আহমদ শরীফের ডায়েরিতে তার মানসচরিত

গবেষক ও ভাষাবিদ আহমদ শরীফের ডায়েরি পড়ছিলাম। যত আগাচ্ছি তত পরিচিত হচ্ছি চিন্তাগোলার সঙ্গে। যেন-ধানের গোলা। কতশত বিন্যাসে সোনালি ধান শুয়ে থাকে গোলার ভেতর। তার ডায়রির ২০৮ পৃষ্ঠাজুড়ে মুদ্রিত হয়েছে চিন্তার হাজারো মণি-মুক্তা। এটি চিন্তাসূত্র মূলক বই, যা প্রকাশ না হলে বাঙালির চিন্তার এক সমৃদ্ধ অধ্যায় অজানা থেকে যেত।

গবেষক ও ভাষাবিদ আহমদ শরীফের ডায়েরি পড়ছিলাম। যত আগাচ্ছি তত পরিচিত হচ্ছি চিন্তাগোলার সঙ্গে। যেন-ধানের গোলা। কতশত বিন্যাসে সোনালি ধান শুয়ে থাকে গোলার ভেতর। তার ডায়রির ২০৮ পৃষ্ঠাজুড়ে মুদ্রিত হয়েছে চিন্তার হাজারো মণি-মুক্তা। এটি চিন্তাসূত্র মূলক বই, যা প্রকাশ না হলে বাঙালির চিন্তার এক সমৃদ্ধ অধ্যায় অজানা থেকে যেত।

দেখা যায়, আহমদ শরীফ দারুণ সাবলিল অনুভবে ও প্রকাশে। তার নেই কোনো শঙ্কা, পুরস্কার বা তিরস্কারে অনুরাগ বা বিরাগ। যা ভেবেছেন অবলীলায় প্রকাশ করেছেন। বলা যায়, আহমদ শরীফ বাঙালির চিন্তাধারায় এক অনন্য সারসত্তা। চিন্তাচর্চা ও প্রকাশে যার জুড়ে মেলা ভার। তিনি ইনিয়ে বিনিয়ে ভাবপ্রকাশ করেন না, তার প্রকাশ সহজ-সরল।

আহমদ শরীফের ভাবনা বুঝতে পাঠককে বেগ পেতে হয় না। তার চিন্তা হাজির হয় অন্যকে বুদ্ধি শূন্য না করে বরং সজীব ও সক্রিয় রেখে, যা অতি উঁচুমানের এক যোগাযোগ কলা। একই সঙ্গে চিন্তাচর্চায় এক শক্তিশালী নৈতিক অবস্থানও বটে।

জ্ঞান ও প্রজ্ঞা মানুষকে কতোটা স্বয়ম্ভূ করে আহমদ শরীফের ডায়রি ভাব-বুদ্বুদ না পাড়লে তা বোঝা দুষ্কর। তিনি (৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৮৭) লিখছেন- 'যা ভাবি, যা বুঝি এবং যা জানি তা-ই লিখি-ডরাই না।' তিনি এমনই গ্রহণোন্মুখ, চিন্তা-চেতনা ও প্রগতির বাতিঘর। তার ডায়রি ভাব-বুদ্বুদ ভাবনার এক উর্বর খেত। অতিক্ষুদ্র থেকে উচ্চমার্গীয় নানামাত্রিক চিন্তা ধরা পড়েছে।

ভাব-বুদ্বুদ রচনার শুরু ২৫ অক্টোবর ১৯৮৪-তে। ভাব-বুদ্বুদের ভাবনা। এক বৈচিত্র্যময় ও যুক্তিশীল মননের সাধক তিনি। জীবন, জগৎ ও মানুষ তার ভাবনার কেন্দ্রীয় বিষয়। আহমদ শরীফ নিষ্ক্রিয় ভাবনার কর্ষক নন, যা ভেবেছেন তার দ্যুতি ছড়িয়েছেন সমান গতিতে। শ্রেণিকক্ষে, ব্যক্তি পরিসরে ও গুড়িসহ অন্যান্য আড্ডায় তিনি ছিলেন নিয়ত সবাক। যখন কথা বলতেন তখন অন্যদের কথা ছাপিয়ে যেত। ১৬ অক্টোবর ১৯৯৫-এ লিখছেন, 'বারো বছর হলো অবসর নিয়েছি। কিন্তু আড্ডা এখনও চলে। আড্ডায় এ জরা-জড়তা-জীর্ণতাদুষ্ট শরীর নিয়েও আরাম ও আনন্দ উপভোগ করি।'

