‘আমরা কী করতে পারি তা বিশ্বকে দেখাতে চাই’

তুরস্কের ইস্তান্বুলে গত মঙ্গলবার আয়োজন করা হয় চার দিনের ইন্টারন্যাশনাল ডিফেন্স ইন্ডাস্ট্রি ফেয়ার। তুরস্ক সেখানে নিজেদের তৈরি স্টিলথ যুদ্ধবিমান ও ড্রোন প্রদর্শন করে।
গতকাল শনিবার সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার প্রতিবেদনে তুরস্কের প্রতিরক্ষাশিল্পের ক্রমবর্ধমান প্রবৃদ্ধির কথা তুলে ধরা হয়।
প্রদর্শনীতে পঞ্চম প্রজন্মের স্টিলথ যুদ্ধবিমানের মডেলের সামনে দাঁড়িয়ে জাতীয় যুদ্ধবিমান প্রকল্পের ভাইস প্রেসিডেন্ট উগুর জেনজিন সংবাদমাধ্যমটিকে বলেছিলেন, 'এটি তুরস্কের জন্যে মর্যাদাপূর্ণ একটি প্রকল্প। এখানে এমন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে যা পুরো প্রতিরক্ষাশিল্পের জন্যই নতুন।'
এই যুদ্ধযানে স্থানীয় যন্ত্রাংশ বেশি সংখ্যায় ব্যবহার করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি জানান, টার্কিশ অ্যারোস্পেস এটি তৈরি করেছে। এটি তুরস্কের প্রতিরক্ষাশিল্পের মুকুটে নতুন পালক যোগ করেছে।
তুর্কি প্রজাতন্ত্রের শতবর্ষ পূর্তি উপলক্ষে এই যুদ্ধবিমানটি আগামী ২০২৩ সালে জনগণকে দেখানো হবে। এর দুই বছর পর তা বিমানবাহিনীতে যুক্ত করা হবে। এটি তুরস্কের বহু পুরাতন এফ-৪ ও এফ-১৬ যুদ্ধবিমানগুলোর পরিবর্তে ব্যবহৃত হবে।
'যদিও প্রাথমিকভাবে এতে এফ১১০ ইঞ্জিন ব্যবহার করা হচ্ছে, আমাদের লক্ষ্য শতভাগ তুরস্কে উৎপাদিত যন্ত্রাংশ ব্যবহার করা।' যোগ করেন তিনি।
আগে এই যুদ্ধবিমানটির নাম রাখা হয়েছিল 'টিএফ-এক্স'। এখন বলা হচ্ছে 'টিএফ'। রাশিয়ার কাছ থেকে এস-৪০০ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেনায় তুরস্ককে এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান প্রকল্প থেকে বাদ দেয় যুক্তরাষ্ট্র। এরপর আঙ্কারা 'টিএফ' যুদ্ধবিমান প্রকল্পের গতি বাড়িয়ে দেয়।
পশ্চিমের মিত্র দেশগুলোর সঙ্গে তুরস্ক এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান প্রকল্পে এক বিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগ করেছিল। একশ'টির বেশি এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান কেনার কথাও জানিয়েছিল তুরস্ক।
তুরস্ক ১৯৯৩ সাল থেকে প্রতি দুই বছর পর পর প্রতিরক্ষাশিল্প প্রদর্শনী আয়োজন করে আসছে। চলতি বছর ৫৩টি দেশ এই প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছে। সেখানে প্রতিনিধি এসেছে ৮৩ দেশ থেকে।
চার দিনের এই প্রদর্শনীতে ছিল সেনাদের বুট, ৯০৭ কেজি ওজনের বোমা, যুদ্ধযান, স্নাইপার স্কুপ ইত্যাদি।
তুরস্কের মহাকাশ কর্মসূচির অংশীদার ও দেশটির সেনাবাহিনীর প্রধান ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহকারী সংস্থা রকেস্তান'র মহাব্যবস্থাপক মুরাদ ইকিনচি গণমাধ্যমটিকে বলেন, 'করোনা পরিস্থিতিতেও তুরস্কের প্রতিরক্ষাশিল্প প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রেখেছে।'
তুরস্কের প্রতিরক্ষাশিল্প বিভাগের তথ্য মতে, ২০০২ সালে দেশটির প্রতিরক্ষা প্রকল্পের ব্যয় ছিল প্রায় সাড়ে পাঁচ বিলিয়ন ডলার। তা গত বছর বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫৬ বিলিয়ন ডলারে।
২০০২ সাল থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে দেশটির প্রতিরক্ষা সামগ্রীর রপ্তানি ২৪৮ মিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে তিন বিলিয়ন ডলার বেশি হয়েছে।
তুরস্কের ড্রোন প্রকল্প দেশে দেশে বেশ খ্যাতি অর্জন করেছে। কাতার, ইউক্রেন, মরক্কো, আজারবাইজান, তিউনিসিয়া ও ন্যাটো সদস্য পোল্যান্ড ইতোমধ্যে তুরস্কের ড্রোন কেনার কথা জানিয়েছে।
প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক আরদা মওলুদওগলু বলেছেন, (তুরস্কের) মিসাইলবহনকারী ড্রোনগুলো ট্যাংক, কামান ও স্থায়ী কাঠামোতে আঘাত হানতে 'খুবই কার্যকর'।
এছাড়াও, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ড্রোন হামলার ছবি প্রকাশ করে মনস্তাত্ত্বিক প্রভাবও তৈরি করা হয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
টার্কিশ অ্যারোস্পেসের এই প্রদর্শনীর এক কর্মী নাম প্রকাশ না করে সংবাদমাধ্যমটিকে বলেছেন, 'আমরা এখানে কিছু বিক্রি করার চেষ্টা করছি না। বিশ্বকে দেখাতে চাচ্ছি যে আমরা কী করতে পারি।'
Comments