আজ নোয়াখালী মুক্ত দিবস

ছবি: সংগৃহীত

আজ ৭ ডিসেম্বর। নোয়াখালী মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা-জনতার প্রতিরোধের মুখে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নোয়াখালী থেকে বিতাড়িত হয়।

নোয়াখালী মুক্ত দিবসকে স্মরণ রাখতে জেলা পরিষদ নোয়াখালী টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের (পিটিআই) দক্ষিণ গেটের কাছে নির্মাণ করে স্মৃতিস্তম্ভ 'মুক্ত স্কয়ার'।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৭১ সালের ২৩ এপ্রিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নোয়াখালী দখল করে। এরপর তারা নোয়াখালী পিটিআই ও নোয়াখালী বেগমগঞ্জ চৌমুহনী চৌরাস্তার কাছে বেগমগঞ্জ সরকারি কারিগরি উচ্চ বিদ্যালয়ে ঘাঁটি গড়ে। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়ে রাজাকাররা।

জেলা শহরের শ্রীপুর ও বেগমগঞ্জের গোপালপুরে হামলা চালিয়ে শতাধিক নারী-পুরুষ ও শিশু হত্যা করে এবং বাড়িঘর-দোকানে আগুন দেয় ও লুটপাট চালায়।

এরপর দেশের ভেতরে ও ভারত থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে অস্ত্র হাতে মাঠে নামেন মুক্তিযোদ্ধারা। সেসময় জেলার কোম্পানীগঞ্জ, বামনী, বেগমগঞ্জের বগাদিয়াসহ নানা স্থানে হানাদার বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধ হয়। শহীদ হন বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা।

শুধুমাত্র নোয়াখালীর সোনাপুরের শ্রীপুর এলাকায় পাকিস্তান হানাদার বাহিনী পাখির মতো গুলি করে হত্যা করেছিল শতাধিক নিরীহ ব্যক্তিকে।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালরাতে পাকিস্তানি সেনা বাহিনী ও স্থানীয় আলবদর-রাজাকারদের নৃশংস হত্যাযজ্ঞের পর মুক্তিকামী ছাত্র-জনতা প্রতিরোধ গড়ে তোলে।

২৩ এপ্রিল পর্যন্ত নোয়াখালী জেলা ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ন্ত্রণে। পরবর্তীতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হামলার মুখে মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটলে নোয়াখালীর নিয়ন্ত্রণ নেয় হানাদাররা।

নোয়াখালী জেলার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোজাম্মেল হক মিলন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, '২৫ মার্চের পর মুক্তিযোদ্ধারা প্রায় ১ মাস নোয়াখালী মুক্ত রাখতে সক্ষম হয়েছিলেন। পাকিস্তানি সেনারা ২৩ এপ্রিল নোয়াখালী দখল করে নেয়।'

মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও তৎকালীন মুজিব বাহিনীর প্রধান নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার দৌলতপুরের মাহমুদুর রহমান বেলায়েত বলেন, '১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর গভীর রাতে মুক্তিযোদ্ধাদের কয়েকটি ইউনিট মাইজদী শহরের বিভিন্ন স্থানে রাজাকারদের ক্যাম্পে চালায় সাঁড়াশি আক্রমণ।'

তিনি আরও বলেন, 'অতি অল্প সময়ের মধ্যে প্রায় সব ক্যাম্প মুক্তি সেনাদের দখলে চলে আসে। কিন্তু, পিটিআই ক্যাম্পের রাজাকাররা মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যায়।'

'ওই দিন ভোররাতে মুক্তিযোদ্ধারা মাইজদী শহরে রাজাকারদের ঘাঁটিতে অতর্কিত হামলা চালায়। তাদের আক্রমণের মুখে আত্মসমর্পণ করে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী।'

'৭ ডিসেম্বর সকাল ১০টার দিকে নোয়াখালী জেলা স্কুলের রাস্তার পাশের দোকানে ওঁত পেতে থাকা রাজাকাররা মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর হামলা চালায়। সেসময় এক মুক্তিযোদ্ধা গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন।'

'এ ঘটনার পর মুক্তিযোদ্ধারা পাল্টা আক্রমণ চালিয়ে বেশ কয়েকজন রাজাকারকে আটক করে। তারা রাজাকারদের প্রধান ঘাঁটি পিটিআই ক্যাম্পের দিকে অগ্রসর হন। শত শত মুক্তিযোদ্ধা রাজাকারদের ক্যাম্প পিটিআই ক্যাম্পাসের চারপাশ ঘিরে ফেলেন। শুরু হয় দফায় দফায় সংঘর্ষ ও গুলিবর্ষণ।'

'রাজাকারদের গুলিতে বেশ কয়েকজন বেসামরিক লোক নিহত হন। এরপর আক্রমণের তীব্রতা বাড়িয়ে দেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা। এতে বেশ কয়েকজন রাজাকার নিহত হয়। তীব্র আক্রমণের মুখে প্রায় ৩০ রাজাকার মুক্তিবাহিনীদের কাছে আত্মসমর্পণ করে।'

'এর মাধ্যমে শত্রুমুক্ত হয় নোয়াখালী। বিজয়ের আনন্দে আত্মহারা হয়ে ওঠে নোয়াখালীর হাজারো মুক্তিকামী মানুষ। মাইজদী শহরের কোর্ট বিল্ডিংয়ে ওড়ানো হয় জাতীয় পতাকা,' যোগ করেন তিনি।

নোয়াখালী মুক্ত দিবস উপলক্ষে নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে নোয়াখালী মুক্তিযোদ্ধা সংসদ। এর মধ্যে আছে সকাল ১০টায় 'মুক্ত স্কয়ার'-এ জাতীয় পতাকা উত্তোলন, আলোচনা সভা, স্মৃতিচারণ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বিজয় র‌্যালি ও পুষ্পমাল্য অর্পণ।

নোয়াখালী জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ খোরশেদ আলম খাঁন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'নোয়াখালী মুক্ত দিবস উপলক্ষে সুশীল সমাজের লোকজনের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে উপযুক্ত স্থান নির্বাচন করে মুক্তিযোদ্ধাদের স্মৃতি রক্ষার্থে ও নোয়াখালী মুক্ত দিবস উপলক্ষে একটি স্থায়ী স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করার পরিকল্পনা জেলা প্রশাসনের আছে।'

Comments

The Daily Star  | English

JP central office vandalised, set ablaze

A group of unidentified people set fire to the central office of Jatiyo Party in Dhaka's Kakrail area this evening

1h ago