আহমদ শরীফের বাচন উচ্চতা ছিল তার সমান। তিনি ছিলেন কর্মপটু। কাজ করেছেন, গবেষণা করেছেন, জ্ঞান চর্চায় নিবিষ্ট ছিলেন। তার হৃদয়ের ওম সঙ্গপ্রিয়রা অনুভব করেছেন পূর্ণতা দিয়ে। ২১ ডিসেম্বর ১৯৮৭ লিখেছেন- 'প্রীতিহীন হৃদয় ও নির্লক্ষ্য কর্ম- দু-ই বন্ধ্যা।' ১৯ জানুয়ারি ১৯৯৪-এ আরও লিখছেন, 'কাজ শুরু করার জন্যে মন তৈরি হওয়ার নামই আবেগ। আর কথা, কাজ, নির্মাণ, সুষ্ঠু, সুন্দর, সুষম ও পরিমিতি করার দক্ষতার নৈপুণ্যের নাম হচ্ছে প্রতিভা।'

অনেকক্ষেত্রে প্রচলিত সংজ্ঞার বসতভিটাগুলো তিনি গুড়িয়ে দিয়েছেন। নতুন ভাবনায় উদ্বুদ্ধ করেছেন সারথিদের। সংস্কৃতির গণ-সংজ্ঞায় তা ফুটে উঠেছে। তিনি লিখছেন...সুখ ও স্বাধিকারে স্বাধীনতা ও উপভোগের সুযোগ রাখাই আদর্শ সংস্কৃতির পরিমাপক ও পরিচায়ক।

সংস্কৃতিকে তিনি তলিয়ে দেখেছেন গভীর থেকে। এ দেখার মধ্যে রয়েছে বিশেষ মূল্যযোগ। তিনি ৮ নভেম্বর ১৯৯৮-এ লিখছেন- 'সুতরাং সংস্কৃতি হচ্ছে পরিশোধনের চর্চা ও অভিব্যক্তি। স্বভাবে চরিত্রে সংযম-সহিষ্ণুতা-সুরুচি ও সৌন্দর্য বৃদ্ধিরই প্রসূন।'

পশ্চিমারা যেমন মনে করেন আমার যা তাই আমাদের সংস্কৃতি এবং যা ছিল তাই সভ্যতা। ঠিক এমন শুষ্ক সংজ্ঞার মধ্যে তিনি সংস্কৃতির ধারণাকে সংকুচিত করেননি, একে যুক্ত করেছেন সংস্কারের সঙ্গে, মনের পরিশীলনের সঙ্গে।

সুখ-দুঃখ বিষয়ক ভাবনার নিজস্বতা ধরা পড়েছে এ ডায়েরির বিভিন্ন অংশে। ১২ এপ্রিল ১৯৮৭ তিনি লিখছেন, 'সুখ কেউ কাউকে দিতে পারে না, সুখ পেতে জানতে হয়। সুখ বাইরে নেই চিত্তলোকে সৃষ্টি করতে হয়।' কত সাবলিল উচ্চারণ। সুখ সন্ধানে অন্তর্মুখী মাত্রার ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছেন তিনি। ব্যক্তির নিজস্ব অনুভব কাঠামোর ওপর আলো ফেলেছেন। এটিই সুখ সন্ধানে বাঙলার চিরায়ত চিন্তার ধারা, যা আছে বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডে, তাহা আছে দেহ ভাণ্ডে।

তিনি ঋষি, তিনি দার্শনিক তার ছাপ রয়েছে ডায়েরির প্রতিটি ছত্রে। তিনি জ্ঞান, প্রজ্ঞা আর সাহসের স্মারক। যার বিশ্বাস ছিল যুক্তি ও মুক্তিতে। যুক্তিই মানবমুক্তির মূলশক্তি এ ছিল তার প্রতীতী। আহমদ শরীফের কাছে যুক্তি জগতের শ্রেষ্ঠ বিন্যাস। ১৮ সেপ্টেম্বর ১৯৮৯ লিখছেন, 'যা মুক্তি দেয়, তাই বিদ্যা। বিদ্যা তাই, যা মুক্তি আনে।' তিনি ১ অক্টোবর ১৯৮৯-এ লিখছেন, 'প্রেজুডিস বর্জন করে ভাব-চিন্তা-কর্ম-আচরণে ও আচারে-বিচারে জ্ঞান ও যুক্তির প্রয়োগই হচ্ছে আধুনিকতা। আধুনিক হওয়া প্রচেষ্টা সর্বজনীন হয়নি। অনেকে থাকেন আচারে নিষ্ঠ। হোন অনুগামী উত্তরসূরির।'

