নামতে শুরু করে। শুরুতে যখন লেভেল শূন্য তখন বিজ্ঞানীরা এটিকে বলেন 'বিরক্তি বা একঘেয়েমি' এবং শেষে অনুপ্রেরণা যখন আবার নিচের দিকে তলানীতে বা মাইনাসে তখন বলেন 'ব্যর্থতা'। 

মানব মস্তিষ্ক সম সময়ই চ্যালেঞ্জ নিতে পছন্দ করে। কিন্তু ব্যক্তিভেদে কতটুকু চ্যালেঞ্জ নেওয়া উচিত তা নির্ভর করে ব্যক্তির বর্তমান দক্ষতা ও সক্ষমতার ওপর। যার সামর্থ্যের আর আগ্রহের মিলিত বিন্দু সবচেয়ে বেশি যেখানে সেটাই তার জন্য 'একদম সঠিক' গোল্ডিলক জোন। অর্থাৎ উপযুক্ত বা সর্বোত্তম লেভেল। যেটি অবশ্যই চ্যালেঞ্জিং তবে অর্জনযোগ্য।

মনোবিজ্ঞানী গিলবার্ট ব্রিম যেমনটি বলেছেন, 'মানুষের সুখের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস হলো একটি উপযুক্ত স্তরে কাজ করা, খুব কঠিন বা খুব সহজ নয়।' 

ব্যস, এতটুকু পর্যন্তই কাজ করা উচিত তাতে থাকবে আগ্রহ, নিজেকে সুখী মনে হবে এবং হওয়া যাবে সফলও।
 

Comments

The Daily Star  | English

Bangladesh lost over Tk 226,000cr for tax evasion: CPD

CPD estimated that around 50 percent of this amount has been lost to corporate tax evasion.

2h ago