আজ ২২শে শ্রাবণ

ছবি: সংগৃহীত

আজ ২২শে শ্রাবণ। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৮০তম প্রয়াণ দিবস। বহু প্রতিভার এক আপন সত্ত্বার অধিকারী এই কবি তার প্রতিভার আলোয় উদ্ভাসিত করে বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতিকে তুলে ধরেছিলেন বিশ্ব দরবারে। পেয়েছিলেন বিশ্বকবির সম্মান। তিনি বাঙালির সর্বশ্রেষ্ঠ কবি।

বাংলা সাহিত্যের এই অসামান্য প্রতিভা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১২৬৮ বাংলা সনের ২৫ বৈশাখ (ইংরেজি ১৮৬১ সালের ৭ মে) পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও মা সারদাসুন্দরী দেবী। বাংলা ১৩৪৮ সনের ২২ শ্রাবণ কলকাতায় পৈতৃক বাসভবনে ইহলোক ত্যাগ করেন তিনি।

একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, নাট্যকার, সংগীতজ্ঞ, প্রাবন্ধিক, দার্শনিক, ভাষাবিদ ও চিত্রশিল্পী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাহিত্য প্রতিভার উন্মেষ ঘটে শৈশবেই। মাত্র আট বছর বয়সে তার লেখালেখির হাতেখড়ি। ১৮৭৪ সালে 'তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা'য় তার প্রথম লেখা কবিতা 'অভিলাষ' প্রকাশিত হয়। এরপর এই লেখালেখি চলে বিরামহীন।

১৮৭৮ সালে তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'কবিকাহিনী' প্রকাশিত হয়। সেসময় থেকেই কবির লেখা দেশ-বিদেশে প্রকাশিত হতে থাকে। উপন্যাস, নাটক, সংগীত, প্রবন্ধ, চিত্রকলা বা দর্শন— বাংলা সাহিত্যের এমন কোনো শাখা নেই যেখানে বিচরণ করেননি রবীন্দ্রনাথ। অসাধারণ সৃজনশীলতা, নিবিড় জীবনবোধ ও ভাষার অনন্য প্রকাশভঙ্গি দিয়ে সাহিত্যের সমসাময়িক বিশ্বে তিনি খ্যাতি লাভ করেন। বিশ্বের নানা ভাষায় তার সাহিত্যকর্ম অনূদিত হয়েছে। নানা দেশের পাঠ্যসূচিতে তার লেখা সংযোজিত হয়েছে।

১৯১০ সালে প্রকাশিত হয় তার 'গীতাঞ্জলি' কাব্যগ্রন্থ। এই কাব্যগ্রন্থের ইংরেজি অনুবাদের জন্য তিনি ১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। বলা হয়ে থাকে, রবীন্দ্রনাথের লেখার প্রধান উপজীব্য ছিল জীবনানুভুতি যেখানে বাঙালির জাতিসত্তা, আশা-আকঙ্খা-নিরাশার আবেদনগুলো স্পষ্টভাবে ওঠে এসেছে। এটি এমন প্রবলভাবে এসেছে যে তিনিই হয়ে ওঠেছেন বাঙালির জাতিসত্তা ও বোধের এক অপার আধার।

তার প্রকাশিত কবিতার বই ৫২টি, উপন্যাস ১৩টি, ছোটগল্পের বই ৯৫টি, প্রবন্ধ ও গদ্যগ্রন্থ ৩৬টি এবং নাটকের বই ৩৮টি। কবির মৃত্যুর পর ৩৬ খণ্ডে 'রবীন্দ্র রচনাবলী' প্রকাশিত হয়। এ ছাড়া, ১৯ খণ্ডের রয়েছে 'রবীন্দ্র চিঠিপত্র'।

এ সব মৌলিক সৃজনশীলতার বাইরেও কবির প্রতিভার স্ফুরণ রয়েছে। জমিদার পরিবারের সদস্য হিসেবে তিনি জমিদারিও করেছেন। তার প্রজাহিতৈষী মনোভাব সর্বজন বিদিত।

তিনি ১৮৯১ সাল থেকে বাবার আদেশে কুষ্টিয়া, পাবনা, নাটোর ও ওড়িশায় তাদের জমিদারি দেখাশোনা করেন। সেখানকার পৈতৃক 'কুঠিবাড়িতে' তিনি অসংখ্য কবিতা ও গান রচনা করেন। পাশাপাশি তিনি ১৯০১ সালে শান্তিনিকেতনে ব্রহ্মচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন।

১৯০১ সালে কবি কুষ্টিয়ার শিলাইদহ থেকে সপরিবারে বোলপুরে শান্তিনিকেতনে চলে যান। ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। ১৯২১ সালে গ্রামোন্নয়নের জন্য 'শ্রীনিকেতন' নামে একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠা করেন 'বিশ্বভারতী'।

বিশ্ব ভ্রমণেও কবি ছিলেন অনন্য। তিনি ১৮৭৮ থেকে ১৯৩২ সাল পর্যন্ত পাঁচটি মহাদেশের ৩০টিরও বেশি দেশ ভ্রমণ করেন।

কবি রচনা করেছেন দুই হাজারের বেশি গান। অধিকাংশ গানের সুরারোপর তারই। 'গীতবিতান' তার সমগ্র গানের গ্রন্থ।

কবির লেখা 'আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি' বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত। ভারতের জাতীয় সংগীতটিও কবির লেখা। কবি তার গান দিয়েও চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন শতকোটি মানুষের হৃদয়ে।

যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি উপলক্ষে দেশের নানা প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে অনুষ্ঠানগুলো ভার্চুয়ালি আয়োজন করা হচ্ছে। বিশ্বকবির প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় নানা উদ্যোগ নিয়েছে। বাংলা একাডেমি অনলাইনে প্রবন্ধপাঠ, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। বাংলাদেশ টেলিভিশন, বেতার ও বেসরকারি টেলিভিশনগুলো এ উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠান ও নাটক প্রচার করছে।

দিবসটি উপলক্ষে কুষ্টিয়ায় নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হলেও শিয়ালদহ কুঠিবাড়িতে কোনো অনুষ্ঠান হচ্ছে না।

Comments

The Daily Star  | English

Response to J&K Terror Attack: India gives forces ‘operational freedom’

Indian Prime Minister Narendra Modi has given the country's military "operational freedom" to respond to a deadly attack in Kashmir last week, a senior government source told AFP yesterday, after New Delhi blamed it on arch-rival Pakistan.

3h ago