'সাধারণ মানুষই প্রজন্মক্রমে চিন্তা-চেতনায়, নীতি-রীতি-নিয়মে গড্ডল স্বভাবেরই হয়। মনীষীরা নতুন নতুন ও বহুবিচিত্র চিন্তায় কর্মে আবিষ্কারে উদ্ভাবনে মানুষের মানস ও ব্যবহারিক জীবন ঋদ্ধ করেছে-বিজ্ঞানে, দর্শনে সাহিত্যে (১৩ নভেম্বর ১৯৯০)'

মানুষে মানুষে বিভক্তি শরীফকে গভীরভাবে ভাবিয়েছে। এ বিভক্তির হেতুসমূহ চিহ্নিত করেছেন গভীর অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে। ১৫ মার্চ ১৯৯১-এ লিখছেন, 'মানুষে মানুষে রয়েছে কাঁটাতারের বেড়া, সে-বেড়া শাস্ত্রের, স্থানের, ভাষার, মতের, পথের, বিত্তের, বিদ্যার, বিশ্বাসের, সংস্কারের সাংস্কৃতিক ও আচারের পার্থক্যজাত ঘৃণা, অবজ্ঞা স্বাতন্ত্র্যচেতনা প্রসূত। তাই মানুষ মিলতে পারছে না কোথাও।' মূলত শাস্ত্রের শাসনের নেতির প্রতি তীর্যক আঙ্গুলি তার। তিনি লিখেছেন, 'শাস্ত্র ছাড় তাহলেই বিশ্বেমানবপ্রীতি বাড়বে ঘরে ও বাইরে।'

শিরদাঁড়া ভীষণ শক্ত তার। তিনি মোটেও আপসকামী, সমঝোতা বা নগদজীবী নন। আত্মমর্যাদা নিয়ে তালগাছের মতো মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছেন তার সময়ে ভিন্ন উচ্চতা নিয়ে। তিনি বিশ্বাস করতেন আত্মমর্যাদাবোধই চরিত্র অটল-অটুট রক্ষার প্রধান খুঁটি।

মানুষের চরিত্রের বৈপরীত্য বা দ্বান্দ্বিকতা ফুটে উঠেছে ডায়রির বিভিন্ন অংশে। মানুষের চরিত্রের কালোদিকগুলো উজ্জ্বল আলো দিয়ে ফুটিয়ে তুলেছেন। অন্যকে বশীকরণ প্রচেষ্টার ঘৃণ্য দিক নিয়ে প্রবাদতুল্য একটি লাইন লিখেছেন (৩ জুন ১৯৯৩) 'মানুষ নিজের জন্য স্বাধীনতা চায় সর্বক্ষণ, কিন্তু অপরকে করতে চান অধীন।'

স্পষ্ট বোঝাপড়া ও সংযমময় জীবনযাপন করে গেছেন আহমদ শরীফ। পূর্ণ ও পরিতৃপ্ত এক জীবনের আধার যা ধরা পড়ে ২১ মার্চ ১৯৯৩-তে এক লেখায়, 'আমি যা পাইনি তার জন্যে ক্ষুব্ধ হইনি। পরাজয়কে সহজে মেনে নিয়েছি। হার-জিৎ জীবনে আছে জেনে ও বুঝে। সাফল্য-সুখেও স্মরণ করি না সাগ্রহে, কারণ সবার জীবনেই সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা, সাফল্য-ব্যর্থতা আছেই। এটা নিয়ে গৌরব-গর্ব-আনন্দ-আস্ফালন-প্রচার করা রুচিমানের ও বুদ্ধিমানের কাজ নয়।'

