বিশ্ব বই দিবস

পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলবেন যেভাবে 

বই পড়া একটি ভালো অভ্যাস এবং এর অনেক উপকারিতা আছে। বিশেষ করে নিয়মিত পড়ার অভ্যাস মানুষের চিন্তার গভীরতা বাড়ায় এবং বিস্তৃত করে কল্পনার জগৎ। আর যারা বই পড়তে ভালোবাসেন বছরে তাদের বেশিরভাগের একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক বই পড়ার লক্ষ্য থাকে। যদিও তা নির্ভর করে সময়ের ওপর।  
ছবি শেখ এনামুল হক/ স্টার

বই পড়া একটি ভালো অভ্যাস এবং এর অনেক উপকারিতা আছে। বিশেষ করে নিয়মিত পড়ার অভ্যাস মানুষের চিন্তার গভীরতা বাড়ায় এবং বিস্তৃত করে কল্পনার জগৎ। আর যারা বই পড়তে ভালোবাসেন বছরে তাদের বেশিরভাগের একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক বই পড়ার লক্ষ্য থাকে। যদিও তা নির্ভর করে সময়ের ওপর।  

তবে, একজন পাঠকের ক্ষেত্র বা আগ্রহ যাই হোক না কেন, তার একটি অভ্যাস করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। কেউ যদি বই পড়াকে একটি নিয়মিত অভ্যাসে পরিণত করতে চায়, তার জন্য কিছু ব্যবহারিক উপায় আছে।

যেমন- প্রথমেই দরকার ইচ্ছে থাকা। তারপর  নির্দিষ্ট একটি লক্ষ্য ঠিক করা। এরপর বই পড়াকে মজাদার এবং উপভোগ্য করে তুলতে হবে। আর এগুলো করতে পারলেই পড়ার অভ্যাস যে কারো জীবনযাপনকে প্রভাবিত করবে।

সে প্রসঙ্গে এখানে কিছু পরামর্শ তুলে ধরা হলো।

লক্ষ্য নির্ধারণ করুন

পড়ার অভ্যাস তৈরি এবং তা জীবনযাপনের অংশ করে তুলতে একটি লক্ষ্য নির্ধারণ করা গুরুত্বপূর্ণ। এই লক্ষ্যটি হতে হবে স্পষ্ট এবং অবশ্যই তার একটি উদ্দেশ্য থাকবে। পড়ার নির্দিষ্ট লক্ষ্য থাকলে তা জীবনের নানা ক্ষেত্রে জানার পরিধি বাড়াতে সহায়তা করতে পারে। যেমন- রাজনীতি, অর্থনীতি, আধ্যাত্মিক জগত, শিক্ষা সংস্কৃতি, কর্মজীবন, সম্পর্ক এমন আরও অনেক কিছু। যখন কারো পড়ার লক্ষ্য আগে থেকেই নির্ধারিত থাকে তখন সে স্পষ্টভাবে তার উদ্দেশ্য খুঁজে পাবে। আর তখনই পড়ার প্রতি আগ্রহ জন্মাবে, অনুপ্রেরণা বাড়বে পাঠের জগতে এগিয়ে যেতে।

কারো কারো জন্য মাসে ২টি করে বছরে ২৪টি বই পড়ার লক্ষ্য হতে পারে। আবার কারো লক্ষ্য হতে পারে ১২টি। তবে, সংখ্যা যাই হোক না কেন একবার পড়ার লক্ষ্য স্থির হলে তারপর সেটিকে আরও ছোট লক্ষ্যে ভাগ করতে হবে।

এখানে একটি উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। প্রতি মাসে যদি অন্তত একটি বই পড়া যায় তাহলে বছরে ১২টি বইয়ের বড় লক্ষ্য অর্জন করা যায়। এটিকে বাধ্যতামূলক ভাবা যাবে না। তাহলে বিষয়টি বিরক্তিকর হতে পারে। আসল কথা হলো পুরো প্রক্রিয়া উপভোগ্য হতে হবে।

বইয়ের তালিকা 

পড়া নিয়ে পুরো বছরের লক্ষ্য নির্ধারণ হয়ে গেলে, এটির ব্যাকআপের জন্য একটি তালিকা প্রয়োজন। আপনি যে বই পড়তে চান তার নাম তালিকায় লিখুন। বন্ধু এবং কিংবা অন্যদের পরামর্শ নিতে পারেন। এজন্য একটি জার্নাল, নোটপ্যাড বা এক্সেল স্প্রেডশিট রাখা গুরুত্বপূর্ণ। যেখানে প্রতি মাসে বা এমনকি এক বছরের জন্য পড়তে চান এমন বইগুলোর তালিকা তৈরি করুন।

