পুরান ঢাকার শবে বরাত

শবে বরাত উপলক্ষে পুরান ঢাকার দোকানে বিক্রি হচ্ছে নকশী রুটি। ছবি: সংগৃহীত

শবে বরাত ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের কাছে সৌভাগ্যের রাত বলে বিবেচিত। তবে পুরান ঢাকাবাসীর কাছে শবে বরাত আরও বিশেষ কিছু। ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির মেলবন্ধনে ২ ঈদের পর পুরান ঢাকাবাসীর কাছে এই রাতটিই সবচেয়ে বড় উৎসবের রাত।  

বাঙালির যে কোনো উৎসবেরই প্রধান অনুষঙ্গ খাবার। পুরান ঢাকাবাসী শবে বরাতের সঙ্গী করেছে নানা খাবারকে। এ রাতে বিশেষ খাবার হিসেবে থাকে বড় আকৃতির নকশী রুটি, যাকে ঢাকাবাসী চেনেন 'ফেন্সি রুটি' নামে। সঙ্গে থাকে বুটের হালুয়া, গাজরের হালুয়া, সুজির হালুয়া,সেমাই।

পুরান ঢাকা ছাড়া ফেন্সি রুটি বা নকশী রুটির চল খুব একটা দেখা যায় না। বছরের এই একদিনই সাধারণত বিক্রি হয় ফেন্সি রুটি। পুরান ঢাকার রাস্তার মোড়ে মোড়ে এদিন শামিয়ানা দিয়ে কাঠের টেবিল পেতে একদিনের জন্য গড়া অস্থায়ী দোকান দেখা যায়।

এদিন পুরান ঢাকার পাড়া-মহল্লায় অনেকেই গরু কিনে মাংস ভাগ করে নেন যার যার পরিবারের জন্য। সাধ্য অনুযায়ী সবার ঘরেই রান্না হয় উন্নত খাবার। বিশেষ করে হালুয়া-রুটি চলে সব বাড়িতেই। প্রতিবেশীদের মধ্যে খাবার বিতরণ চলে।

শবে বরাত উপলক্ষে পুরান ঢাকায় বানানো হয় রকমারি মিষ্টান্ন। ছবি: আহমাদ ইশতিয়াক

পুরান ঢাকাবাসীর শবে বরাতের কথা বলতে গেলে আগরবাতির কথাও আসে। শবে বরাত এলেই ধুম পড়ে যায় আগরবাতি ও গোলাপজল বিক্রির। আত্মীয়-স্বজনরা এ রাতে মৃত স্বজনদের কবর জিয়ারতের পর আগরবাতি, মোমবাতি জ্বালান। কেউ কেউ পবিত্র এ রাত উপলক্ষে চোখে সুরমা, পরিধেয় বস্ত্রে আতর ব্যবহার করেন। অনেকেই পরকালীন শান্তির প্রত্যাশায় এদিন ও পরদিন রোজা রাখেন।

পুরান ঢাকায় শবে বরাতের সন্ধ্যায় শিশু-কিশোরদের পটকা ও আতশবাজি ফোটাতে দেখা যেত এক সময়। এককালে পুরান ঢাকার প্রায় প্রতিটি অলিগলিতেই শবে বরাতের রাতে ফোটানো হতো তারাবাতি। স্কুলপড়ুয়া শিশুরা টিফিনের পয়সা জমিয়ে কিনত নানা ধরনের বাজি।

এক সময় শবে বরাতে শিশুদের আনন্দের অন্যতম অনুষঙ্গ ছিল তারাবাতি। ছবি: আহমাদ ইশতিয়াক

শবে বরাতে পুরান ঢাকাবাসী সারারাত নামাজ পড়েন। সাধারণত এশার নামাজের পর মসজিদে মসজিদে তবারক হিসেবে বিতরণ করা হয় বিরিয়ানি বা সিন্নি। পুরান ঢাকার বেশিরভাগ মসজিদে এদিন বিরিয়ানি তৈরির জন্য গরু কেনা হয়।

শবে বরাত উপলক্ষে নারিন্দা, লক্ষ্মীবাজার, রায় সাহেব বাজার, চকবাজার, লালবাগ, গেণ্ডারিয়া, আরমানিটোলা, সুত্রাপুরসহ নানা জায়গায় বিক্রি করা হয় ঐতিহ্যবাহী শিরমাল রুটি। ঢাকাইয়া সংস্কৃতিতে এই রুটির সঙ্গে যেন শবে বরাত ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। এককালে  ভারত  থেকে আসা হালুইকররা সবচেয়ে ভালো শিরমাল তৈরি করতেন। তখন শিরমাল ছিল বিভিন্ন ধরনের। যখন তন্দুরে এই রুটি থাকত, তখনই তাতে দুধ ছিটিয়ে দেওয়া হতো।

শবে বরাত উপলক্ষে পুরান ঢাকার চকবাজারের শাহী জামে মসজিদের সামনে এক সময় স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন খাবারের পসরা সাজাতেন। এখন আর সেখানে তেমনটা দেখা যায় না। তবে পুরান ঢাকার বড় বেকারিগুলো, যেমন আনন্দ বেকারি, আল রাজ্জাক কনফেকশনারি আজও ধরে রেখেছে ঐতিহ্য। শবে বরাত উপলক্ষে তাদের আয়োজন আজও চোখে পড়ার মতো।

Comments

The Daily Star  | English

No scope to verify authenticity when cases are filed: IGP

Instructions have already been issued to ensure that no one is arrested in a harassing manner, he says

30m ago