তিনি আরও লিখছেন, 'জীবন হচ্ছে আনন্দ-যন্ত্রণার সমষ্টি। জীবনাভূতিতে তবু আনন্দের, আশার, আশ্বাসের ও সুখের মাত্রা বেশি।'  ধর্মীয় বিশ্বাস, আচার ও চর্চার বিভিন্ন দিক নিয়ে প্রশ্নবোধক অসংখ্য দার্শনিক ভাবনা সম্মেলন ঘটেছে ডায়রিতে।

পার্থক্যকরণে পারঙ্গম আহমদ শরীফ। মনুষ্যত্বের স্বরূপ সন্ধানে তার কেটেছে বড়সময়। মধ্যযুগের সাহিত্য পাঠ আর পুঁথির আধেয় অন্বেষা তার বোধকে করেছে শাণিত। আদর্শ-মতাদর্শ, শাস্ত্র-শাসন বিশ্বাস-যুক্তিসহ বহুপ্রপঞ্চের বিভক্তিতে হাত পাকিয়েছেন তিনি। যেমন: প্রাণিত্ব ও মনুষ্যত্বের পার্থক্যকরণে- প্রাণী হিসেবে মানুষ কামে, ক্রোধে, লোভে, মোহে, মদে ও মাৎসর্যে চালিত হয়, আর মানুষরূপে সে কৃপায়, করুণায়, দয়ায় দাক্ষিণ্যে, সংযমে, সহিষ্ণুতায়, সৌজন্যে, সহানুভূতিতে। সহযোগিতায়, স্নেহ, প্রেমে, মমতায়, হৃদয়বানতায়, বিবেকানুগত্যে ও ন্যায্যতায়, ক্ষমায়, ধৈর্যে, অধ্যবসায়ে, আদর্শনিষ্ঠায় অসামান্য হয়ে ওঠে।

এটি কেবল ডায়রি নয় এটি মূলত আহমদ শরীফের মানসচরিত। ২৪ অক্টোবর ১৯৯৩ সালে নিজ দর্শনের রশ্মি ছড়িয়েছেন এভাবে, 'জীবনে দায়বদ্ধ, কর্তব্যনিষ্ঠ, ন্যায়বান, বিবেক-বুদ্ধি-সততা চালিত থাকতে চেয়েছি। জ্ঞাতসারে স্বজন বলে খাতির, বিদ্বেষ বশে কারো ক্ষতি করিনি, বঞ্চিত করিনি কাউকে তার যথাপ্রাপ্য থেকে। তবু যারা খাতির ও পক্ষপাত প্রত্যাশা করেছিল, তারা ক্ষুব্ধ, ক্রুদ্ধ ও বিরক্ত ও বিরূপ হয়েছে। যারা ভিন্ন দলের ছিল, তারা বরং আমার কাছ থেকে কোনো অবিচারের আশঙ্কা করত না। তারা ছিল মনে মনে আমার কাজে তুষ্ট, তৃপ্ত ও হৃষ্ট।'

মানুষের জন্য কল্যাণবোধ ছিল তার দার্শনিক চিন্তার মূলভিত্তি। মানুষের মুক্তির জন্য যুক্তির দিগন্তপ্রসারী সুর তুলছেন তিনি। চারদিকে হত্যার উৎসবে ক্ষুদ্ধ আহমদ শরীফ। মানুষ বা ইঁদুর যেকোনো প্রাণী হত্যা তাকে পীড়িত করেছে। যেকোনো প্রাণের প্রতি অকূল দরদ তার ভেতর বাস করা এক শিশু মনের সন্ধান দেয়। ৭ মার্চ ১৯৯৪-এ লিখছেন, 'আমাদের ঘরে ঘরে প্রতিনিয়ত চলছে হত্যাকাণ্ড। আমরা মশা মারি, মারি মাছি, পিঁপড়ে মারি, ছারপোকা মারি আর মারি তেলাপোকা-ক্বচিৎ ইঁদুরও। হত্যা অরণ্যের মাঝে/ হত্যা লোকালয়ে/হত্যা বিহঙ্গেও নীড়ে/কীটের গহ্বরে/অগাধ সাগর জলে/ নির্মল আকাশে/হত্যা জীবিকার তরে/হত্যা খেলাচ্ছলে/হত্যা অকারণে। হত্যা অনিচ্ছার ফলে। হত্যা এড়ানোর যুগান্তর আসন্ন হত্যা কমানোর প্রয়াস আমাদের মানবিক দায়িত্ব।'

