মুক্তিযুদ্ধ

দুঃসহ স্মৃতি আজও তাড়া করে ফেরে হালিমা হাফিজকে

মুক্তিযুদ্ধে শহীদ স্বামী আবদুল হাফিজ ও ছেলে বেলাল সুজার জন্য দোয়া করছেন ৯৫ বছরের হালিমা হাফিজ। ছবি: এস দিলীপ রায়

'দিনটি ছিল ১৯৭১ সালের ১৮ এপ্রিল। রাতে উর্দুভাষী অবাঙালিরা আমাদের বাসায় হামলা চালায়। আমার স্বামী আবদুল হাফিজ ও দশম শ্রেণিতে পড়া ছেলে বেলাল সুজাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে তুলে নিয়ে যায় বিহারিরা। তারপর সাহেবপাড়ার কাছে গির্জার পাশে অর্ধমৃত অবস্থায় একটি গর্তে ফেলে মাটিচাপা দেয়।'

কথাগুলো বলছিলেন লালমনিরহাট রেল বিভাগীয় কার্যালয়ের ডিএমই দপ্তরের উচ্চমান ক্লার্ক আবদুল হাফিজের স্ত্রী হালিমা হাফিজ। 

সেদিনের বর্ণনা দিতে গিয়ে কান্নায় গলা বন্ধ হয়ে আসে ৯৫ বছরের মানুষটির। বললেন, 'একটা দিনের জন্যও ভুলতে পারিনি সেই দিনটি। চোখের সামনে ঘটে যাওয়া সেই দুঃসহ স্মৃতি আজও তাড়া করে ফেলে, চোখের পাতা এক করতে পারি না।'

'আমি ছোট ছেলে জেলাল শফিকে সাথে নিয়ে পালিয়ে কোনো রকমে প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলাম। কিন্তু আসলেই কী বেঁচেছি? আমার স্বামী আমার সন্তান আর ফিরে আসেনি। তাদের অর্ধমৃত অবস্থায় মাটিচাপা দিয়ে মারা হয়েছিল। আমার স্বামী ও ছেলেকে নির্মমভাবে নির্যাতন ও মেরে ফেলার দৃশ্য আমি আজো ভুলতে পারি না,' বলছিলেন হালিমা হাফিজ। 

শহীদ আবদুল হাফিজ।

আব্দুল হাফিজের বাড়ি বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার বিহারহাট গ্রামে। রেলওয়েতে চাকরি সুত্রে ১৯৪৭ সাল থেকে লালমনিরহাট শহরেই বসবাস করছিলেন। তবে রেল দপ্তরের বড় বাবু হলেও লালমনিরহাট শহরে 'হাফিজ ডাক্তার' হিসেবেও পরিচিত তিনি। একজন রেজিস্টার্ড হোমিও চিকিৎসক ছিলেন হাফিজ। এলাকার দরিদ্র মানুষকে বিনামূল্যে চিকিৎসা দিতেন। ছেলে বেলাল সুজা লালমনিরহাট মডেল স্কুলে দশম শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। সেসময় ছাত্র ইউনিয়নের সক্রিয় কর্মী ছিলেন বেলাল।  

শহীদ বেলাল সুজা।

হালিমা হাফিজের ছোট ছেলে জেলাল শফি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, বেলাল ভাই স্বাধীনতার পক্ষে ছাত্রদের সংগঠিত করত। পাকিস্তানের পতাকা পুড়িয়ে বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেছিল। এ কারণে বিহারীরা তার ওপর ক্ষিপ্ত ছিল।

'সেদিনটার কথা কীভাবে ভুলি। যেদিন বাবা আর ভাইকে চোখের সামনে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।'  

যে জায়গায় বাবা ও ভাইকে গর্তে মাটিচাপা দেওয়া হয়েছিল সেখানে আরো বেশ কয়েকজন বাঙালিকে একইভাবে মাটিচাপা দেওয়া হয়েছিল। স্থানটি একটি গণকবর,' তিনি বলেন।

জেলাল শফি বলেন, 'আমি গণকবরটি চিহ্নিত করেছি। কিন্তু প্রশাসনের পক্ষে পদক্ষেপ না নেওয়ায় গণকবরটি সংরক্ষণে বেগ পেতে হচ্ছে। আমার বাবা শহীদ আব্দুল হাফিজ ও ভাই শহীদ বেলাল সুজাসহ অন্যান্য শহীদদের গণকবরটি সংরক্ষণ করার জোর দাবি জানাচ্ছি।'

লালমনিরহাট রেলওয়ের বিভাগীয় কর্মকর্তা (ডিআরএম) শাহ সুফি নুর মোহাম্মদের কাছে জানতে চাইলে তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, লালমনিরহাটে মুক্তিযুদ্ধের সময় বিহারিরা বিভিন্ন জায়গায় খন্ড খন্ড হত্যাযজ্ঞ চালায়। আমরা সেসব গণকবর চিহ্ণিত করে সংরক্ষণের উদ্যোগ নিয়েছি।

Comments

The Daily Star  | English

Trump says no summit deal reached with Putin over ending war in Ukraine

The anticlimactic end to the closely watched summit was in stark contrast to the pomp and circumstance with which it began

1h ago