পাবনায় হারিয়ে যাচ্ছে শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. ফজলে রাব্বির স্মৃতি

শহীদ ডা. ফজলে রাব্বি

জাতি যখন শ্রদ্ধাবনত চিত্তে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণ করছে তখন জন্মভূমি পাবনায় বিস্মৃত প্রায় ডা. ফজলে রাব্বি।

বিজয়ের ৫০ বছরেও জাতির এ বীর সন্তানের স্মৃতি ধরে রাখতে পাবনায় নেওয়া হয়নি কোনো উদ্যোগ।

পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে সেদিন যে সাহসী বুদ্ধিজীবীরা মাথা নত না করে প্রাণ দিয়ে এ দেশের স্বাধীনতার সূর্য ছিনিয়ে এনেছেন তাদেরই একজন পাবনার কৃতি সন্তান শহীদ ডা. ফজলে রাব্বি।

বই-সাময়িকী বা টেলিভিশনের পর্দায় শহীদ বুদ্ধিজীবীদের ছবি যখন দেখানো হয় তখন এ জেলার নতুন প্রজন্মের অনেকের কাছে অপরিচিত ডা. ফজলে রাব্বি। পাবনার সচেতন মহল তার স্মৃতি ধরে রাখার দাবি বার বার জানালেও এখনো কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

শহীদ ডা. ফজলে রাব্বি ১৯৩২ সালের ২১ সেপ্টেম্বর পাবনা শহরের ছাতিয়ানি এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৪৮ সালে পাবনা জেলা স্কুল থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে মেট্রিকুলেশন পাশ করে ঢাকায় চলে যান।

তিনি ১৯৫৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গোল্ড মেডেল পেয়ে এমবিবিএস পাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রেজিস্ট্রার হিসেবে যোগ দেন।

এরপর ডা. ফজলে রাব্বি উচ্চশিক্ষার জন্যে ইংল্যান্ডে চলে যান এবং ১৯৬২ সালে এমআরসিপি ডিগ্রি অর্জন করে সেখানে তিনি চিকিৎসা পেশা শুরু করেন। অল্পদিনের মধ্যেই তিনি বিদেশের মাটিতে চিকিৎসা সেবায় সাফল্যের স্বাক্ষর রাখেন।

তবে তা বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। কারণ ডা. ফজলে রাব্বি ছিলেন একজন দেশপ্রেমিক মানুষ। তিনি ফিরে আসেন দেশের মাটিতে। ১৯৬৩ সালে তিনি দেশে ফিরে ঢাকা মেডিকেল কলেজে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন।

শিক্ষকতার পাশাপাশি ডা. ফজলে রাব্বি বিনামূল্যে গরিবদের চিকিৎসা দিতেন। নিজেকে সব সময় দেশের মানুষের সেবায় নিয়জিত রেখেছিলেন।

বঙ্গবন্ধুর ডাকে মহান মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়ে হলে ডা. ফজলে রাব্বি মুক্তিযোদ্ধাদের সাহস যুগিয়েছেন, তাদের খাদ্য ও চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন, আশ্রয় দিয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ডাঃ ফজলে রাব্বির ভূমিকা পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর কাছে পৌঁছতে দেরি হয়নি। এ দেশীয় দোসরদের নিয়ে তারা ডা. ফজলে রাব্বিকে ১৪ ডিসেম্বর রাতে ধরে নিয়ে যায়, নির্মম নির্যাতন করে এবং অন্যান্য বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে রায়ের বাজার বধ্যভূমিতে হত্যা করে।

মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ডা. ফজলে রাব্বির এ অবদান জাতি ভুলবে না। তবে এ বীর সন্তানকে তার নিজ জন্মভূমির মানুষ যেন ভুলতে বসেছে।

২০০৮ সালে 'শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. ফজলে রাব্বি স্মৃতি পরিষদ' গঠন করা হয়। পাবনার প্রবীণ সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠক আব্দুল মতিন খান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পাবনা মেডিকেল কলেজটি ডা. ফজলে রাব্বির নামে করার দাবিতে আমরা ২০০৮ সাল থেকে সভা, সমাবেশ, মানববন্ধন করেছি। পাবনাবাসীর স্বাক্ষর নেওয়া হয়েছে। সরকারের কাছে বার বার দাবি জানানো হলেও প্রশাসনিক জটিলতায় তা অপূর্ণ রয়ে গেছে।'

ডা. ফজলে রাব্বির পরিবারের সদস্য এডভোকেট ফজলে শাহারান বিপু ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ডা. ফজলে রাব্বির পরিবারের সদস্য হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিতে গর্ব অনুভব করি। তিনি আমাদের গৌরব। অথচ দুর্ভাগ্য যে আমরা মহান এ মানুষটির স্মৃতি যথাযথভাবে তুলে ধরতে পারিনি। তার ছড়িয়ে দিতে পারিনি তার নিজের এলাকার মানুষের মাঝে।'

শহীদ বুদ্ধিজীবী ডা. ফজলে রাব্বির জন্মভূমিতে তার স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্য অবিলম্বে উদ্যোগ নেওয়ার দাবি জানান তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

US retailers lean on suppliers to absorb tariffs

Rather than absorbing the cost or immediately passing it on to consumers, many US apparel retailers and brands have turned to their suppliers in Bangladesh, demanding they share the pain

5h ago