মানিকগঞ্জ পাকিস্তানি হানাদারমুক্ত হয় আজকের দিনে

মানিকগঞ্জ পাকিস্তানি হানাদারমুক্ত ১৩ ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালের এই দিনে তৎকালীন মহকুমা, বর্তমানে জেলাকে পাকিস্তান সেনাবাহিনী থেকে মুক্ত ঘোষণা করেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা।
ছবি: স্টার

মানিকগঞ্জ পাকিস্তানি হানাদারমুক্ত ১৩ ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালের এই দিনে তৎকালীন মহকুমা, বর্তমানে জেলাকে পাকিস্তান সেনাবাহিনী থেকে মুক্ত ঘোষণা করেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা।

সেদিন মানিকগঞ্জ জেলা শহরের বাসস্ট্যান্ড এলাকার প্রাইমারি ট্রেনিং ইনস্টিটিউটে (পিটিআই) কার্যালয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়।

জেলার সর্বস্তরের মানুষ প্রতি বছর দিনটিকে 'মানিকগঞ্জ মুক্ত দিবস' হিসেবে উদযাপন করেন।

১৯৭১ সালের মার্চের শুরু থেকেই জেলার মুক্তিকামী মানুষ ক্যাপ্টেন আবদুল হালিম চৌধুরীর নেতৃত্বে নিজেদের প্রস্তুত করতে থাকেন, যাতে তারা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে প্রতিহত করে পাল্টা লড়াই করা যায়।।

তাদের প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ২৬ মার্চ দেশের স্বাধীনতা ঘোষণার একদিন পর ২৭ মার্চ বীর মুক্তিযোদ্ধারা মানিকগঞ্জ ট্রেজারি থেকে আগ্নেয়াস্ত্র লুট করেন। হরিরামপুর উপজেলার কৌড়ী গ্রামে 'বিপ্লবী পরিষদ' গঠন করে এবং কয়েকটি দলে বিভক্ত হয়ে সম্মুখযুদ্ধে অংশ নেন।

১৯৭১ সালের ২৮ অক্টোবর সিংগাইর উপজেলার গোলাইডাঙ্গা গ্রামে ভয়াবহ যুদ্ধে ইঞ্জিনিয়ার তোবারক হোসেন লুডু, লোকমান হোসেন ও জাহিদুর রহমানের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা ৮২ পাকিস্তানি সৈন্যকে হত্যা করে এবং ৫০ জনকে আহত করে।

এ ছাড়া, বীর প্রতীক ইব্রাহিমের নেতৃত্বে আরেকটি দল সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার হাউস উড়িয়ে দেয়।

পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী জেলার বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা দখলে নিয়ে নিরীহ মানুষকে হত্যার করে। ২২ নভেম্বর পাকিস্তানি বাহিনী ঘিওর উপজেলার তেরশ্রী গ্রামে হামলা চালায় এবং তেরশ্রী গ্রামের জমিদার সিদ্ধেশ্বরী প্রসাদ রায় চৌধুরী ও তেরশ্রী কলেজের অধ্যক্ষ আতিয়ার রহমানসহ ৪৩জনকে হত্যা করে।

বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ মানিকগঞ্জ জেলা ইউনিটের সাবেক কমান্ডার প্রকৌশলী তোবারক লুডু দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে মুক্তিযোদ্ধারা জেলায় প্রবেশ করে এবং ১৩ ডিসেম্বর তৎকালীন মহকুমা, বর্তমানে মানিকগঞ্জ জেলাকে দখলদার বাহিনীর কবল থেকে মুক্ত ঘোষণা করেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা।'

তিনি আরও বলেন, 'মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মরণে ২০০৬ সালের মার্চে শহীদ মিরাজ-তপন স্টেডিয়ামের সামনে শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়। ফলকে মাত্র ৩৯ শহীদ মুক্তিযোদ্ধার নাম খোদাই করে লেখা হয়েছে।'

তিনি জানান, পরে জেলা প্রশাসন ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে ৫০ শহীদ মুক্তিযোদ্ধার নাম খোদাই করে মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড এলাকায় 'অদম্য একাত্তর' নামে আরেকটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করে।

মানিকগঞ্জ পাকিস্তানি হানাদার মুক্ত দিবস উপলক্ষে মানিকগঞ্জবাসী ১৯৯১ সাল থেকে ১৫ দিনব্যাপী 'মুক্তিযুদ্ধ বিজয় মেলা'র আয়োজন করে আসছে। মেলাটি প্রতি বছর ১৩ ডিসেম্বর শুরু হয় এবং ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলে।

করোনা মহামারির কারণে মেলাটি গত ২ বছর ধরে বন্ধ রয়েছে বলে জানান বিজয় মেলা উদযাপন পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট গোলাম মহীউদ্দীন।

Comments

The Daily Star  | English

World will know Bangladesh through sports: PM

Prime Minister Sheikh Hasina today asked the authorities concerned to promote domestic sports of the country alongside other games

19m ago