রাজনৈতিক বিশ্বাসে তিনি ছিলেন মার্কসবাদী আর ধর্মীয় বিশ্বাসে নাস্তিক। ইহজাগতিকতা ছাড়া কোনো ভাবনা ছিল না। প্রসঙ্গত  লিখছেন (৬ আগস্ট ১৯৯৩) 'আমরা ঐহিক জীবনবাদী। অন্যকথায় মর্ত্য জীবনবাদী। এর পূর্বের বা পরের কোনো অস্তিত্বে আমাদের আস্থা নেই।' মূলত আহমদ শরীফ মানবতাবাদী দার্শনিক ও চিন্তক। মানুষের মুক্তির প্রশ্নে তার অন্তরে কোনো বিভক্তি নেই। তার মনোজগতের বাসিন্দা মূলত মানুষ। পরিবার, সংস্কৃতি রাজনীতি, মানবতা, রেনেসাঁস, স্বার্থ, স্মৃতিকথা, মুক্তিযুদ্ধ, ভোগ, পুঁজিবাদ, সাহিত্য ও ধর্মীয় গোড়ামীসহ বহু বর্গীকরণের সন্ধান মেলে আহমদ শরীফের ডায়রিতে।

বিভিন্ন ব্যক্তির মূল্যায়ন উঠে এসেছে ডায়েরির বিভিন্ন অংশে। এদের মধ্যে রয়েছেন- রামমোহন রায়, মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়,  রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, তারাশঙ্কর, নীরদচন্দ্র চৌধুরী, মোহাম্মদ নাসিরউদ্দিন, আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ, বঙ্কিমচন্দ্র, নজরুল ইসলাম, অন্নদাশঙ্কর রায়, মুনীর চৌধুরী, অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক, ড. নীলিমা ইব্রাহিম, আনিসুজ্জামান, জাহানারা ইমাম, শওকত ওসমান, সুফিয়া কামাল, শেখ মুজিবুর রহমান, জিয়াউর রহমান প্রমুখ।

অধিকজনের প্রতি নেমেছে সমালোচনার খড়গহস্ত। সমালোচনার এ ভাষা জন্ম দিয়েছে নতুন ধারার। কেউ কেউ পেয়েছেন ভিন্ন উচ্চতার স্বীকৃতি। এই বিষয়ে লিখছেন, 'আমি দুটো বিষয়ে যোগ্য। এক, আড্ডাবাজিতে; দুই, দুষ্ট ও অপছন্দ লোকদের নিঃসংকোচে নিন্দাবাক্য বা নিন্দাজ্ঞাপক বিশেষণ প্রয়োগে। আমি কথায় কথায় চালবাজ, হারামজাদা উচ্চারণে দক্ষ। এছাড়া আর কোনো বিষয়ে আমার জ্ঞান, অভিজ্ঞতা, প্রজ্ঞা, দক্ষতা, যোগ্যতা আছে বলে জানি না।'

এমনি পরিষ্কার চিন্তা দুর্লভ। তার জন্য বলা যায় আহমদ শরীফ মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের এক সফল কর্ষক। তিনি মধ্যযুগের সাহিত্যের সুধা পান করেছেন, ঋদ্ধ হয়েছেন। সর্বজনীন মানবতাবোধের ছাপ পড়েছে তার মনোজগতে। মধ্যযুগের কবি বড়ু চণ্ডীদাসের উক্তি, 'শুনহে মানুষ ভাই সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই। তার লেখায় তার অনুরণন পাওয়া যায় এমন, 'মানুষ মাত্রই প্রথম ও শেষ পরিচয় হোক মানুষ (১৫ মে ১৯৯৬)।' আবার বলেন,  'সংযম। সহিষ্ণুতা, সৌজন্য, যুক্তি, ন্যায্যতা ও বিবেকানুগত্যই হচ্ছে মনুষ্যত্ব।'

সব মিলিয়ে বইটি পড়া জরুরি। অনেক চিন্তা সময়ের সঙ্গে প্রাসঙ্গিক । শত বর্ষের ফেরারীর প্রতি রইল আন্তরিক শ্রদ্ধা।

লেখক: যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক

Comments

The Daily Star  | English

The invisible ones

Of the over 7 crore people employed in Bangladesh, 85 percent (nearly 6 crore) are vulnerable as they work in the informal sector, which lacks basic social and legal protection, and employment benefits.

8h ago