তবে, তালিকায় অবশ্যই নিজের পছন্দকে গুরুত্ব দিতে হবে। যেমন- আপনার যদি মনে হয় বিপণন/বিক্রয়ের বই পড়া ক্যারিয়ারের জন্য উপকারী হবে। তাহলে কিছু দুর্দান্ত বিপণন বইয়ের তালিকা করুন।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো- একটি পড়ার তালিকা যে কাউকে সংগঠিত থাকতেও সহায়তা করবে। সেই তালিকার সঙ্গে কিছু নোট সংযুক্ত করতে পারেন। যা আপনাকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে। যার মধ্যে আছে বইটি শুরু এবং সমাপ্তির তারিখ, কী নোট বা পাঠ। প্রতিটি বই শেষে সেখানে নোট লিখে রাখুন। মনে রাখবেন, এই বইগুলো পড়ার অর্থ এই নয় যে পরে সেগুলো বাতিল হয়ে যাবে। বরং নোট থাকলে আপনি কয়েক মাস পরে যখন নোটগুলো পড়বেন সেগুলো আপনাকে ওই বইটি আবার পড়তে উৎসাহ যোগাবে। এমন হতে পারে ছোট ছোট নোটগুলো আপনার জন্য মোটিভেশন হিসেবে কাজ করতে পারে।

দিনে অন্তত ১০-২০ পৃষ্ঠা পড়ুন

একটি পড়ার প্যাটার্ন তৈরি করতে প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক পৃষ্ঠা পড়ার লক্ষ্য ঠিক করতে হবে। প্রতিদিন কমপক্ষে ১০-২০ পৃষ্ঠা পড়তে পারেন। বিশেষ করে যদি আপনার ব্যস্ত সময়সূচী থাকে। তাহলে এই প্রক্রিয়াটি আপনাকে পড়ায় মনোনিবেশ করতে সহায়তা করবে। কারণ, আপনি প্রতিদিন নির্দিষ্ট সংখ্যক পৃষ্ঠা পড়ার লক্ষ্য অর্জনের সচেষ্ট থাকবেন। আর এই অভ্যাসটি ধীরে ধীরে আপনাকে আরও পড়ার প্রতি আকৃষ্ট করবে। একসময় দেখা যাবে আপনার পড়ার পরিমাণ নির্দিষ্ট পৃষ্ঠাতে সীমাবদ্ধ থাকবে না। শুধু তাই নয় বই পড়া আপনার প্রতিদিনের জীবনের একটি অংশ হয়ে উঠবে।

তবে, হ্যাঁ যখন পড়বেন খুব সক্রিয়ভাবে পড়বেন। তাড়াহুড়ো করবেন না, বরং পড়ার জন্য সময় বের করে পড়ুন। তাহলে পড়ার প্রতি ভালোবাসা তৈরি হবে, নতুন কিছু জানার আগ্রহ তৈরি হবে।

পড়ার মাধ্যম ও পরিবেশ

পড়ার জন্য মাধ্যম সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। যেমন- অনেকে হার্ড কপি পড়তে পছন্দ করেন। তাদের জন্য পড়ায় মনোনিবেশ বাড়াতে আরামদায়ক টেবিল এবং চেয়ায়ের সঙ্গে দারুণ পরিবেশ বজায় রাখার বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে। তাহলে ধীরে ধীরে সেই স্থানটিতে অভ্যস্ত হয়ে উঠবেন এবং একসময় সেই জায়গাটি হয়ে উঠবে আপনার প্রিয় স্থান।

বর্তমানে বেশিরভাগ মানুষ মোবাইল অ্যাপস, ট্যাবলেট, নিউজ এগ্রিগেটর, ইবুক রিডার এবং অন্যান্য অনলাইন গেজেটে অভ্যস্ত। যেহেতু আমরা ডিজিটাল বিশ্বে বাস করছি তাই বেশিরভাগ মানুষ এগুলো পছন্দ করেন। তবে, আপনার জন্য কোন মাধ্যম সবচেয়ে ভাল হবে তা আপনাকেই নির্ধারণ করতে হবে।

সময় এবং দিন নির্ধারণ

সপ্তাহ/মাসের জন্য নির্ধারিত বই এবং আপনার বুকমার্ক করা অন্য কোনো নিবন্ধ পড়ার জন্য প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় আলাদা করে রাখুন। টিভি বা পড়ার সময়কে বাধা দিতে পারে এমন জিনিসগুলো আগেই বন্ধ রাখতে হবে। না হলে এগুলো আপনাকে বিভ্রান্ত করতে পারে। নিয়মিত পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে শুরুতে প্রতিদিন অন্তত ৩০-৪০ মিনিট পড়তে পারেন। এটি দুর্দান্ত শুরু হতে পারে, যা আপনার নিয়মিত বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে সহায়তা করবে।

আবার প্রতিদিনের পাশাপাশি সপ্তাহের একটি দিনকেও বেছে নিতে পারেন। বিশেষ করে ছুটির দিন। সেদিন একটু বেশি সময় বই পড়ার জন্য বরাদ্দ রাখুন। পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে  বিষয়টি ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

Comments

The Daily Star  | English

What is seat-sharing and why as a voter you should know about it

In the lead-up to the national election on January 7, 2024, parties that have committed to participating in the polls have put forth their nominees

1h ago