হারমোনিয়াম মানে ‘যতীন এণ্ড কোং’

ছবি: স্টার

আজকে যেখানে 'যতীন এণ্ড কোং'র অবস্থান, আগে সেখানে ছিল না। এই আগে মানে ১১১ বছর আগে।

ছবি: স্টার

প্রথমে পুরান ঢাকার আমপট্টিতে, পরবর্তীতে পাটুয়াটুলী। এরপর থেকেই শাঁখারিবাজারে বর্তমান ঠিকানায়।

অবস্থান যেখানেই হোক না, যারা সংগীতানুরাগী বা সংগীতশিক্ষার্থী তাদের কাছে 'যতীন এণ্ড কোং' তীর্থস্থান।

ছবি: স্টার

এত বছর কেটে গেলেও, বাংলাদেশের সংগীত শিল্পী-শিক্ষার্থীদের জন্য হারমোনিয়াম বলতেই 'যতীন এণ্ড কোং'। এর মূল কারণ, সঠিকভাবে রিড ধরতে সুখ্যাত 'যতীন এণ্ড কোং'র হারমোনিয়াম।

১৯১০ সালে 'যতীন এণ্ড কোং'র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন কেরানীগঞ্জের বাগৈরে জন্ম নেওয়া যতীন্দ্র মোহন মণ্ডল। ১৯৭০ সালে তার মৃত্যুর পর ছেলে সুনীল কুমার মণ্ডল আর এখন নাতি সুরজিৎ মণ্ডল এর হাল ধরেছেন।

'যতীন এণ্ড কোং'র যাত্রা শুরুর আগে জেনে নেওয়া যাক যতীন্দ্র মোহন মণ্ডল সম্পর্কে। মুনতাসীর মামুনের 'ঢাকা: স্মৃতি বিস্মৃতির নগরী' বইয়ের তথ্য অনুযায়ী, যতীন্দ্র মোহন মণ্ডলের জন্ম ১৮৮০ সালে। দারুণ বেহালা বাজাতেন তিনি। বন্ধু ছিলেন চারণকবি মুকুন্দ দাসেরও। উপমহাদেশের প্রখ্যাত সংগীতজ্ঞ আলাউদ্দিন খাঁয়ের সঙ্গে ঢাকার রূপলাল হাউজে বেহালাও বাজিয়েছিলেন তিনি।

গত বৃহস্পতিবার 'যতীন এণ্ড কোং'-এ গিয়ে দেখা যায়, নিবিষ্টমনে হারমোনিয়ামের কাজ করছেন জনা তিনেক কারিগর। আর তাদের কাজের তদারকি করছিলেন বর্তমানে এর কর্ণধার সুরজিৎ মণ্ডল।

দোকানের পেছনের হারমোনিয়াম বানানোর কারখানা। সেখানেই কারিগররা তৈরি করছিলেন নতুন হারমোনিয়াম। আরেকদিকে ব্যস্ততা ছিল পুরনো হারমোনিয়াম ঠিক করার।

সুরজিৎ মণ্ডল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'হাওয়াটাইট, শুদ্ধস্বরের কারণে যতীন এণ্ড কোংয়ের হারমোনিয়াম সবার কাছে প্রিয়। ছায়ানটের সভাপতি সংগীতজ্ঞ সন্‌জীদা খাতুন সব সময় যতীন এণ্ড কোংয়ের হারমোনিয়াম বাজিয়ে গান করেছেন। আর ছায়ানটের সব হারমোনিয়ামও যতীন এণ্ড কোংয়ের।'

'বাংলাদেশের ঘরে ঘরে ছড়িয়ে আছে আমাদের হারমোনিয়াম,' যোগ করেন তিনি।

'নিজেদের কারিগর দিয়ে হারমোনিয়াম বানানো হয়' উল্লেখ করে সুরজিৎ মণ্ডল আরও বলেন, 'আমাদের কারিগর সহদেব মণ্ডলের বয়স ৭১ বছর। ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি আমাদের এখানে হারমোনিয়াম তৈরি করছেন। এমন কারিগর আমাদের আরও রয়েছে। অভিজ্ঞ কারিগরের কারণেই আমাদের এখানে নিখুঁত হারমোনিয়াম তৈরি হয়। যার কারণে এত বছর পরও আমাদের হারমোনিয়াম মানুষের কাছে জনপ্রিয়।'

এই আধুনিক বাদ্যযন্ত্রের যুগে হারমোনিয়ামের বিক্রি সম্পর্কে তিনি বলেন, 'বিক্রি আগের চেয়ে ভালো। কারণ, গান শেখার প্রাথমিক শিক্ষাটা হারমোনিয়াম বাজিয়েই হয়। তাই হারমোনিয়ামের চাহিদা সব সময়ই থাকবে।'

এবার একটু জানা যাক, 'যতীন এণ্ড কোং'র হারমোনিয়ামের দরদাম। সুরজিৎ মণ্ডল জানালেন, একেবারেই শুরুর দিককার সংগীতশিক্ষার্থীদের জন্য যে হারমোনিয়াম রয়েছে তার দাম সাড়ে ১২ হাজার থেকে ১৪ হাজার টাকার মধ্যে। এটিই সবচেয়ে বেশি চলে।

যারা স্কেল পরিবর্তন করে গান করেন তাদের জন্য রয়েছে ৫০ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকার হারমোনিয়াম।

হারমোনিয়ামের জন্য প্রসিদ্ধ হলেও 'যতীন এণ্ড কোং'-এ পাওয়া যায় দেশি-বিদেশি নানান বাদ্যযন্ত্র। যেমন—তবলা, গিটার, বেহালা, উইকিলুকি, দোতারা, তানপুরা, একতারা ইত্যাদি।

সুরজিৎ মণ্ডল জানান, হারমোনিয়ামের পর সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় তবলা। নিমকাঠের তবলা কভার আর হাতুড়িসহ দাম পড়ে সাড়ে ৬ হাজার টাকা। বলেন, 'এটাও আমরা নিজেরাই তৈরি করি। গিটার, বেহালা, উইকিলুকি, তানপুরা ভারত ও চীন থেকে আনা হয়।'

'যতীন এণ্ড কোং'-এ অ্যাকুস্টিক গিটার পাওয়া যায় সাড়ে ৪ হাজার টাকা থেকে ১৩ হাজার টাকায়। ভারতীয় বেহালা ৫ হাজার টাকা ও চীনা বেহালা ৭ হাজার টাকা, উইকিলুকি ৪ থেকে ৭ হাজার টাকা, দোতারা আড়াই থেকে ৫ হাজার টাকা, ভারতীয় তানপুরা ১৮ থেকে ২৫ হাজার টাকা, একতারা ৮০০ থেকে ২ হাজার টাকার মধ্যে পাওয়া যায়।

Comments

The Daily Star  | English

137 journalists sued so far

They have been charged with murder, attempted murder, unlawful assembly, rioting, abduction, vandalism, extortion, assault, and in certain cases, genocide, and crimes against humanity.

9h ago