মার্কিন সুপ্রিম কোর্টের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ নারী বিচারপতি: কে এই কেতানজি ব্রাউন জ্যাকসন

যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি পদে ২৩৩ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো একজন কৃষ্ণাঙ্গ নারী হিসেবে অনুমোদন পেয়েছেন কেতানজি ব্রাউন জ্যাকসন। গত বৃহস্পতিবার সিনেটে ভোটের মাধ্যমে তার নিয়োগ নিশ্চিত করা হয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে কেতানজি ব্রাউন জ্যাকসন। ছবি: এপি

যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি পদে ২৩৩ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো একজন কৃষ্ণাঙ্গ নারী হিসেবে অনুমোদন পেয়েছেন কেতানজি ব্রাউন জ্যাকসন। গত বৃহস্পতিবার সিনেটে ভোটের মাধ্যমে তার নিয়োগ নিশ্চিত করা হয়েছে।

জ্যাকসন দায়িত্ব গ্রহণের পর ৯ সদস্যবিশিষ্ট সুপ্রিম কোর্টে নারী বিচারপতির সংখ্যা হবে ৪ জন। অন্য ৫ পুরুষ বিচারপতির মধ্যে ৪ জন শ্বেতাঙ্গ ও একজন কৃষ্ণাঙ্গ। বিচারপতিদের সবাই হার্ভার্ড কিংবা ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন।

সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হিসেবে চূড়ান্ত হওয়ার পর জ্যাকসন এক বক্তৃতায় বলেন, 'আমার দাদা-দাদিরা যা কল্পনাও করতে পারতেন না, আমি এখন তার চেয়ে অনেক বেশি কিছু অর্জন করেছি। আগে তারা শুধু গ্রেড স্কুল পর্যন্ত পড়াশোনা করতেন। পরবর্তীতে তারা তাদের সন্তানদের বর্ণগতভাবে বিচ্ছিন্ন স্কুলে পাঠাতে শুরু করেন।'

তিনি বলেন, 'আমার জন্য পথ পরিষ্কার করা ছিল, যাতে আমি এ পর্যন্ত উঠতে পারি।'

যেভাবে বিচারপতি মনোনীত

সিনেটে ভোটাভোটির মাধ্যমে বিচারপতি নির্বাচিত হন কেতানজি ব্রাউন জ্যাকসন। গত ৭ এপ্রিল এই ভোট অনুষ্ঠিত হয়। সিনেটে ৫৩ জন জ্যাকসনের পক্ষে এবং ৪৭ জন বিপক্ষে ভোট দেন। ৫৩ জনের মধ্যে ৪৮ জন ডেমোক্রেট, ৩ জন রিপাবলিকান এবং ২ জন স্বতন্ত্র ভোটার ভোট দেন। রিপাবলিকান সদস্য সুসান কলিন্স, লিসা মুরকোস্কি এবং মিট রমনি পক্ষে ভোট দেন। বিপক্ষে ভোটদাতারা সবাই রিপাবলিকান।

জো বাইডেন এ বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি দেশটির সর্বোচ্চ আদালতের বিচারপতি হিসেবে জ্যাকসনকে মনোনীত করেন। এর আগে, ২৭ জানুয়ারি ৮৩ বছর বয়সী বিচারপতি স্টিফেন ব্রেয়ার অবসরে যাওয়ার ঘোষণা দেন। ওই সময় বাইডেন জ্যাকসনকে বিচারপতি মনোনীত করার বিষয়ে ইঙ্গিত দেন।

তখন বাইডেন জানিয়েছিলেন, তিনি অসাধারণ যোগ্যতা, চরিত্র, অভিজ্ঞতা এবং সততার অধিকারী একজনকে যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্টের জন্য মনোনীত করবেন এবং সেই ব্যক্তি হবেন প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ নারী।

এ বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি এপির প্রতিবেদনে জানানো হয়, বাইডেনের সংক্ষিপ্ত তালিকায় জ্যাকসন, জে. মিশেল চাইল্ডস এবং লিওন্ড্রা ক্রুগার ছিলেন।

বক্তব্য দিতে গিয়ে আনন্দ অশ্রুতে ভাসেন কেতানজি ব্রাউন জ্যাকসন। ছবি: এপি

প্রাথমিক ও শিক্ষা জীবন

জ্যাকসন ১৯৭০ সালে ওয়াশিংটন ডিসিতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি পরিবারের সঙ্গে ফ্লোরিডার মিয়ামিতে বড় হয়েছেন। সেখানে তিনি মিয়ামি পালমেটো হাইস্কুলে পড়াশোনা করেন। তার বাবা-মা স্কুল শিক্ষক হিসেবে ক্যারিয়ার শুরু করেন। জ্যাকসন যখন স্কুলে ছিলেন তখন তার বাবা আইন স্কুলে পড়াশোনা শুরু করেন। তার মা শিক্ষকতা পেশায় থাকলেও তার বাবা পরবর্তীতে আইন পেশায় যোগ দেন। স্কুল জীবন থেকেই জ্যাকসন ভালো বক্তা এবং বিতার্কিক ছিলেন।

জ্যাকসন ১৯৯২ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটিতে পড়াশোনা করেন। ১৯৯৫ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত হার্ভার্ড আইন পর্যালোচনার তত্ত্বাবধায়ক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

পেশাগত জীবন

সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি হিসেবে অনুমোদন পাওয়ার আগে জ্যাকসন যুক্তরাষ্ট্রের আপিল আদালতের কলম্বিয়া সার্কিট ডিস্ট্রিকের বিচারক ছিলেন। জ্যাকসনকে ২০২১ সালের ১৯ এপ্রিল প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এই আদালতের জন্য মনোনীত করেন এবং সিনেটে ৫৩-৪৪ ভোটে তার নিয়োগ চূড়ান্ত করা হয়। এর আগে, তিনি কলম্বিয়া জেলার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের জেলা আদালতে একজন ফেডারেল বিচারক হিসেবে ছিলেন। দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার কাছ থেকে মনোনয়ন পাওয়ার পর ২০১৩ সালে তিনি জেলা আদালতে যোগদান করেন। ২০১০ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত জ্যাকসন ইউনাইটেড স্টেটস সেন্টেন্সিং কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান ও কমিশনার ছিলেন। ফেডারেল পাবলিক ডিফেন্ডার, বেসরকারি আইনজীবী এবং বিচারপতি ব্রেয়ারসহ ফেডারেল জুডিশিয়ারির ৩টি স্তরে আইন ক্লার্ক হিসেবে তার পূর্ব অভিজ্ঞতা রয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English
books on Bangladesh Liberation War

The war that we need to know so much more about

Our Liberation War is something we are proud to talk about, read about, and reminisce about but have not done much research on.

15h ago