মুক্তিযুদ্ধ

২ নভেম্বর ১৯৭১: মুক্তিযুদ্ধে ১২ রমজান

মুক্তিযুদ্ধের ১২ রমজান পালিত হয়েছিলো ২ নভেম্বর। দিনটি ছিল মঙ্গলবার। মুক্তিযুদ্ধের অন্যান্য দিনের মতো এদিনও গণহত্যা, নির্যাতন ও নৃশংসতা অব্যাহত রেখেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী।

(পবিত্র কোরআনে রমজানকে রহমতের মাস বলা হলেও, মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসররা এই মাসে বর্বরোচিত গণহত্যা, নৃশংস নির্যাতন-নিপীড়ন, লুণ্ঠন ও ধর্ষণ চালায়। অন্যদিকে, প্রিয় মাতৃভূমিকে রক্ষার জন্য এ মাসে রণাঙ্গনে প্রাণপণে লড়াই করেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা। রোজা পালনরত অবস্থাতেই স্বদেশের জন্য প্রাণ উৎসর্গ করেন জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানরা। মুক্তিযুদ্ধের রমজান মাস কেমন ছিল, তা নিয়ে দ্য ডেইলি স্টারের ধারাবাহিক বিশেষ আয়োজনের আজকের পর্বে রইল ১২ রমজানের ঘটনাপ্রবাহ।)

মুক্তিযুদ্ধের ১২ রমজান পালিত হয়েছিলো ২ নভেম্বর। দিনটি ছিল মঙ্গলবার। মুক্তিযুদ্ধের অন্যান্য দিনের মতো এদিনও গণহত্যা, নির্যাতন ও নৃশংসতা অব্যাহত রেখেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী।

মুক্তিযুদ্ধের ১২ রমজানে পাকিস্তানি বাহিনীর পৈশাচিকতার একটি বিবরণ পাওয়া যায় ফেনী সদর উপজেলার এক নারীর বর্ণনায়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র অষ্টম খণ্ডে তার বর্ণনায় উল্লেখ ছিল, 'আমি অতিশয় দরিদ্র পরিবারের। সংগ্রামের প্রথমদিকে আত্মীয়দের বাড়িতে আত্মগোপন করেছিলাম। আর্থিক কারণে সীমান্ত অতিক্রম করতে পারিনি। বৃদ্ধ বাবা সম্পত্তিহীন কৃষক ছিলেন। সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম দিকে পাকিস্তানি বাহিনী  গ্রামের কাছে অকাতরে রকেট শেলিং করছিল। তখন আমার বাবা জ্ঞান হারিয়ে মাঠেই মারা যান।

স্থানীয় রাজাকারের সহযোগিতায় পাকিস্তানি বাহিনী আমার বাড়ি ঘেরাও করে। আমি ভয়ে ঘরের গোলার নিচে লুকিয়ে থাকি। কিন্তু রাজাকার ও পাকিস্তানি বাহিনী সবকিছু তন্ন তন্ন করে পরীক্ষা করে করে এবং আমাকে গোলার নিচ থেকে টেনে বের করে। ২ জন পাকিস্তানি নরপিশাচ আমার ওপর নির্মম অত্যাচার চালায়।'

রণাঙ্গনে ১২ রমজান

১২ রমজান ১ নম্বর সেক্টরের মনুঘাট সাব সেক্টরের খাগড়াছড়ির পানছড়িতে মুক্তিবাহিনীর একটি দল পাকিস্তানি বাহিনীর ওপর হামলা চালায়। এই হামলায় ৩ জন পাকিস্তানি সেনা নিহত হয় এবং ৪ জন আহত হয়।

১২ রমজান ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবার মঈনপুর বাজারে হানাদারদের ধরতে   মুক্তিবাহিনী অ্যামবুশের ফাঁদ পাতে। পরে হানাদার বাহিনীর একটি দল ওই পথ দিয়ে যাওয়ার সময়ে অ্যামবুশের আওতায় এলে মুক্তিবাহিনীর দলটি তাদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় ৫ হানাদার সেনা ও ৩ রাজাকার নিহত হয়।

১২ রমজান ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় মুক্তিবাহিনী হানাদার বাহিনীর কায়েমপুর ঘাঁটিতে মর্টার হামলা চালায়। এ সময় ৩ হানাদার সেনা নিহত হয় এবং ৪ জন আহত হয়।

১২ রমজান তামাবিল সাব সেক্টরে মুক্তিবাহিনীর গেরিলা দল হানাদার বাহিনীর কাপুরা অবস্থানে দ্বিতীয় দিনের মতো হামলা অব্যাহত রাখে।  এ হামলায় অংশ নেন সুবেদার সালামের দল, এ এস আই হাবিবুর রহমানের দল, ভারতীয় বিএসএফের খড়ক বাহাদুর থাপার দল  ও ক্যাপ্টেন ফারুকের দল।

১২ রমজান শেরপুরে মুক্তিবাহিনী শ্রীবরদীর ভায়াডাঙ্গার হানাদার ক্যাম্পে হামলা  চালায়। এ সময় হানাদার বাহিনীর ১০ সেনা নিহত হয়।

১২ রমজান সেহরির সময় খুলনায় মুক্তিবাহিনীর নৌ কমান্ডোরা মংলা বন্দরে মাইন অভিযান চালিয়ে ২টি জাহাজ ডুবিয়ে দেয়।

মুক্তিযুদ্ধের ১২ রমজান ময়মনসিংহে লাঠিটিলা ব্রিজে মুক্তিবাহিনী হানাদার বাহিনীর জন্য অ্যামবুশের ফাঁদ পাতে। অ্যামবুশে হানাদার বাহিনীর ৫ সেনা নিহত হয় এবং একজন আহত হয়। এ সময় ৪ হানাদার সেনা পালিয়ে যায়।

তথ্যসূত্র:

 বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র অষ্টম ও দশম খণ্ড

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ: সেক্টরভিত্তিক ইতিহাস সেক্টর ১, ২, ৬,  ৮, ১০ ও ১১

[email protected]

Comments

The Daily Star  | English
Depositors money in merged banks

Depositors’ money in merged banks will remain completely safe: BB

Accountholders of merged banks will be able to maintain their respective accounts as before

5h ago