সুবোধ: নগরের দেয়ালে এক চরিত্রের উত্থান [ভিডিও]
গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে ঢাকার মানুষ পরিচিত হয় নতুন এক চরিত্রের সাথে, তার নাম সুবোধ। তাকে দেখা যায় শহরের বিভিন্ন দেয়ালে দেয়ালে খাঁচায় বন্দি এক সূর্য হাতে অথবা কোনো কারাগারে।
এই দেয়ালচিত্রগুলোতে সুবোধের ছবির পাশে লেখা: ‘সুবোধ তুই পালিয়ে যা, এখন সময় পক্ষে না।’ অন্য কোনোটায় লেখা ‘সুবোধ তুই পালিয়ে যা, মানুষ ভালোবাসতে ভুলে গেছে।’ অথবা ‘সুবোধ তুই পালিয়ে যা, তোর ভাগ্যে কিছু নেই’, আবার এক দেয়ালে লেখা ‘সুবোধ এখন জেলে, পাপবোধ নিশ্চিন্তে বাস করছে মানুষের মনে’। নাগরিকদের কৌতূহল বাড়তে থাকে। নগরের দেয়াল থেকে ফেসবুক-টুইটারের ওয়ালে উঠে আসতে থাকে দিকভ্রান্ত ও দিশেহারা সুবোধকে। তাকে নিয়ে বাধা হতে থাকে গান, লেখা হতে থাকে কবিতা। দেশ-দেশের বাইরের বিভিন্ন পত্রিকায় আলোচনা হতে থাকে সুবোধের গ্রাফিটি নিয়ে। টিভি চ্যানেলগুলোও খুঁজতে থাকে ঢাকার আলোচিত এই গ্রাফিটিগুলোর মর্মার্থ। আড়ালে থাকা শিল্পীকে বলা হতে থাকে ‘বাঙ্কসি অফ বাংলাদেশ’। বাঙ্কসি নিজেকে আড়াল করে রাখা ইংল্যান্ডের একজন বিখ্যাত গ্রাফিটি আর্টিস্ট, যিনি ব্যঙ্গাত্মক রস ও ‘ডার্ক হিউমার’কে পুঁজি করে ৯০ এর দশক থেকে একের পর এক দেয়ালচিত্র উপহার দিতে থাকেন। এই শিল্প তৈরিতে তিনি ব্যবহার করতেন স্টেনসিল পদ্ধতি, ঢাকার সুবোধের গ্রাফিটিগুলোও একই পদ্ধতিতে তৈরি।
আবারো সুবোধ প্রসঙ্গে ফিরে আসা যাক, কি বার্তা দিতে চায় এই গ্রাফিটির রহস্যময় শিল্পী?
এই সিরিজ দেখলে ধারণা করা যায় সুবোধ প্রতিনিধিত্ব করে সমাজের নানাবিধ চাপে পিষ্ট আর ন্যায্য অধিকার পাওয়া থেকে বঞ্চিত সাধারণ মানুষদের। তার হাতের খাঁচাবন্দী সূর্য দেখে মনে হয় মানবতা, সম্প্রীতি ও ভালোবাসার বন্দিদশার কথা। সুবোধকে পালিয়ে যেতে বলা হল শিল্পী হতাশার বহিঃপ্রকাশ। এই হতাশা না পাওয়ার, এই হতাশা শোষিত হওয়ার। তবে শিল্পী হয়ত সম্পূর্ণভাবে নৈরাশ্যবাদী নন, কারণ প্রতিটি গ্রাফিটির পাশেই দেখা যায় ‘হবে কি?’ লেখাটি যা শিল্পীর সাক্ষর এবং একই সাথে তা আশাবাদের কথাও বলে।
আমরা চাই সুবোধরা পালিয়ে না যাক, তারা আমাদের মাঝে থেকেই কাজ করে যাক সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য। আমরা আরও চাই বাংলাদেশে গ্রাফিটি শিল্পটি মানুষের মনে ও নগরের দেয়ালে দেয়ালে স্থান করে নিক নিত্যনতুন বার্তা আর সৃজনশীলতা নিয়ে।
Comments